তুর্কি প্রভাব এবং মরক্কোর উপনিবেশকরণ সময়কাল ষোড়শ থেকে বিশ শতক পর্যন্ত বিস্তৃত, যখন দেশটি তুর্কি সম্প্রসারণ এবং পরে ইউরোপীয় শক্তিগুলির উপনিবেশমূলক হস্তক্ষেপের মুখোমুখি হয়েছিল। এই সময়কালটি ইতিহাসের একটি বহুরূপী দিক ছিল, যা মরক্কোর রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক এবং সাংস্কৃতিক জীবনে উল্লেখযোগ্য প্রভাব রেখেছিল।
ষোড়শ শতকের শুরু থেকে তুর্কি সাম্রাজ্য উত্তর আফ্রিকায়, বিশেষ করে মরক্কোয় তাদের প্রভাব বিস্তৃত করতে শুরু করে। তুর্কি সুলতানরা অঞ্চলের বাণিজ্য পথ এবং সম্পদ নিয়ন্ত্রণ করার চেষ্টা করেছিল। তুর্কিদের প্রধান লক্ষ্য ছিল স্পেনীয় এবং পর্তুগীজদের প্রভাব প্রতিহত করা, যারা উত্তর আফ্রিকার উপকূলে নিজেদের প্রতিষ্ঠিত করার চেষ্টা করছিল।
১৫৩৬ সালে তুর্কি সুলতান সুলেيمان I মরক্কোর বিরুদ্ধে একটি যুদ্ধ অভিযান শুরু করেন। সুলতানি বাহিনী গুরুত্বপূর্ণ বন্দর দখল এবং অঞ্চলে তাদের প্রভাব বাড়ানোর চেষ্টা করেছিল। তবে স্থানীয় শাসকরা, বিশেষ করে সাআদী বংশ, তুর্কিদের আকাঙ্ক্ষার বিরুদ্ধে সফলভাবে প্রতিরোধ গড়ে তোলে।
ষোড়শ শতকের শুরুতে ক্ষমতায় আসা সাআদী বংশ তুর্কিদের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তোলার ক্ষেত্রে একটি মূল ভূমিকা পালন করে। তারা ক্ষমতা সংহত করতে সক্ষম হয় এবং মারাকেশ এবং ফেজের মতো কৌশলগত অঞ্চলে নিয়ন্ত্রণ পুনরুদ্ধার করে। তুর্কিদের হস্তক্ষেপের চেষ্টা সত্ত্বেও, সাআদীরা তাদের প্রভাব বাড়াতে এবং রাষ্ট্রের অভ্যন্তরীণ বিষয়গুলি উন্নত করতে থাকে।
উনিশ শতকের শেষ এবং বিশ শতকের শুরুতে মরক্কোর পরিস্থিতি জটিল হয়ে ওঠে। ইউরোপীয় দেশগুলো, বিশেষ করে ফ্রান্স এবং স্পেন, উত্তর আফ্রিকার উপনিবেশকরণে তৎপর হয়ে ওঠে। ১৯১২ সালে ফ্রান্স মরক্কোর সঙ্গে একটি চুক্তিতে স্বাক্ষর করে, যা প্রকৃতপক্ষে দেশটিকে একটি প্রোটেকটরেটে পরিণত করে।
১৯১২ সালে ফরাসি প্রোটেকটরেট প্রতিষ্ঠা মরক্কোর ইতিহাসে একটি গুরুত্বপূর্ণ মোড় হিসেবে দাঁড়ায়। ফ্রান্স দেশের বৈদেশিক নীতি এবং অর্থনীতির উপর নিয়ন্ত্রণ নেয়, যা স্থানীয় জনসংখ্যার অসন্তোষ সৃষ্টি করে।
ফরাসি প্রশাসন অবকাঠামো এবং অর্থনীতির আধুনিকীকরণের জন্য একটি সিরিজ সংস্কার চালু করতে শুরু করে। নতুন রাস্তা, রেলপথ এবং সেচ ব্যবস্থাগুলি নির্মিত হয়। তবে এই পদক্ষেপগুলি প্রায়ই স্থানীয় জনসাধারণের স্বার্থ উপেক্ষা করে, যার কারণে অসন্তোষ বৃদ্ধি পায়।
একই সময়ে স্পেন দেশের উত্তর ও দক্ষিণ অঞ্চলে, তেতুয়ান এবং কসাব্লাঙ্কার মতো শহরগুলি নিয়ন্ত্রণ করেছিল। ফরাসিদের মতো স্পেনীয় প্রশাসনও তাদের প্রশাসনিক অনুশাসনগুলি বাস্তবায়ন করার চেষ্টা করে, তবে মরক্কোর জনগণের প্রতিরোধের সম্মুখীন হয়।
উপনিবেশিক শাসনের সত্ত্বেও, মরক্কোতে প্রতিরোধ আন্দোলন গড়ে উঠছিল। বিশ শতকের শুরু থেকেই কিছু রাজনৈতিক দল এবং আন্দোলন প্রতিষ্ঠার চেষ্টা করে যা স্বাধীনতা এবং জাতীয় আত্মসচেতনতার পুনরুদ্ধারের লক্ষ্যে ছিল।
জাতীয়তাবাদী আন্দোলনগুলোর মধ্যে একটি হলো মরক্কোর স্বাধীনতা আন্দোলন, যা ১৯৩০-এর দশকে শুরু হয়। এ আন্দোলনের নেতাদের মধ্যে আমিন আল-হোসেইনি ছিলেন, যিনি মরক্কোর স্বাধীনতা পুনঃপ্রতিষ্ঠার আহ্বান জানিয়ে উপনিবেশিক শাসনের অবসানের দাবি জানান।
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর প্রতিরোধ সর্বাধিক উচ্চতায় পৌঁছায়, যখন আন্তর্জাতিক রাজনৈতিক পরিস্থিতি পরিবর্তনশীল হতে শুরু করে। সারা বিশ্বে অনেক উপনিবেশ স্বাধীনতার জন্য সংগ্রাম শুরু করে এবং মরক্কোও তার ব্যতিক্রম নয়।
১৯৫৬ সালে মরক্কো ফ্রান্স এবং স্পেন থেকে স্বাধীনতা অর্জন করে। এই ঘটনা মরক্কোর অধিকার এবং স্বাধীনতার জন্য দীর্ঘমেয়াদী লড়াইয়ের একটি চূড়ান্ত মুহূর্ত ছিল। স্বাধীনতা অর্জনের পর দেশটি নতুন রাজনৈতিক ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা এবং অর্থনৈতিক উন্নয়নের সাথে জড়িত চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন হয়।
তুর্কি প্রভাব এবং মরক্কোর উপনিবেশকরণের সময়কাল দেশে একটি গভীর ছাপ ফেলেছে। তুর্কি হস্তক্ষেপের প্রচেষ্টা এবং ইউরোপীয় উপনিবেশকরণ জাতীয় আত্মসচেতনতা এবং স্বাধীনতার জন্য সংগ্রামের গঠনকে উত্সাহিত করেছে। এই ঘটনাগুলি মরক্কোর ইতিহাসের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ হয়ে উঠেছে, যা আধুনিক উন্নয়নকে নির্ধারণ করেছে।