হাঙ্গেরির ইতিহাস গভীর প্রাচীন এক সময় থেকে শুরু হয়। আধুনিক রাষ্ট্রের অঞ্চলজুড়ে প্রথম বসতি স্থাপন হয়েছিল পাথরযুগে। হাজার ২০০০ সালের কাছাকাছি এখানে উপজাতি বাস করত, যারা কৃষি ও পশুপালন করত।
প্রথম হাজার বৎসকী আগে হাঙ্গেরির অঞ্চলজুড়ে সেল্টিক উপজাতি বসতি স্থাপন করে। এই সময়ে অঞ্চলটি রোমান সাম্রাজ্যের অংশ হয়ে ওঠে, যা ব্যবসা ও সংস্কৃতির বিকাশে সহায়তা করেছিল। তবে রোমান সাম্রাজ্যের পতনের পর পঞ্চম শতাব্দীতে হাঙ্গেরির ভূমি বিভিন্ন জাতির আক্রমণের শিকার হয়।
আধুনিক হাঙ্গেরির মানুষ, বা মাদ্যার, নবম শতাব্দীতে কেন্দ্রীয় ইউরোপে অভিবাসন শুরু করেন। তারা ছিলেন একটি কোচিং সম্প্রদায়, যারা ইউরাল অঞ্চল থেকে এসেছিল। ৮৯৫ সালে আরপাদের নেতৃত্বে মাদ্যারেরা কার্পাথাস পর্বত অতিক্রম করে নতুন অঞ্চলগুলির দখল নিতে শুরু করে।
নবম শতাব্দীর শেষের দিকে মাদ্যারেরা প্যানোনিয়া অঞ্চলের একটি বড় অংশের উপর নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করে এবং তাদের প্রথম রাজ্য প্রতিষ্ঠা করে। ১০০০ সালে হাঙ্গেরিয়ান প্রিন্স ইয়েস্টভান I রাজা হিসেবে অভিষিক্ত হন, এবং হাঙ্গেরি একটি রাজ্যে পরিণত হয়।
মধ্যযুগে হাঙ্গেরি একটি সমৃদ্ধির সময় অতিক্রম করে। রাজা ইয়েস্টভান I খ্রিষ্টধর্মকে প্রচার করেন, যা রাষ্ট্রের মজবুতি এবং ইউরোপীয় সাংস্কৃতিক ও রাজনৈতিক জীবনে এর ইন্টিগ্রেশনকে সহায়তা করে। তাঁর শাসনকে হাঙ্গেরির রাষ্ট্রপরিচয়ের শুরু হিসেবে গণ্য করা হয়।
তবে ত্রয়ী শতাব্দীতে হাঙ্গেরি বাইরের হুমকির সম্মুখীন হয়, বিশেষত মনগোলদের কাছ থেকে, যারা ১২৪১ সালে বহু শহর ধ্বংস করে। তবুও, দেশটি পুনরুদ্ধার করে এবং ১৪-১৫ শতকে আনজু ডাইনাস্টির শাসনের অধীনে বিকাশ লাভ করে।
১৬-১৭ শতকে হাঙ্গেরি ওসমান সাম্রাজ্য ও হ্যাবসবার্গদের মধ্যে সংঘর্ষের স্থল হয়ে ওঠে। ১৫২৬ সালে হাঙ্গেরীয় সেনাবাহিনী মোহাচের যুদ্ধে বিশাল পরাজয়ের শিকার হয়, এবং দেশের বড় অংশ ওসমানদের নিয়ন্ত্রণে চলে যায়।
ওসমানী শাসন ১৫০ বছরেরও বেশি সময় ধরে চলেছিল, এবং এই সময়কালে হাঙ্গেরির সংস্কৃতি ও সমাজে বড় ধরনের প্রভাব পড়ে। তবে ১৭ শতকের শেষের দিকে মাদ্যাররা ওসমানদের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ শুরু করে, এবং ১৬৮৬ সালে বুদ্ধা মুক্ত হয়।
ওসমানিদের থেকে মুক্তির পর হাঙ্গেরি হ্যাবসবার্গদের নিয়ন্ত্রণে চলে আসে। ১৮ শতকে হাঙ্গেরি অস্ট্রিয়ান রাজতন্ত্রের অংশ হিসেবে বিকাশ লাভ করে, এবং এই সময় জাতীয় আন্দোলন গড়ে ওঠে যা স্বায়ত্তশাসন ও স্বাধীনতা অর্জনে চেষ্টিত ছিল।
১৮৪৮ সালে হাঙ্গেরিতে একটি বিপ্লব শুরু হয়, তবে এটিকে অস্ট্রিয়ান ও রাশিয়ান সেনাবাহিনী দমন করে। তবুও, ১৮৬৭ সালে হাঙ্গেরি অস্ট্রো-হাঙ্গেরিয়ান সাম্রাজ্যে সমঅধিকার সদস্যের মর্যাদা পায়।
২০ শতকের শুরুতে হাঙ্গেরি গুরুতর রাজনৈতিক ও সামাজিক পরিবর্তনের মুখোমুখি হয়। প্রথম বিশ্বযুদ্ধ দেশের জন্য একটি বিপর্যয়কর সমাপ্তি নিয়ে আসে — ১৯২০ সালের ত্রিয়ানোন চুক্তির ফলস্বরূপ হাঙ্গেরি গুরুত্বপূর্ণ এলাকা হারায়।
যুদ্ধের পরে দেশে অর্থনৈতিক সমস্যা ও রাজনৈতিক অস্থিরতা সৃষ্টি হয়, যা একাধিকার শাসনের প্রতিষ্ঠায় পরিণতি ঘটে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধও কষ্ট নিয়ে আসে, এবং হাঙ্গেরি নাৎসি জার্মানির নিয়ন্ত্রণে চলে যায়। যুদ্ধের পর দেশটি সোভিয়েত ইউনিয়নের দ্বারা মুক্ত হয়।
১৯৮৯ সালে কমিউনিস্ট শাসন পতনের পরে হাঙ্গেরি গণতন্ত্র এবং বাজার অর্থনীতির দিকে অগ্রসর হতে শুরু করে। ২০০৪ সালে দেশটি ইউরোপীয় ইউনিয়নে প্রবেশ করে, যা উন্নয়নের নতুন সম্ভাবনা খুলে দেয়।
আজ হাঙ্গেরি ইউরোপীয় মহলেয় গুরুত্বপূর্ণ একটি খেলোয়াড় হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে, সমৃদ্ধ সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যকে সংরক্ষণ করতে এবং আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সঙ্গে সংহতির জন্য প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। তবে, অনেক দেশের মতো হাঙ্গেরিও অভিবাসন, অর্থনৈতিক সমস্যা এবং রাজনৈতিক মতবিরোধের মতো চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন হচ্ছে।