অস্ট্রিয়া, ইউরোপের একটি কেন্দ্রিয় শক্তি হিসাবে, উভয় বিশ্বযুদ্ধেই উল্লেখযোগ্য ভূমিকা পালন করেছিল, যা এর রাজনৈতিক, সামাজিক এবং অর্থনৈতিক উন্নয়নের উপর গভীর প্রভাব ফেলেছিল। প্রথম বিশ্বযুদ্ধ (১৯১৪-১৯১৮) এবং দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ (১৯৩৯-১৯৪৫) কেবল অস্ট্রিয়ার দুর্দশা নয় বরং পুরো বিশ্বের কোটি কোটি মানুষের ভাগ্যকেও পরিবর্তন করেছিল।
২০শ শতাব্দীর শুরুতে অস্ট্রিয়ান সাম্রাজ্য রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা এবং জাতীয় চাপের মধ্যে ছিল। অস্ট্রিয়ান, হাঙ্গেরিয়ান, চেক, সার্বিয়ান এবং অন্যান্য জাতিগত গোষ্ঠীসহ বহু জাতির মানুষ সাম্রাজ্যে বসবাস করতেন, যা অভ্যন্তরীণ সংঘাত এবং স্বায়ত্তশাসনের জন্য সংগ্রামের দিকে নিয়ে গিয়েছিল। যুদ্ধের শুরুতে যা অবদান রেখেছিল তা হলো জাতীয়তাবাদী মনোভাব এবং অস্ট্রো-হাঙ্গেরি এবং সার্বিয়ার মধ্যে সম্পর্কের তীব্রতা।
১৯১৪ সালে সারায়েভোতে আর্কডিউক ফ্রাঞ্জ ফারদিনান্ডের হত্যাকাণ্ড প্রথম বিশ্বযুদ্ধের শুরুতে একটি ট্রিগার হিসাবে কাজ করেছিল। জার্মানির সমর্থনের সাথে অস্ট্রিয়ান সাম্রাজ্য সার্বিয়ার বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করে, যা একটি চেইন রিঅ্যাকশন তৈরি করে এবং অন্যান্য দেশগুলিকে সংঘাতে যুক্ত করে। কয়েক সপ্তাহের মধ্যে চুক্তি এবং বিরোধের সিস্টেম এমন একটি পরিস্থিতির দিকে নিয়ে যায় যেখানে ইউরোপের বেশিরভাগ যুদ্ধের মধ্যে ছিল।
অস্ট্রিয়ান সেনাবাহিনী দ্রুত বিজয় অর্জনের আশায় যুদ্ধে প্রবেশ করে। প্রাথমিকভাবে অস্ট্রিয়ান বাহিনী সংঘাতের কারণের সাথে যুক্ত হন, বিশেষ করে সার্বিয়া এবং রাশিয়ার বিরুদ্ধে। তবে, ১৯১৫ সালে ইতালির অন্তর্ভুক্তির সাথে যুদ্ধের পরিস্থিতি পরিবর্তিত হয়েছিল, যা অস্ট্রিয়ার জন্য তার শক্তি এবং সম্পদ পুনর্বিবেচনা করতে বাধ্য করে।
অস্ট্রিয়ান সেনাবাহিনী বেশ কয়েকটি ফ্রন্টে লড়াই করেছে, যেমন ইতালীয়, রাশিয়ান এবং পশ্চিম ফ্রন্ট। উল্লেখযোগ্য প্রচেষ্টার পরেও যুদ্ধ লম্বা এবং ক্লান্তিকর বলে প্রমাণিত হয়। অর্থনৈতিক সমস্যাগুলি, সম্পদের অভাব এবং উচ্চ ক্ষতি অস্ট্রিয়ান বাহিনীর মনোবল এবং যুদ্ধক্ষমতাকে দুর্বল করে দেয়।
১৯১৭ সালের মধ্যে, একাধিক পরাজয়ের পরে, অস্ট্রিয়া এবং তার মিত্ররা গুরুতর সমস্যার মুখোমুখি হতে শুরু করে। ১৯১৮ সালে ফ্রন্টের পরিস্থিতি গুরুতর হয়ে ওঠে এবং অক্টোবর মাসে অস্ট্রো-হাঙ্গেরি একটি সেপারেশন চুক্তিতে স্বাক্ষর করে, যার ফলে যুদ্ধের অংশগ্রহণের শেষ হয়। যুদ্ধের ফলস্বরূপ, সাম্রাজ্য বহু স্বাধীন রাষ্ট্রে বিভক্ত হয়, যেমন চেকোস্লোভাকিয়া, হাঙ্গেরি এবং যুগোস্লাভিয়া।
প্রথম বিশ্বযুদ্ধে পরাজয় অস্ট্রিয়ান জনগণের জন্য একটি গুরুতর আঘাত ছিল। দেশে বিপ্লবী মেজাজ তৈরি হয়, এবং ১৯১৮ সালের নভেম্বর মাসে অস্ট্রিয়ান প্রজাতন্ত্র ঘোষণা করা হয়। এই ঘটনাটি হাব্সবুর্গ রাজবংশের দীর্ঘ শাসনের শেষকে চিহ্নিত করে।
দুই বিশ্বযুদ্ধের মধ্যে অস্ট্রিয়া গুরুতর অর্থনৈতিক এবং রাজনৈতিক সমস্যার সম্মুখীন হয়েছিল। যুদ্ধের ফলে দেশের অর্থনীতি বিধ্বস্ত হয় এবং এটি পুনরুদ্ধারের চেষ্টা ব্যর্থ হয়। রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা এখানে বামপন্থী এবং মেজর সামাজিক আন্দোলনের উত্থানের দিকে নিয়ে যায়।
১৯৩৪ সালে অস্ট্রিয়ায় "ফেব্রুয়ারি সংঘর্ষ" নামে পরিচিত একটি গৃহযুদ্ধ শুরু হয়, যার ফলস্বরূপ কর্তৃত্ববাদী সরকার কর্তৃক ক্যানস্লার অ্যাঙ্গেলবার্ট ডলফুসের নেতৃত্বে ক্ষমতা দখল করে। এই সরকার হিটলারের প্রভাব রোধ করার এবং দেশের স্বাধীনতা রক্ষা করার চেষ্টা করছিল, তবে বছরের পর বছর ধরে জার্মানির চাপ বৃদ্ধি পেয়েছিল।
১৯৩৮ সালে, রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা এবং কিছু অস্ট্রিয়ানের সমর্থনের সুযোগ নিয়ে, নাৎসি জার্মানি অস্ট্রিয়ার অ্যানেক্সেশন — অস্ট্রিয়ার অন্তর্ভুক্তি — সম্পন্ন করে। এই ঘটনা ইতিহাসের একটি গুরুত্বপূর্ণ মোমেন্ট তৈরি করে, যা অস্ট্রিয়ার স্বাধীনতার চুরির দিকে নিয়ে যায়। অস্ট্রিয়া তৃতীয় রাইখের অংশ হিসেবে ঘোষণা করা হয় এবং অনেক অস্ট্রিয়ান নাৎসি শাসনের অংশ হিসেবে পরিণত হয়।
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময়, অস্ট্রিয়ান অর্থনীতি জার্মানির সাথে একীকৃত হয়, এবং অনেক অস্ট্রিয়ান জার্মান আর্মির সদস্য হয়। অস্ট্রিয়ানরা বিভিন্ন সামরিক অভিযানে অংশগ্রহণ করে, যেমন সোভিয়েত ইউনিয়নের বিরুদ্ধে "বারবারোসা" অপারেশন। তবে, সব অস্ট্রিয়ান নাৎসি শাসনের সমর্থক ছিল না, এবং দেশে প্রতিরোধের একটি প্রকৃতি ছিল, যার মধ্যে "লাল ম্যানটেল" গোষ্ঠী ছিল।
১৯৪৫ সালে, নাৎসি জার্মানির পরাজয়ের পর, অস্ট্রিয়া আবার যুদ্ধের ধ্বংসাবশেষে উপস্থিত হয়। দেশটি জোট শক্তির মধ্যে দখলকৃত অঞ্চলে বিভক্ত হয়: মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, সোভিয়েত ইউনিয়ন, যুক্তরাজ্য এবং ফ্রান্স। এই দখলের সময়কাল ১৯৫৫ সাল পর্যন্ত স্থায়ী হয় এবং দেশটির পুনর্গঠন এবং পুনর্গঠনের সময় হয়ে দাঁড়ায়।
১৯৫৫ সালে একটি রাষ্ট্রপুঞ্জ চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়, যা অস্ট্রিয়ার স্বাধীনতা পুনরুদ্ধার করে। তবে চুক্তির শর্তগুলি দেশটিকে নিরপেক্ষতা রক্ষা করতে এবং সামরিক জোটে প্রবেশ করতে বাধ্য করে। এই নিরপেক্ষতা পরবর্তী দশকগুলিতে অস্ট্রিয়ার বৈদেশিক নীতির মূল দিক হয়ে ওঠে।
অস্ট্রিয়া প্রথম এবং দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় উল্লেখযোগ্য পরিবর্তনের মধ্য দিয়ে গেছে, যা তার রাজনৈতিক পরিচিতির উপরে গভীর প্রভাব ফেলেছিল। অস্ট্রো-হাঙ্গেরি সাম্রাজ্যের ধ্বংস, অ্যানেক্সেশন এবং পরবর্তী দখল ইউরোপের রাজনৈতিক মানচিত্র পরিবর্তিত করতে এবং নতুন অস্ট্রিয়ান পরিচয় গঠনে সহায়ক হয়। কঠিন পরিণামের পরেও, অস্ট্রিয়া তার স্বাধীনতা পুনরুদ্ধার করতে এবং নিরপেক্ষতার পথে যেতে সক্ষম হয়, যা যুদ্ধের পরবর্তী সময়ের নীতির ভিত্তি হয়ে দাঁড়ায়।