নেলসন ম্যান্ডেলা (১৯১৮-২০১৩) — দক্ষিণ আফ্রিকার একটি রাজনীতিবিদ, মানবাধিকার কর্মী এবং দক্ষিণ আফ্রিকার প্রজাতন্ত্রের প্রথম কৃষ্ণাঙ্গ প্রেসিডেন্ট। তাঁর জীবন এবং কর্মকাণ্ড দৃঢ়তা, ত্যাগ এবং ন্যায়ের প্রতি আকাঙ্ক্ষার প্রতীক।
নেলসন রোলিহলাহা ম্যান্ডেলা ১৮ জুলাই ১৯১৮ সালে তেম্বু উপজাতির মভেজো গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি তাঁর উপজাতির প্রথম ব্যক্তি ছিলেন যিনি বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষা গ্রহণের সুযোগ পান। ম্যান্ডেলা ফোর্ট হেয়ার ইউনিভার্সিটিতে পড়াশোনা করেন, যেখানে তিনি তথ্যশাস্ত্রে স্নাতক ডিগ্রি অর্জন করেন। পড়াশোনার সময় তিনি রাজনীতি এবং সক্রিয়তার প্রতি আগ্রহী হয়ে ওঠেন।
১৯৪৪ সালে, ম্যান্ডেলা আফ্রিকান ন্যাশনাল কংগ্রেস (এএনসি) এর সদস্য হন। তিনি দক্ষিণ আফ্রিকার জাতিগত বিচ্ছিন্নতার বিরুদ্ধে সক্রিয়ভাবে লড়াই করেন। ১৯৫২ সালে, ম্যান্ডেলা অন্যান্য কর্মীদের সঙ্গে নিয়ে অহিংস প্রতিরোধের একটি প্রচার শুরু করেন।
১৯৬২ সালে, সরকারবিরোধী ধর্মঘট এবং অন্যান্য সক্রিয়তার জন্য ম্যান্ডেলাকে গ্রেফতার করা হয়। ১৯৬৪ সালে, তিনি ভাঙচুরের জন্য আজীবন কারাদণ্ডে দণ্ডিত হন। রোব্বেন দ্বীপে তাঁর বন্দিজীবন (যেখানে তিনি ২৭ বছর থেকে ১৮ বছর কাটিয়েছিলেন) জাতিগত বিচ্ছিন্নতার বিরুদ্ধে সংগ্রামের প্রতীক হয়ে দাঁড়ায়। কঠোর পরিস্থিতির মধ্যেও, ম্যান্ডেলা আশা হারাননি এবং মুক্তির জন্য লড়াই চালিয়ে যান।
১৯৯০ সালে, আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় এবং অভ্যন্তরীণ প্রতিবাদের চাপের কারণে ম্যান্ডেলাকে মুক্তি দেওয়া হয়। তিনি এএনসির নেতা হন এবং দক্ষিণ আফ্রিকার গণতন্ত্রের দিকে যাওয়ার একটি প্রধান স্থপতি হন। ১৯৯৪ সালে প্রথম গণতান্ত্রিক নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়, যেখানে ম্যান্ডেলা দেশের প্রথম কৃষ্ণাঙ্গ প্রেসিডেন্ট হন। তাঁর শাসন ১৯৯৯ সাল পর্যন্ত চলে।
নেলসন ম্যান্ডেলা মানবাধিকার এবং জাতিগত ন্যায়ের সংগ্রামের একটি প্রতীক হিসেবে রয়েছেন। তাঁর জীবন সারা পৃথিবীতে কোটি কোটি মানুষকে অনুপ্রাণিত করেছে। তিনি অন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রতিরোধের প্রতীক হয়েছেন, আশা এবং সাহসের ধারণা জাগিয়েছেন। ম্যান্ডেলা ১৯৯৩ সালে নোবেল শান্তি পুরস্কার সহ বহু পুরস্কার অর্জন করেছিলেন।
ম্যান্ডেলা তিনবার বিয়ে করেছেন। তাঁর শেষ বিয়ে গ্রাসা মাশেলের সঙ্গে ছিল, যিনি একজন কার্যকরি মহিলা হিসাবে পরিচিত। তাঁর ছয়টি সন্তান এবং অনেক নাতি-নাতনি রয়েছে। ম্যান্ডেলা খেলাধুলার প্রতি বেশ আগ্রহী ছিলেন, বিশেষ করে রাগবি এবং তিনি খেলাধুলার মাধ্যমে একতার ধারণা প্রচার করতেন।
নেলসন ম্যান্ডেলা ২০১৩ সালের ৫ ডিসেম্বর ৯৫ বছর বয়সে মারা যান। তাঁর অন্ত্যেষ্টিক্রিয়া একটি বৃহৎ ঘটনা ছিল, যেখানে সারা বিশ্বের নেতারা জড়ো হন। ম্যান্ডেলার স্মৃতি তাঁর উত্তরাধিকার জুড়ে জীবিত রয়েছে এবং তাঁর অর্জনগুলো নতুন প্রজন্মের কার্যকর্তাদের অনুপ্রাণিত করে চলে।
নেলসন ম্যান্ডেলা শুধু একজন রাজনৈতিক নেতা ছিলেন না, বরং তিনি ইতিহাসের গতিপথ পরিবর্তনকারী এক ব্যক্তি। তাঁর জীবনযাত্রা আমাদের শেখায় যে নিজস্ব বিশ্বাসের জন্য লড়াই করা এবং কঠিন পরিস্থিতিতে আশা হারানো কতটা গুরুত্বপূর্ণ। তিনি আত্মার শক্তি এবং দৃঢ়তার প্রতীক হিসেবে রয়েছেন, আমাদের সকলকে ন্যায় এবং সমতার জন্য সংগ্রামের গুরুত্বপূর্ণতার কথা মনে করিয়ে দিচ্ছেন।