কঙ্গোতে মোবুতু সেসে সেকোর ক্ষমতায় আরোহণ দেশটির ইতিহাসে অন্যতম দৃশ্যমান এবং বিরোধপূর্ণ ঘটনা। 1965 সালে তার শাসন শুরু হওয়ার পর, এটি অগণতান্ত্রিক শাসন, দুর্নীতি এবং অর্থনৈতিক মন্দার প্রতীক হয়ে ওঠে। এই নিবন্ধে আমরা মোবুতুর উত্থানের পথে, তার শাসন এবং কঙ্গো ও এর জনগণের জন্য তার ফলাফলগুলি অন্বেষণ করব।
মোবুতু 1930 সালের 14 অক্টোবর কঙ্গোর পূর্ব দিকের লুভালা গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন, যা তখনও বেলজিয়ান উপনিবেশ ছিল। স্কুল শেষ করার পর, তিনি বেলজিয়ান সামরিক একাডেমিতে পড়াশোনা করেন, যেখানে তিনি এমন দক্ষতা অর্জন করেন যা পরে তিনি ক্ষমতার নিকটে যাওয়ার জন্য ব্যবহার করেছিলেন। 1960 সালে বেলজিয়াম থেকে স্বাধীনতা পাওয়ার পর দেশটির রাজনৈতিক পরিস্থিতি নাটকীয়ভাবে পরিবর্তিত হয়, যখন কঙ্গো অভ্যন্তরীণ সংঘাত এবং ক্ষমতার জন্য লড়াইয়ের মুখোমুখি হয়।
দেশের প্রথম প্রধানমন্ত্রী ছিলেন প্যাট্রিস লুমুম্বা, যিনি সংস্কার চালানোর এবং স্বাধীনতা প্রতিষ্ঠার চেষ্টা করেছিলেন। কিন্তু, 1961 সালে তার গ্রেফতার এবং হত্যার পর, দেশটির রাজনৈতিক পরিস্থিতির অবস্থা খারাপ হয়ে যায় এবং কঙ্গোতে বিভিন্ন গোষ্ঠীর মধ্যে ক্ষমতার জন্য লড়াই শুরু হয়।
1965 সালে, একাধিক বছরের রাজনৈতিক অস্থিরতার পর, মোবুতু, যিনি তখন জেনারেল স্টাফের প্রধান ছিলেন, সামরিক অভ্যুত্থান করে রাষ্ট্রপতি লরাঁ দেজিরে কাবিলাকে ক্ষমতাচ্যুত করেন, যিনি লুমুম্বার হত্যার পরে ক্ষমতায় আসেন। মোবুতু নিজেকে রাষ্ট্রপতি ঘোষণা করে কঠোর অগণতান্ত্রিক শাসন প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে এগিয়ে যান।
ক্ষমতায় আসার পরপরই তিনি "বিপ্লবী সরকার" প্রতিষ্ঠার ঘোষণা দেন এবং তার প্রতিপক্ষদের থেকে রাজনৈতিক মঞ্চকে পরিষ্কার করতে সক্রিয়ভাবে কাজ করতে শুরু করেন। মোবুতু তার ক্ষমতা দৃঢ় করতে সেনাবাহিনী এবং বিদেশী সহযোগিতার সমর্থন গ্রহণ করেন, যা তাকে বিদ্রোহের যেকোনো প্রচেষ্টা দমন করতে সক্ষম করে।
মোবুতু একটি মতাদর্শ পালন করেন, যা মোবুতিজম নামে পরিচিত, যা জাতীয়তাবাদ এবং ঐক্যের ধারণার ভিত্তিতে ছিল। তিনি "আফ্রিকানাইজেশন" অর্থনীতির উদ্যোগ নেন, বিদেশী মূলধনের বদলে местных предпринимателей দ্বারা স্থানীয় পুঁজির প্রতিস্থাপনের আহ্বান জানিয়ে। তবে বাস্তবে, এটি দেশটির সম্পদ মোবুতুর নিকটবর্তী একটি ক্ষুদ্র গোষ্ঠীর হাতে কেন্দ্রীভূত হওয়ার ফলস্বরূপ পরিণত হয়।
1971 সালে মোবুতু দেশটির নাম "ডেমোক্র্যাটিক রিপাবলিক অফ কঙ্গো" থেকে "জায়ির" নামকরণ করেন, যা আফ্রিকান জাতীয়তাবাদের প্রতি তার অঙ্গীকার জোরদার করে। তিনি শহর, রাস্তা এবং এমনকি ব্যক্তিদের পুনঃনামকরণের একটি গণ অভিযান শুরু করেন, যা তার নতুন জাতীয় স্বর্ণোত্তর তৈরি করার প্রচেষ্টার একটি অংশ হয়ে ওঠে।
মোবুতু তার ক্ষমতাকে প্রগতিশীল হিসেবে পেশ করার চেষ্টা সত্ত্বেও, তার শাসন দ্রুত দুর্নীতি এবং সম্পদ শোষণের সাথে মিশে যায়। মোবুতু এবং তার ঘনিষ্ঠরা রাষ্ট্রীয় অর্থের ব্যবহার করে ব্যক্তিগত লাভবান হওয়ার চেষ্টা করেন, যা বিশাল ঋণ এবং অর্থনৈতিক মন্দার দিকে নিয়ে যায়।
তার শাসনের সময় কঙ্গো, যেখানে বিশাল খনিজ সম্পদ যেমন তামা এবং হীরা রয়েছে, বিশ্বের সবচেয়ে গরীব দেশের একটি হয়ে ওঠে। 1980-এর দশকে অর্থনৈতিক পরিস্থিতি সংকটময় হয়ে ওঠে: পণ্যের ঘাটতি, মুদ্রাস্ফীতি এবং বেকারত্ব বেশিরভাগ নাগরিকের জন্য দৈনন্দিন বাস্তবতা হয়ে দাঁড়ায়।
মোবুতু বিরোধীদের দমন করতে এবং জনতার উপর নিয়ন্ত্রণ রাখতে কঠোর দমনমূলক ব্যবস্থা ব্যবহার করেন। গোপন পুলিশ, "এসডিআর" নামে পরিচিত, regime-এর বিরুদ্ধে যেকোনো কার্যকলাপ নজরদারি করে। রাজনৈতিক বিরোধীরা গ্রেফতার, প্রহার এবং এমনকি হত্যার শিকার হন।
জনসাধারণের অসন্তোষ বাড়ছিল, এবং 1980-এর দশকের শেষদিকে প্রতিবাদগুলি আরও সংগঠিত হতে শুরু করে। নাগরিকরা অগণতান্ত্রিক শাসনের বিরুদ্ধে দাঁড়াতে শুরু করে, রাজনৈতিক সংস্কার এবং জীবনযাত্রার মান উন্নতির দাবি জানাচ্ছিল। মোবুতু, যদিও বাড়তে থাকা অসন্তোষ তাৎপর্যপূর্ণভাবে বুঝতে পেরেছিলেন, তবুও প্রতিবাদগুলি দমন করতে শক্তি ব্যবহার করতে থাকেন।
1990-এর দশকের প্রথম দিকে, আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের এবং অর্থনৈতিক সঙ্কটের চাপের কারণে মোবুতু কিছু রাজনৈতিক সংস্কার করার জন্য বাধ্য হন। তিনি বহু দলের সিস্টেমে যাওয়ার ঘোষণা দেন, তবে এই সংস্কারগুলো অপ্রতুল ছিল এবং প্রায়ই উপেক্ষিত ছিল।
1994 সালে রুন্দেতে গণহত্যা ঘটনার পর পরিস্থিতি খারাপ হতে শুরু করে, যা কঙ্গোতে শরণার্থীদের একটি ব্যাপক প্রবাহ নিয়ে আসে। মোবুতু পশ্চিমা দেশগুলির সমর্থন হারান, এবং 1997 সালের মধ্যে লরাঁ কাবিলার নেতৃত্বে সামরিক বাহিনীর বিরুদ্ধে কার্যক্রম শুরু হয়, যিনি কর্তৃত্ববাদী শাসকের বিরুদ্ধে বিদ্রোহের নেতৃত্ব দেন।
1997 সালের মে মাসে মোবুতু ক্ষমতাচ্যুত হন, এবং তার শাসন শেষ হয়, দেশের পেছনে ধ্বংসাত্মক পরিস্থিতি এবং গভীর সামাজিক ও অর্থনৈতিক সমস্যাগুলি রেখে। কঙ্গোর পুনর্গঠন একটি কঠিন কাজ হয়ে ওঠে, কারণ সংঘাত পরবর্তী বছরগুলিতেও চলতে থাকে।
মোবুতুর শাসন কঙ্গোর ইতিহাসে গভীর প্রভাব ফেলে। তার অগণতান্ত্রিক শাসন, দুর্নীতি এবং মানবাধিকার সীমাবদ্ধতা বছরের পর বছর ধরে অর্থনৈতিক মন্দা এবং সামাজিক অস্থিরতা তৈরি করেছে। মোবুতুর উত্তরাধিকার দেশটিতে এখনও অনুভূত হচ্ছে, যেখানে দুর্নীতি এবং রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানের প্রতি বিশ্বাসের অভাব প্রধান সমস্যা হয়ে রয়ে গেছে।
যদিও কঙ্গো পুনর্গঠন এবং উন্নয়নে আগ্রহী, অতীতের ছায়া এখনও তার জনগণকে তাড়িত করে। এই ঐতিহাসিক পাঠগুলো উপলব্ধি করা দেশের একটি স্থায়ী ভবিষ্যত গড়ে তোলার জন্য অপরিহার্য।
মোবুতু সেসে সেকোর উত্থান ও তার শাসন কঙ্গোর ইতিহাসে একটি গুরুত্বপূর্ণ মাইলফলক। সংঘাত, দুর্নীতি এবং দমনে পূর্ণ সময়কাল লাখ লাখ মানুষের ভাগ্যকে গভীরভাবে প্রভাবিত করেছে। দেশের বর্তমান পরিস্থিতি ও এর চ্যালেঞ্জগুলি বোঝার জন্য অতীতের পাঠগুলি বিবেচনায় নেওয়া এবং ন্যায়বিচার এবং গণতান্ত্রিক সমাজ গঠনে আগ্রহী হওয়া প্রয়োজন।