ক্যামেরুন উনিশ শতকের শেষ থেকে ঔপনিবেশিক শাসনের অধীনে ছিল, প্রথমে জার্মানির পরে, প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পর, লিগ অব নেশনসের ম্যান্ডেট অনুযায়ী ফরাসি ও ব্রিটিশ অঞ্চলে বিভক্ত হয়। ঔপনিবেশিক শাসন ক্যামেরুনের সমাজে গভীর প্রভাব ফেলে, শিক্ষা, সামাজিক ও অর্থনৈতিক সম্পদের প্রবেশাধিকারে সীমাবদ্ধতা আরোপ করে এবং সামাজিক অসমতার জটিলতা বাড়িয়ে দেয়। শিক্ষিত বুদ্ধিজীবীদের আবির্ভাব, জাতীয় সচেতনতার বৃদ্ধি এবং আন্তর্জাতিক বিরোধী ঔপনিবেশিক আন্দোলনের প্রভাব ক্যামেরুনবাসীর জাতীয় আত্মাকে জাগ্রত করতে সহায়তা করে।
1948 সালে ক্যামেরুনের প্রথম রাজনৈতিক দল - ক্যামেরুন পিপলস ইউনিয়ন (সিএনসি) প্রতিষ্ঠিত হয়। দলটি ফরাসি এবং ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক শাসনের বিরুদ্ধে ছিল এবং ক্যামেরুনের সমস্ত অংশের সম্পূর্ণ স্বাধীনতা এবং সামঞ্জস্যের দাবি করেছিল। দলের নেতা রুবেন উম এনিয়োব এক বিরোধী আন্দোলনের প্রতীক হয়ে ওঠেন, জনসাধারণ এবং আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের মধ্যে ব্যাপক সমর্থন আকর্ষণ করেন। সিএনসি স্বাধীনতার জন্য সক্রিয়ভাবে আহ্বান জানিয়ে, দাস শ্রমের অবসান, সম্পদের সুবিচারপূর্ণ বন্টন এবং ক্যামেরুনবাসীদের জীবনযাত্রার উন্নতির পক্ষে দাঁড়িয়ে ছিল।
ফরাসি ঔপনিবেশিক প্রশাসন সিএনসির কার্যকলাপের প্রতিক্রিয়ায় কঠোর দমন অভিযান শুরু করে, দলের কাজকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করে এবং এর নেতৃত্বকে গ্রেফতার করে। দমন অভিযানে অন্তর্ভুক্ত ছিল গ্রেফতার, নির্যাতন, গ্রাম ধ্বংস এবং সিএনসির সদস্যদের নিগ্রহ। 1955 সালে ক্যামেরুনে ফরাসি শাসনের বিরুদ্ধে সশস্ত্র বিদ্রোহ শুরু হলে পরিস্থিতি আরও খারাপ হয়। এর প্রতিক্রিয়ায় ফরাসি কর্তৃপক্ষ দমন অভিযান বাড়িয়ে তোলে, জাতীয়তাবাদী মনোভাব দমন করার চেষ্টা করে।
ফরাসি সেনাবাহিনী সিএনসির সমর্থকদের বিরুদ্ধে বহু সাম্প্রতিক অভিযানের আয়োজন করে, যার ফলে অসংখ্য নাগরিক প্রাণ হারান। দমন অভিযান সত্ত্বেও, স্বাধীনতা আন্দোলন বৃদ্ধি পেতে থাকে এবং স্বাধীনতার জন্য সংগ্রাম অনেক ক্যামেরুনবাসীর জন্য একটি অগ্রাধিকার হয়ে উঠেছে। বিরোধী ঔপনিবেশিক আন্দোলনের দমন অসন্তোষ বাড়িয়ে তোলে এবং জনগণের স্বাধীনতার প্রতি অঙ্গীকারকে শক্তিশালী করে।
আন্তর্জাতিক চাপের ফলে ফ্রান্স 1950 এর দশকের শেষে ক্যামেরুনের উপর তার নীতিকে পুনর্বিবেচনা করতে বাধ্য হয়। 1956 সালে ক্যামেরুনকে স্বায়ত্তশাসনের মর্যাদা দেওয়া হয়, যা নিজস্ব সরকার এবং সংসদ গঠনের সুযোগ দেয়। রাজনৈতিক সংস্কার স্থানীয় নেতাদের দেশের শাসন করার এবং পূর্ণ স্বাধীনতার জন্য প্রস্তুতি নেওয়ার সুযোগ দেয়।
1960 সালে ফরাসি ক্যামেরুন আনুষ্ঠানিকভাবে স্বাধীনতা লাভ করে এবং ক্যামেরুন প্রজাতন্ত্রে পরিণত হয়। আহমাদু আহিদজো দেশের প্রথম প্রেসিডেন্ট হন এবং জাতি ঐক্য এবং স্থিতিশীলতা অর্জনের লক্ষ্যে কাজ শুরু করেন। তবে নতুন প্রজাতন্ত্রটি অভ্যন্তরীণ সংঘাত এবং অঞ্চলগত ভিন্নতার সাথে সঙ্গতিপূর্ণ চ্যালেঞ্জ গ্রহণ করে এবং ঔপনিবেশিক শোষণের ফলে ক্ষতিগ্রস্ত অর্থনীতির পুনরুদ্ধারের প্রয়োজনীয়তার মুখোমুখি হয়।
ব্রিটিশ ক্যামেরুন উত্তর এবং দক্ষিণ ক্যামেরুনে বিভক্ত ছিল, যা ব্রিটিশ নাইজেরিয়ার একটি অংশ হিসেবে পরিচালিত হয়। যদিও, ব্রিটিশ ক্যামেরুনের বাসিন্দাদের মধ্যে বিরোধী ঔপনিবেশিক মনোভাব বেড়ে উঠছিল। তারা স্বায়ত্তশাসনের এবং ক্যামেরুন প্রজাতন্ত্রের সাথে একত্রিত হওয়ার দাবি করছিল। 1961 সালে একটি গণভোট অনুষ্ঠিত হয়, যেখানে উত্তর ও দক্ষিণ ক্যামেরুনের বাসিন্দারা তাদের ভবিষ্যৎ জিনিসগুলির জন্য ভোট দেন।
গণভোটের ফলস্বরূপ, উত্তর ক্যামেরুন নাইজেরিয়ার সাথে যুক্ত হওয়ার সিদ্ধান্ত নেয় এবং দক্ষিণ ক্যামেরুন ক্যামেরুন প্রজাতন্ত্রের সাথে একত্র হওয়ার পক্ষে ভোট দেয়। অক্টোবর 1961 সালে একত্রিকরণ ঘটে, যা ফেডারেটিভ রিপাবলিক অফ ক্যামেরুনের সৃষ্টি করে। এই ঘটনাটি একটি স্বাধীন রাষ্ট্র গঠনের দিকে একটি গুরুত্বপূর্ন পদক্ষেপ হয়ে দাঁড়ায়, যদিও এটি দেশের উত্তর ও দক্ষিণ ভাগের মধ্যে ব্যবস্থাপনা এবং সংস্কৃতির পার্থক্য নিয়ে অপরিষ্কার প্রশ্ন ফেলে রেখে।
স্বাধীনতা অর্জনের পর, আহমাদু আহিদজো দেশের স্থিতিশীলতা এবং একটি নতুন অর্থনীতি গঠনের কাজ শুরু করেন। এর প্রথম পদক্ষেপগুলির মধ্যে একটি ছিল কেন্দ্রীয় সরকারকে শক্তিশালী করা এবং বিভিন্ন অঞ্চলে সমন্বয় সাধন করা, যা সাংস্কৃতিক, ভাষাগত এবং ধর্মীয় ভিন্নতার কারণে জটিল ছিল। আহিদজো এছাড়াও সিএনসির সমর্থকদের মধ্যে কিছু অবশিষ্ট বিরোধী ঔপনিবেশিক আন্দোলন দমনের প্রয়োজনের মুখোমুখি হয়েছিল, যারা পূর্ণ গণতন্ত্র এবং সংস্কারের জন্য দাবি জানাতো।
ক্যামেরুনের অর্থনীতিতে কৃষি এবং খনিজ সম্পদের উন্নয়নে গুরুত্ব দেওয়া হয়, যা বৈদেশিক মুদ্রার প্রবাহ নিশ্চিত করতে সাহায্য করবে। আহিদজোর সরকার স্থিতিশীলতার জন্য অবকাঠামো আধুনিকীকরণ এবং বিদেশী বিনিয়োগ আকর্ষণের জন্য সক্রিয় চেষ্টা চালায়। অভ্যন্তরীণ বিরোধ সত্ত্বেও, দেশ ধীরে ধীরে তার স্বাধীনতা শক্তিশালী করতে শুরু করে এবং আন্তর্জাতিক পর্যায়ে সাফল্য অর্জন করে।
স্বাধীনতার জন্য লড়াই ক্যামেরুনে শক্তিশালী প্রভাব ফেলে, দেশের রাজনৈতিক ও সামাজিক জীবনে একটি উল্লেখযোগ্য ধাঁধা রেখে। বিরোধী ঔপনিবেশিক আন্দোলনের ফলে একটি স্বাধীন রাষ্ট্র গঠিত হয়, তবে এটি সামাজিক অসমতা, অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতার অভাব এবং রাজনৈতিক আলোচনা নিয়ে অপরিষ্কার সমস্যা রেখে যায়। ফরাসি এবং ব্রিটিশ অঞ্চলে বিভক্তির ফলে সাংস্কৃতিক এবং প্রশাসনিক স্তরে চিহ্ন থেকে যায়, যা ভবিষ্যতে সংঘাতের জন্য ভিত্তি তৈরি করে।
ইংরেজি ও ফরাসি ভাষাভাষীদের মধ্যে বিরোধ, যা ঔপনিবেশিক সময়ে শুরু হয়েছিল, দেশের রাজনৈতিক স্থিতিশীলতার উপর প্রভাব ফেলে। এই বিরোধগুলি এখনও ক্যামেরুনে প্রভাব ফেলে, যেহেতু উভয় সম্প্রদায় এখনও সাংস্কৃতিক এবং ভাষাগত বাধার মুখোমুখি হয়, যা অভ্যন্তরীণ নীতিমালা এবং সামাজিক উন্নয়নে প্রভাব ফেলে।
বিরোধী ঔপনিবেশিক লড়াই ক্যামেরুনের জাতীয় পরিচয়ের ভিত্তি হয়ে উঠেছে এবং দেশের রাজনৈতিক কাঠামোর জন্য ভিত্তি তৈরি করেছে। রুবেন উম এনিয়োব এবং অন্যান্য বিরোধী আন্দোলনের নেতাদের কীর্তি ক্যামেরুনবাসীর মনে স্বাধীনতার পথে প্রতিরোধ এবং অঙ্গীকারের উদাহরণ হয়ে রয়েছে। এই ঘটনাবলী আজকের রাজনৈতিক এবং সামাজিক প্রতিষ্ঠানগুলিতে প্রভাব ফেলে, যা স্বাধীনতার জন্য লড়াইয়ের অভিজ্ঞতার আলোকে ক্রমাগত বিকশিত হচ্ছে।
ক্যামেরুনের স্বাধীনতা পুরো দেশের জন্য একটি নতুন যুগের সূচনা করে। এটি সামাজিক এবং অর্থনৈতিক বৃদ্ধির পথ উন্মুক্ত করেছে, এবং সমতা এবং সমৃদ্ধির জন্য গ্রামের সমাজ গঠনের জন্য পরিবেশ তৈরি করেছে। আজ, স্বাধীনতার জন্য লড়াই জাতীয় ইতিহাসের একটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান হিসেবে রয়ে গেছে এবং ক্যামেরুনের একতা ও স্থিতিশীলতা শক্তিশালী করার ভিত্তি।
ক্যামেরুনের স্বাধীনতার জন্য লড়াই ছিল একটি জটিল এবং দীর্ঘপ্রসারী প্রক্রিয়া, যা দেশটিকে ঔপনিবেশিক শোষণ থেকে মুক্ত করেছে। বিরোধী ঔপনিবেশিক আন্দোলনের ইতিহাস, রাজনৈতিক নেতাদের প্রচেষ্টা এবং জনগণের সমর্থন একটি স্বাধীন ক্যামেরুন গঠনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে। আজ ক্যামেরুন একটি স্বায়ত্তশাসিত রাষ্ট্র হিসেবে বিকাশ করতে থাকে, অতীতের প্রতি স্মৃতি সংরক্ষণ করে এবং ভবিষ্যতের দিকে অগ্রসর হচ্ছে। স্বাধীনতার জন্য লড়াই ক্যামেরুনের ইতিহাসে একটি একদম মুছে ফেলা অক্ষর রেখেছে এবং সকল প্রজন্মের জন্য অধিকার এবং ন্যায়ের প্রতি অঙ্গীকারের একটি গুরুত্বপূর্ণ উদাহরণ।