দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ (১৯৩৯-১৯৪৫) পোল্যান্ডের ইতিহাসে একটি গহীন ছাপ ফেলে গেছে। এটি ব্যাপক যুদ্ধের আর্কষণ এবং নির্মম দমন ও গণহত্যার স্থান ছিল। পোল্যান্ড, যা হামলার শিকার হওয়া প্রথম দেশের মধ্যে একটি, যুদ্ধের সমস্ত ভয়াবহতা অনুভব করেছে, যা তার জনসংখ্যা এবং সংস্কৃতিতে দুর্যোগজনক প্রভাব ফেলেছে।
পোল্যান্ডে আক্রমণ
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ শুরু হয় ১ সেপ্টেম্বর ১৯৩৯ সালে, যখন নাৎসি জার্মানি, সোভিয়েত ইউনিয়নের সাথে অ-আক্রমণ চুক্তি ভেঙে, পোল্যান্ডে আক্রমণ করে। এই আক্রমণটি "ব্লিট্জক্রিগ" নামে পরিচিত সামরিক কার্যক্রমের শুরু ছিল।
প্রযুক্তিগত শ্রেষ্ঠতা: জার্মান বাহিনী নতুন কৌশল এবং আধুনিক অস্ত্রশস্ত্র ব্যবহার করেছিল, যেমন ট্যাঙ্ক এবং বিমান, যা তাদের দ্রুত অগ্রসর হতে সাহায্য করেছিল।
পোলিশ সেনাবাহিনীর প্রতিরোধ: পোলিশ সেনাবাহিনী সাহসের সাথে যুদ্ধ করেছিল, তবে তাদের এ ধরনের শক্তিশালী আক্রমণের জন্য যথেষ্ট প্রস্তুতি ছিল না।
পোল্যান্ডের বিভাজন: ১৭ সেপ্টেম্বর ১৯৩৯ সালে সোভিয়েত ইউনিয়ন পোল্যান্ডের পূর্ব দিকে আক্রমণ করে মালতভ-রিবেন্ট্রপ প্যাক্টের গোপন প্রোটোকলের অধীনে।
পোল্যান্ডের দখল
পোল্যান্ড দখল করার পর, দেশটি নাৎসি জার্মানি এবং সোভিয়েত ইউনিয়নের মধ্যে বিভক্ত হয়ে যায়:
নাৎসি দখল: নাৎসিরা সন্ত্রাস এবং দমনের ভিত্তিতে এক কঠোর শাসন জারি করে। ৬ মিলিয়নেরও বেশি পোলিশ নাগরিক, তাদের মধ্যে ৩ মিলিয়ন ইহুদি, হলোকস্টের সময় হত্যা করা হয়েছিল।
সোভিয়েত দখল: পোল্যান্ডের পূর্বাঞ্চলে সোভিয়েত কর্তৃপক্ষও দমন-নিপীড়ন চালিয়ে যায়, হাজার হাজার মানুষকে গ্রেপ্তার ও বিতাড়িত করে, যার মধ্যে বুদ্ধিজীবী এবং জাতীয়তাবাদীরা অন্তর্ভুক্ত ছিলেন।
প্রতিরোধ: দখলের বিরুদ্ধে প্রতিক্রিয়া হিসাবে পোল্যান্ডে বিভিন্ন প্রতিরোধ গোষ্ঠী গড়ে উঠতে শুরু করে, যেমন আর্মিয়া ক্রায়োভা, যারা দখলদারদের বিরুদ্ধে লড়াই করত।
হলোকস্ট
হলোকস্ট দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় পোল্যান্ডের ইতিহাসে সবচেয়ে ট্রাজিক পাতাগুলির মধ্যে একটি হয়ে দাঁড়ায়:
এন্টি-সেমিটিক নীতি: নাৎসি শাসন ইহুদিদের ধারাবাহিকভাবে নির্মূল করার নীতি গ্রহণ করে, যা গেট্টো এবং গণনিধনের শিবিরগুলি তৈরির দিকে নিয়ে যায়, যেমন অশভিটজ এবং ট্রেবলিংকা।
ইহুদিদের প্রতিরোধ: নির্মম অবস্থার বিরুদ্ধে, ইহুদি সংগঠন এবং প্রতিরোধ গোষ্ঠী তাদের সহগোত্রীদের রক্ষা করার চেষ্টা করে।
যুদ্ধ পরবর্তী: যুদ্ধের পরে, পোলিশ ইহুদি জনসংখ্যা প্রায় সম্পূর্ণরূপে ধ্বংস হয়ে যায়, এবং যারা বেঁচে আছেন তারা আঘাত এবং ক্ষতির দুঃখভোগ করেন।
গোপন প্রতিরোধ
পোল্যান্ডের গোপন আন্দোলন দখলবিরোধী সংগ্রামের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ হয়ে ওঠে:
আর্মিয়া ক্রায়োভা: প্রতিরোধের একটি প্রধান সংগঠন ছিল আর্মিয়া ক্রায়োভা, যারা গেরিলা অপারেশন এবং গোয়েন্দা তথ্য সংগ্রহ করত।
কস্টউস্কো: ১৯৪৪ সালে ওয়ারসাও বিদ্রোহ শুরু হয়, যখন আর্মিয়া ক্রায়োভা নাৎসিদের থেকে রাজধানী মুক্ত করার চেষ্টা করেছিল, কিন্তু বিদ্রোহটি বড় ক্ষতির সাথে দমন করা হয়।
মিত্রদেশগুলির সাহায্য: গোপন বাহিনী মিত্রদেশগুলির সাহায্য পেয়েছিল, তবে এটি উল্লেখযোগ্য সাফল্য অর্জনের জন্য যথেষ্ট ছিল না।
উদ্ধার এবং যুদ্ধের পরিণতি
পোল্যান্ড ১৯৪৫ সালে নাৎসি দখল থেকে মুক্তি পায়, তবে এই মুক্তি ছিল মিথ্যা:
সোভিয়েত দখল: মুক্তির সাথে নতুন একটি দখল আসে - এবার সোভিয়েত। পোল্যান্ড সোভিয়েত ইউনিয়নের প্রভাবের অংশ হয়ে যায় এবং তার স্বাধীনতা হারায়।
জনসংখ্যার ক্ষতি: যুদ্ধ প্রায় ৬ মিলিয়ন পোলিশ নাগরিকের জীবন কেড়ে নিয়েছে, যা জনসংখ্যার প্রায় ২০%।
অর্থনৈতিক পরিণতি: দেশটি বিধ্বস্ত হয়ে যায়, এবং যুদ্ধ পরবর্তীকালে অর্থনীতির পুনর্গঠনে উল্লেখযোগ্য প্রচেষ্টার প্রয়োজন হয়।
উপসংহার
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ পোল্যান্ডের মাটিতে গভীর ক্ষতের ছাপ ফেলেছে। লোকজনের ক্ষতি, কষ্ট এবং ধ্বংসাবশেষ, যা তারা সহ্য করেছে, এখনো যুদ্ধের স্মৃতি এবং দেশের পরিচয়কে প্রভাবিত করে। পোল্যান্ড, যদিও নাৎসি দখল থেকে মুক্তি পেয়েছে, কিন্তু নতুন একটি হুমকির তলে পড়ে - সোভিয়েত নিয়ন্ত্রণ, যা দেশটিকে যুদ্ধ পরবর্তী দশকগুলিতে প্রতিবন্ধকতার মুখোমুখি করেছিল।