আরিস্টিড ব্রিয়ান (১৮৬৬-১৯৩২) — ফরাসি রাষ্ট্রনীতিবিদ এবং রাজনীতিবিদ, যিনি বিশ শতকের শুরুতে ফ্রান্সের রাজনীতি এবং আন্তর্জাতিক সম্পর্কের ক্ষেত্রে তাঁর অবদানের জন্য পরিচিত। তিনি বিভিন্ন সময় ফ্রান্সের প্রধানমন্ত্রী পদে অধিষ্ঠিত ছিলেন, পাশাপাশি জাতিসংঘের প্রধান স্থপতিদের একজন ছিলেন।
আরিস্টিড ব্রিয়ান ১৮৬৬ সালের ২৮ মার্চ নান্তে জন্মগ্রহণ করেন। ছোটবেলা থেকেই তিনি রাজনীতি এবং সামাজিক বিষয়ের প্রতি আগ্রহী ছিলেন। মাধ্যমিক বিদ্যালয় শেষ করার পর তিনি আইন এবং অর্থনীতি অধ্যয়ন করেন, যা সরকারী পরিষেবায় ভবিষ্যত ক্যারিয়ারের জন্য তাকে প্রস্তুত করে।
ব্রিয়ান ১৯০২ সালে সমাজতান্ত্রিক দলের সদস্য হিসাবে সংসদে নির্বাচিত হওয়ার মাধ্যমে তাঁর রাজনৈতিক ক্যারিয়ার শুরু করেন। তিনি দ্রুত একজন প্রতিভাবান বক্তা এবং সক্রিয় সংস্কারক হিসাবে নিজের অবস্থান তৈরি করেন। ১৯০৯ সালে তিনি শিক্ষা মন্ত্রী হন, যেখানে তিনি ফ্রান্সের শিক্ষাব্যবস্থায় কিছু উল্লেখযোগ্য সংস্কার বাস্তবায়ন করেন।
১৯১৫ সাল থেকে ব্রিয়ান কয়েকবার প্রধানমন্ত্রী পদে অধিষ্ঠিত হন, বিশেষ করে প্রথম বিশ্বযুদ্ধের সময়। যুদ্ধের সময় স্থিতিশীলতা এবং অর্থনৈতিক বৃদ্ধির জন্য তার প্রচেষ্টা উচ্চ প্রশংসিত হয়। তিনি অর্থনীতি পুনরুদ্ধার এবং আন্তর্জাতিক সম্পর্ক মজবুত করার কাজে সক্রিয়ভাবে কাজ করেন।
প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পর ব্রিয়ান জাতিসংঘের লীগের প্রতিষ্ঠার একজন সমর্থক হয়ে ওঠেন। তিনি মনে করতেন যে আন্তর্জাতিক সহযোগিতা ভবিষ্যতের সংঘর্ষ এড়াতে অপরিহার্য। ১৯২৬ সালে তিনি ইউরোপে শান্তি ও স্থিতিশীলতা উন্নতকরণের জন্য তার প্রচেষ্টার জন্য নোবেল শান্তি পুরস্কার অর্জন করেন।
জাতিসংঘের লীগের কাজে ব্রিয়ান নিরস্ত্রীকরণ এবং যুদ্ধ প্রভাবিত দেশগুলোর জীবনযাত্রার মান উন্নয়নের জন্য কাজ করেছিলেন। তিনি বিভিন্ন দেশের মধ্যে পারস্পরিক নিরাপত্তার চুক্তি নিয়ে সক্রিয়ভাবে কাজ করতেন।
তাঁর রাজনৈতিক ক্যারিয়ারের সময় ব্রিয়ান অর্থনৈতিক বিষয়গুলির প্রতি মনোযোগ দিয়েছিলেন। তিনি শিল্প ও কৃষির উন্নয়ন এবং নাগরিকদের জীবনযাত্রার মান উন্নয়নে দিকনির্দেশক সামাজিক প্রোগ্রামগুলির সমর্থক ছিলেন। তাঁর অর্থনৈতিক সংস্কারগুলো বেকারত্বের হার কমাতে এবং দেশের উৎপাদনশীলতা বাড়াতে সাহায্য করেছিল।
১৯২০-র দশকের শেষের দিকে মহামন্দার সূচনা হওয়ার সাথে সাথে ফ্রান্স গুরুতর অর্থনৈতিক সমস্যার মুখোমুখি হয়। ব্রিয়ান অর্থনীতি স্থিৰতার জন্য প্রোগ্রামগুলি গড়ে তোলার চেষ্টা করেছিলেন, তবে দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি অত্যন্ত অস্থিতিশীল ছিল। বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের মধ্যে মতবিরোধ কার্যকর সিদ্ধান্ত গ্রহণকে কঠিন করে তুলেছিল।
আরিস্টিড ব্রিয়ান ১৯৩০-এর দশকের শুরুতে সক্রিয় রাজনীতি ছেড়ে দেন, কিন্তু দেশের এবং বিশ্বের ঘটনাবলীর উপর নজর রাখতে থাকেন। তিনি তাঁর সময়ের সবচেয়ে প্রভাবশালী রাজনীতিবিদদের একজন হিসেবে একটি legado রেখে যান, একটি শান্তি এবং আন্তর্জাতিক সহযোগিতার সমর্থক।
ব্রিয়ান ১৯৩২ সালের ৭ মার্চ প্যারিসে মারা যান। তাঁর কাজ এবং ধারণাগুলি আজও প্রাসঙ্গিক রয়ে গেছে, নতুন প্রজন্মের রাজনীতিবিদ এবং কূটনীতিকদের শান্তি এবং স্থিতিশীলতার জন্য সংগ্রামে উদ্বুদ্ধ করছে।
আরিস্টিড ব্রিয়ান কেবল একজন অসাধারণ রাজনীতিবিদ ছিলেন না, বরং তিনি আন্তর্জাতিক সহযোগিতার সম্ভাবনায় বিশ্বাসী একজন ব্যক্তি। তাঁর legado শান্তি এবং নিরাপত্তার আদর্শে জীবন্ত থাকে, যা তিনি তাঁর সময় এবং ভবিষ্যৎ প্রজন্মের কাছে পৌঁছে দিতে চেয়েছিলেন।