হুয়ান ডোমিনগো পেলন (১৮৯৫–১৯৭৪) — আর্জেন্টিনার একজন রাজনীতিবিদ এবং সামরিক কর্মকর্তা, যিনি তিনবার আর্জেন্টিনার প্রেসিডেন্টের পদে অধিষ্ঠিত হয়েছেন: ১৯৪৬–১৯৫৫ এবং ১৯৭৩–১৯৭৪ সালে। পেলন আর্জেন্টিনার রাজনীতির ইতিহাসের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ ও বিতর্কিত ব্যক্তিত্বের মধ্যে পরিগণিত হন, এবং তাঁর রাজনৈতিক মতাদর্শ, যা পেলোনিজম নামে পরিচিত, দেশের জীবনে গভীর ছাপ ফেলেছে।
হুয়ান পেলন ১৮৯৫ সালের ৮ অক্টোবর আর্জেন্টিনার লোবসে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি একটি দরিদ্র পরিবারে বড় হয়েছিলেন এবং ছোট থেকেই সামরিক বিষয়ে আগ্রহী ছিলেন। ১৯১১ সালে তিনি সামরিক একাডেমিতে ভর্তি হন, যেখানে তিনি একজন অফিসার হিসেবে প্রশিক্ষণ নেন। তাঁর সামরিক ক্যারিয়ার প্রথম বিশ্বযুদ্ধের সময় শুরু হয়, যখন তিনি ইতালিতে সামরিক অ্যাটাশে হিসেবে কাজ করেন।
১৯২০-এর দশকে আর্জেন্টিনায় ফিরে এসে পেলন বিভিন্ন উচ্চ সামরিক ও সরকারি পদে নিযুক্ত হন। ১৯৪৩ সালে তিনি শ্রম মন্ত্রীর পদে নিয়োগ পান, যা তাঁর রাজনৈতিক ক্ষমতার দিকে অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ হয়ে দাঁড়ায়। এই ভূমিকায় তিনি শ্রমিকদের জীবনযাত্রার মান উন্নত করতে এবং কাজের শর্তাবলী উন্নীত করার জন্য সামাজিক সংস্কারের বাস্তবায়ন শুরু করেন।
১৯৪৬ সালে, পেলন আর্জেন্টিনার প্রেসিডেন্ট হিসেবে নির্বাচিত হন, যিনি শ্রমিক শ্রেণী এবং শ্রম সংগঠনগুলোর সমর্থন পান। তাঁর নীতিত্ব প্রধানত অর্থনীতির মূল ক্ষেত্রগুলোর জাতীয়করণ এবং সামাজিক ন্যায় প্রতিষ্ঠায় কেন্দ্রীভূত ছিল।
পেলন শ্রমিকদের জীবনযাত্রার উন্নতির জন্য বিভিন্ন সামাজিক সংস্কার কার্যকর করে। তিনি বিভিন্ন সামাজিক সুরক্ষা কার্যক্রম চালু করেন, এর মধ্যে:
এই ব্যবস্থা তাঁকে শ্রমিক শ্রেণীর মধ্যে সমর্থন অর্জনে সহায়তা করে, যা তাঁর ক্ষমতা শক্তিশালী করতে সক্ষম হয়।
হুয়ান পেলন ১৯৪৫ সালে এভা দুয়ার্তের সাথে বিয়ে করেন, যিনি এভা পেলন নামেও পরিচিত। এভা তাঁর স্বামীর রাজনৈতিক কর্মসূচির একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশীদার ছিলেন এবং সক্রিয়ভাবে তাঁর সংস্কারগুলোকে সমর্থন করেছিলেন। তিনি মহিলাদের অধিকার আন্দোলনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন এবং দরিদ্রদের সাহায্যের জন্য দাতব্য উদ্যোগগুলো সংগঠিত করেন। এভা পেলন সামাজিক ন্যায় এবং শ্রমিক শ্রেণীর সমর্থনের একটি প্রতীক হয়ে ওঠেন।
সামাজিক নীতিতে সাফল্যের পর, ১৯৫০-এর দশকের শেষের দিকে আর্জেন্টিনার অর্থনৈতিক অবস্থা খারাপ হয়ে যায়। মুদ্রাস্ফীতি, অর্থনৈতিক কষ্ট এবং রাজনৈতিক চাপ জনগণের মধ্যে অসন্তোষ সৃষ্টি করে। ১৯৫৫ সালে, পেলন একটি সামরিক অভ্যুত্থানের মাধ্যমে উচ্ছেদ হন এবং দেশ ত্যাগ করতে বাধ্য হন।
পেলন অনেক বছর নির্বাসনে কাটান, বিভিন্ন দেশে, যেমন স্পেনে। ১৯৭৩ সালে, আর্জেন্টিনায় কিছু রাজনৈতিক পরিবর্তনের পর, তিনি তাঁর গৃহ দেশে ফিরে আসেন এবং আবার প্রেসিডেন্ট হন।
পেলন ১৯৭৩ সালে ক্ষমতায় ফিরে আসেন, তবে তাঁর স্বাস্থ্যের অবনতি ঘটে। ১৯৭৪ সালে তাঁর মৃত্যুর আগে তিনি দেশ পরিচালনা চালিয়ে যান। তাঁর রাজনৈতিক উত্তরাধিকারের বিষয়ে বিতর্ক অব্যাহত রয়েছে: সমর্থকরা সামাজিক সংস্কারে তাঁর অবদান তুলে ধরেন, অন্যদিকে সমালোচকরা তাঁর স্বৈরতান্ত্রিক শাসন ও দুর্নীতির প্রতি ইঙ্গিত করেন।
পেলোনিজম, যা পেলনের শিক্ষা ভিত্তিক একটি মতাদর্শ, আর্জেন্টিনার রাজনীতিতে প্রভাব রাখা অব্যাহত রেখেছে। এটি জাতীয়তাবাদ, সমাজতন্ত্র এবং পপুলিজমের উপাদানগুলিকে একত্রিত করে এবং সামাজিক ন্যায় ও শ্রমিকদের অধিকারকে বুদ্ধিমত্তার সাথে তুলে ধরে।
হুয়ান পেলন আর্জেন্টিনার ইতিহাসে একটি গুরুত্বপূর্ণ উত্তরাধিকার রেখে গেছেন। তাঁর জীবন এবং ক্যারিয়ার ২০ শতকে দেশে ঘটে যাওয়া জটিল রাজনৈতিক ও সামাজিক পরিবর্তনগুলি প্রতিফলিত করে। পেলনের এবং তাঁর মতাদর্শের প্রভাব আধুনিক আর্জেন্টিনায় অনুভূত হচ্ছে, যা তাঁকে দেশের ইতিহাসে অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিত্ব করে তোলে।