জোহান কেপলার (১৫৭১-১৬৩০) হলেন একজন উল্লেখযোগ্য জার্মান জ্যোতির্বিজ্ঞানী, গণিতশাস্ত্রী এবং জ্যোতিষী, যিনি জ্যোতির্বিদ্যার ক্ষেত্রে তাঁর বিপ্লবী আবিষ্কারের জন্য পরিচিত। তিনি আকাশীয় যান্ত্রিকতার প্রতিষ্ঠাতা এবং প্রথমদের মধ্যে একজন যিনি বৈজ্ঞানিকভাবে মহাকর্ষের আইনকে প্রতিষ্ঠিত করেন।
কেপলার ১৫৭১ সালের ২৭ ডিসেম্বর স্টুটগার্টে একটি প্রটেস্ট্যান্ট পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতা ছিলেন একজন সৈনিক এবং মাতা গৃহকর্মে নিযুক্ত ছিলেন। শৈশবকাল থেকেই কেপলার বিজ্ঞান, বিশেষ করে গণিত ও জ্যোতির্বিজ্ঞান নিয়ে আগ্রহী ছিলেন। তিনি টুবিঙ্গেন বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করেন, যেখানে তাঁর শিক্ষাগুরু ছিলেন বিশিষ্ট জ্যোতির্বিজ্ঞানী মাইকেল মেসলিন।
১৫৯৪ সালে কেপলার বিখ্যাত ড্যানিশ জ্যোতির্বিজ্ঞানী টিকো ব্রাহে’র সহকারী হিসেবে কাজ শুরু করেন, যিনি গ্রহের গতি সম্পর্কিত বিস্তৃত পর্যবেক্ষণ সংগ্রহ করেছেন। ১৬০১ সালে ব্রাহের মৃত্যুর পরে, কেপলার তাঁর তথ্যের উত্তরাধিকারী হন এবং গ্রহগুলির গতি বিশ্লেষণ করতে কাজ চালিয়ে যেতে থাকেন।
জ্যোতির্বিদ্যার ক্ষেত্রে কেপলারের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অবদান হলো তাঁর গ্রহগুলির গতি সম্পর্কিত তিনটি আইন:
কেপলার শুধু জ্যোতির্বিদ্যা নিয়ে কাজ করেননি, বরং দার্শনিকতার ক্ষেত্রেও। তিনি বিশ্বাস করতেন যে, মহাবিশ্ব একটি দিভ্য পরিকল্পনার অধীনে গঠিত হয়েছে এবং গণিত হলো সেই ভাষা যার দ্বারা এই পরিকল্পনাটি বোঝা যায়। কেপলার আরও বিশ্বাস করতেন যে প্রকৃতির অধ্যয়ন ঈশ্বরের নিকটে পৌঁছাতে সাহায্য করে।
"গণিত হলো মহাবিশ্ব বোঝার চাবি।" — জোহান কেপলার
১৬১২ সালে কেপলার লিনজে চলে যান, যেখানে তিনি তাঁর গবেষণা চালিয়ে যান। তিনি অনেক কাজ প্রকাশ করেন, যার মধ্যে রয়েছে "নতুন জ্যোতির্বিজ্ঞান" এবং "বিশ্বের সমাহার"। ১৬৩০ সালে তিনি অসুস্থ হয়ে পড়েন এবং ১৫ নভেম্বর মৃত্যুবরণ করেন।
কেপলারের উত্তরাধিকার বিশাল। তাঁর আইন ভবিষ্যতের জ্যোতির্বিদ্যার আবিষ্কারের ভিত্তি হয়ে দাঁড়ায়, নিউটনের পদার্থবিদ্যার কাজগুলোসহ। কেপলার বৈজ্ঞানিক জ্যোতির্বিজ্ঞান প্রতিষ্ঠার অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা এবং বিজ্ঞান বিকাশে উল্লেখযোগ্য প্রভাব ফেলেছেন।
জোহান কেপলার হলেন একজন চরিত্র যিনি চিরকাল বিজ্ঞান ইতিহাসে স্থান করে নিবেন। তাঁর কাজগুলি পরবর্তী প্রজন্মের বিজ্ঞানীদের জন্য ভিত্তি হিসেবে কাজ করেছে এবং মহাবিশ্বকে বোঝার নতুন দিগন্ত উন্মোচন করেছে। কেপলার শুধুমাত্র একজন জ্যোতির্বিজ্ঞানী নন, বরং একজন দার্শনিক যিনি পৃথিবীর সেতুবন্ধন উপলব্ধি করতে চেয়েছেন।