উইনস্টন লিওনার্ড স্পেন্সার চার্চিল (৩০ নভেম্বর ১৮৭৪ — ২৪ জানুয়ারী ১৯৬৫) — ব্রিটিশ রাষ্ট্রনীতিবিদ, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে ব্রিটেনের প্রধানমন্ত্রী, উদ্ভাবনী বক্তা এবং ইতিহাসবিদ। যুদ্ধের সময় তাঁর নেতৃত্ব এবং রাজনীতি ও ইতিহাসের প্রতি তাঁর দৃষ্টিভঙ্গি তাঁকে ২০ শতকের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিত্বগুলোর একজন করে তুলেছে।
উইনস্টন চার্চিল একজন অভিজাত পরিবারে জন্মগ্রহণ করেছিলেন। তাঁর father, লর্ড র্যান্ডলফ চার্চিল, ছিলেন একজন বিশিষ্ট রাজনীতিবিদ এবং মা, জেনি জেরোম, একজন আমেরিকান। ছোটবেলা থেকেই উইনস্টন ইতিহাস ও সাহিত্যে আগ্রহী ছিলেন, তবে স্কুলে তাঁর শিক্ষাগত সাফল্য সন্তোষজনক ছিল না।
সেনাবাহিনী সান্ধারস্টে শিক্ষাপ্রাপ্তির পর, চার্চিল ব্রিটিশ সেনাবাহিনীতে কাজ করেন। তিনি ভারতে এবং দক্ষিণ আফ্রিকায় বিভিন্ন সামরিক অভিযানে অংশ গ্রহণ করেন। যুদ্ধের অভিজ্ঞতা তাঁকে বই ও নিবন্ধ লেখার জন্য অনুপ্রাণিত করে, যা তাঁর উন্মুক্ত জনসাধারণের ব্যক্তিত্ব হিসেবে উত্তরণে সহায়ক হয়।
১৯০০ সালে চার্চিল কনজারভেটিভ পার্টি থেকে পার্লামেন্টের নিম্ন সদনে নির্বাচিত হন, তবে দ্রুত লিবারেল পার্টিতে চলে আসেন। তিনি বাণিজ্যমন্ত্রীর এবং অভ্যন্তরীণ বিষয়ক মন্ত্রীর মতো বিভিন্ন পদে দায়িত্ব পালন করেন। তবে, তাঁর প্রভাব সবচেয়ে বেশি প্রকাশ পায় প্রথম বিশ্বযুদ্ধের সময়, যখন তিনি প্রথম নৌ পরিবহন লর্ড ছিলেন।
চার্চিল ১৯৪০ সালে প্রধানমন্ত্রী হন, যখন জার্মানি ইউরোপে আক্রমণাত্মক কর্মকাণ্ড শুরু করে। তাঁর বক্তব্য জাতিকে অনুপ্রাণিত করত এবং তিনি ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে প্রতিরোধের প্রতীক হয়ে ওঠেন। তাঁর সবচেয়ে বিখ্যাত বক্তৃতাগুলির মধ্যে একটি ছিল "রক্ত, ঘাম ও অশ্রুর" কোটেশন, যা ব্রিটিশ জনগণের দৃঢ়তার উপর আলোকপাত করেছিল।
উইনস্টন চার্চিল শুধু দেশে কঠিন সময়ে নেতৃত্ব দেননি, বরং ইতিহাস এবং সাহিত্যের সঙ্গেও জড়িত ছিলেন। তাঁর রচনা "দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ" একটি ক্লাসিক কাজ হয়ে উঠেছে, যার জন্য তিনি ১৯৫৩ সালে সাহিত্যে নোবেল পুরস্কার লাভ করেন। চার্চিল জাতিসংঘ প্রতিষ্ঠার জন্যও সক্রিয়ভাবে সংগ্রাম করেছিলেন।
উইনস্টন চার্চিল ক্লিমেন্টাইন হোজিয়ের সাথে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ ছিলেন, এবং তাঁদের পাঁচটি সন্তান ছিল। চার্চিল চিত্রকলায় আগ্রহী ছিলেন এবং অবসর সময়ে বিভিন্ন চিত্রকর্ম রচনা করতেন, যা তাঁর জন্য রিল্যাক্সেশনের একটি উপায় ছিল।
চার্চিল বিশ্ব ইতিহাসে একটি প্রতীকী চরিত্র হিসেবে রয়ে গেছে। তাঁর নেতৃত্ব এবং বক্তৃতার দক্ষতা লক্ষ লক্ষ মানুষের জন্য অনুপ্রেরণা জুগিয়েছে। তাঁর সম্মানে লন্ডনের চার্চিল স্কয়ার এবং সারা বিশ্বে বিভিন্ন স্মৃতিস্তম্ভ নামকরণ করা হয়েছে।
উইনস্টন চার্চিল কেবলমাত্র একজন রাজনৈতিক নেতা নয়, বরং একটি ব্যক্তিত্ব যার দ্বারা ইচ্ছাশক্তি এবং স্থিতিস্থাপকতার প্রতীক বিস্তার পেয়েছে। তাঁর জীবন এবং কর্মগুলি মানুষকে নেতৃত্ব এবং তাদের জনগণের সেবা করার জন্য অনুপ্রাণিত করতে থাকে।