আর্মেনিয়ার স্বাধীনতা 21 সেপ্টেম্বর 1991 সালে ঘোষিত হয়েছিল, যা সুদূরপ্রসারী প্রক্রিয়ার ফলস্বরূপ শুরু হয়েছিল সোভিয়েত ইউনিয়নে পরিবর্তন এবং গ্লাসনস্টের মাধ্যমে। এই গুরুত্বপূর্ণ ঐতিহাসিক মুহূর্তটি আর্মেনিয়ায় দীর্ঘ সময়ের সোভিয়েত নিয়ন্ত্রণের সমাপ্তি ঘোষণা করে এবং আর্মেনীয় জনগণের জন্য তাদের নিজস্ব রাষ্ট্র নির্মাণের সুযোগ প্রদান করে। এই নিবন্ধে স্বাধীনতা অর্জনের পর থেকে আধুনিক সময় পর্যন্ত আর্মেনিয়ার মুখোমুখি হওয়া প্রধান পদক্ষেপ, সাফল্য এবং চ্যালেঞ্জগুলি আলোচনা করা হয়েছে।
আর্মেনিয়ায় সোভিয়েত ক্ষমতার শেষের শুরু ঘটে 1980-এর দশকের শেষদিকে, যখন গ্লাসনস্ট এবং পরিবর্তন জাতীয় প্রশ্ন নিয়ে আলোচনা করার জন্য দরজা খুলে দেয়। 1988 সালে নাগর্নো-কারাবাখ স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চল আর্মেনিয়ার সাথে যুক্ত হওয়ার ঘোষণা দেয়, যা আজারবাইজানের সাথে জাতিগত সংকলনের কারণ হয়ে দাঁড়ায়। এই পরিস্থিতিটি জাতীয়তাবাদী মনোভাব বাড়িয়ে তোলে এবং আর্মেনীয় সমাজকে অধিক স্বায়ত্তশাসন এবং অবশেষে স্বাধীনতার দাবি করতে উদ্বুদ্ধ করে।
16 ডিসেম্বর 1989 সালে স্বাধীনতার পক্ষে প্রথম প্রতিবাদ কর্মসূচি অনুষ্ঠিত হয় এবং 23 আগস্ট 1990 সালে আর্মেনিয়া সোভিয়েত ইউনিয়নের থেকে স্বাধীনতা ঘোষণা করে। 21 সেপ্টেম্বর 1991 সালে একটি গণভোটের মাধ্যমে বাস্তব স্বাধীনতা চূড়ান্তভাবে নিশ্চিত করা হয়, যেখানে 99% এর বেশি ভোটার স্বাধীনতার পক্ষে ভোট দেন। এই ঘটনা দেশের ইতিহাসে একটি মাইলফলক হয়ে দাঁড়ায়।
তবে স্বাধীন রাষ্ট্রের গঠনের প্রক্রিয়া সহজ ছিল না। 1990-এর দশকের শুরুতে আর্মেনিয়া গৃহযুদ্ধ, অর্থনৈতিক সংকট এবং নাগর্নো-কারাবাখে সংঘাতের মুখোমুখি হয়। 1988 সালে নাগর্নো-কারাবাখের জন্য আজারবাইজানের সাথে শুরু হওয়া যুদ্ধ 1994 সাল পর্যন্ত চলেছিল এবং এতে উল্লেখযোগ্য মানবিক ক্ষতি ও ধ্বংসের সৃষ্টি হয়।
দেশের অর্থনীতিও গুরুতর চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হয়েছিল। সোভিয়েত অর্থনীতি ধস, আজারবাইজান এবং তুরস্কের পক্ষ থেকে অবরোধ, এবং প্রয়োজনীয় অবকাঠামোর অভাব পরিস্থিতিকে আরও সংকটগ্রস্ত করে তোলে। আর্মেনিয়া একটি সংকটে পড়ে, উচ্চতর মুদ্রাস্ফীতি এবং বেকারের বৃদ্ধির সাথে। 1993 সালে অর্থনৈতিক সংস্কারের শুরু হয়েছিল, যার লক্ষ্য ছিল অর্থনীতি পুনরুদ্ধার এবং বিশ্ব অর্থনীতিতে সংহতীকরণ।
1991 সালে আর্মেনিয়া তার প্রথম সংবিধান গ্রহণ করে, যা দেশের গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র ঘোষণা করে। তবে গণতন্ত্রীকরণের প্রক্রিয়া জটিল ছিল। রাজনৈতিক জীবন উচ্চ পর্যায়ের অস্থিতিশীলতা এবং বিভিন্ন রাজনৈতিক শক্তির হস্তক্ষেপ দ্বারা চিহ্নিত ছিল। 1995 সালের প্রথম নির্বাচনে রবার্ট কোচেয়ারের জয়লাভ হয়, কিন্তু নির্বাচনে তহবিলের সমস্যাগুলি এবং জালিয়াতির অভিযোগ হয়।
1998 সালে দেশে আবার নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয় এবং লেভন তের-পেট্রোসিয়ান ক্ষমতায় আসেন। তার শাসনে গণতন্ত্র এবং বাজার অর্থনীতির উন্নয়নের জন্য অনেক সংস্কার গৃহীত হয়, তবে অভ্যন্তরীণ সংঘাত এবং সামাজিক অস্বস্তির কারণে 1999 সালে তার পদত্যাগ ঘটে।
2000-এর দশকের শুরুতে আর্মেনিয়া সক্রিয় অর্থনৈতিক সংস্কারের উদ্যোগ গ্রহণ করে। নতুন প্রেসিডেন্ট রবার্ট কোচেয়ারের নেতৃত্বে রাষ্ট্রের উদ্যোগের বৈশ্বিক উদ্ভাবন, অর্থনীতির মুক্তি এবং বিদেশী বিনিয়োগের আকর্ষণ হয়। এর ফলে দেশে উল্লেখযোগ্য অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ঘটে, বিশেষ করে আইটি এবং কৃষিক্ষেত্রে।
আর্মেনিয়া আন্তর্জাতিক সম্পর্কের ক্ষেত্রেও সক্রিয় ছিল, পশ্চিমে সংযোগ স্থাপনের এবং আন্তর্জাতিক সংগঠনে সংহত করার প্রচেষ্টা ছিল। 2001 সালে আর্মেনিয়া বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার সদস্য হয় এবং 2015 সালে ইউরেশিয়ান অর্থনৈতিক ইউনিয়ন প্রতিষ্ঠার চুক্তিতে স্বাক্ষর করে। তবে প্রতিবেশী দেশগুলির সাথে, বিশেষ করে তুরস্ক এবং আজারবাইজানের সাথে সম্পর্ক এখনও অব্যাহত রয়েছে অমীমাংসিত সংঘাতের কারণে।
সাফল্য সত্ত্বেও, আর্মেনিয়া কয়েকটি গুরুতর চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হয়। রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা, দুর্নীতি এবং অর্থনৈতিক সমস্যা এখনও বিদ্যমান। 2015 সালে বিদ্যুৎ ট্যারিফ বৃদ্ধির বিরুদ্ধে ব্যাপক প্রতিবাদ শুরু হয়, যা সমাজে অসন্তোষ বৃদ্ধির চিত্র তুলে ধরে।
2018 সালে একটি "ভেলভেট বিপ্লব" ঘটে, যার ফলে প্রধানমন্ত্রী হন নিকোল পাশিনিয়ান। তিনি দুর্নীতির বিরুদ্ধে লড়াই এবং অর্থনীতির উন্নতির উদ্দেশ্যে বেশ কিছু সংস্কার চালান, যা দেশের মধ্যে ইতিবাচক পরিবর্তন ঘটায়। তবে এখনও অনেক সমস্যা রয়ে গেছে, যেমন জনসংখ্যার অভিবাসন, উচ্চ বেকারত্ব এবং নাগর্নো-কারাবাখের সংঘাত সমাধানের প্রয়োজন।
নাগর্নো-কারাবাখ সংঘাত আর্মেনিয়ার জন্য অন্যতম জটিল এবং বেদনাদায়ক বিষয়। দীর্ঘ আলোচনার পরও, নাগর্নো-কারাবাখের পরিস্থিতি এখনও উত্তপ্ত। 2020 সালে সংঘাত আবারও তীব্র হয়, যা উভয় পক্ষের মধ্যে ব্যাপক সামরিক কার্যকলাপ এবং উল্লেখযোগ্য ক্ষতির দিকে নিয়ে যায়। আগ্নেয়াস্ত্র বিরতি রাশিয়ার মাধ্যমে অর্জিত হলেও, সংঘাতের দীর্ঘমেয়াদী সমাধান এখনও অভাব।
আধুনিক সময়ে আর্মেনীয় সংস্কৃতি সক্রিয়ভাবে বিকশিত হচ্ছে। আর্মেনীয়রা তাদের সমৃদ্ধ ঐতিহ্যে গর্বিত, যা সঙ্গীত, নৃত্য, চিত্রকলা এবং স্থাপত্য অন্তর্ভুক্ত করে। দেশে আর্মেনীয় শিল্প এবং ঐতিহ্যের প্রচারে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, উৎসব এবং প্রদর্শনী অনুষ্ঠিত হয়।
শিক্ষা এখনও অগ্রাধিকারের কেন্দ্রবিন্দুতে থাকে। আর্মেনিয়া তার শিক্ষা ব্যবস্থা উন্নত করার জন্য চেষ্টা করছে, যাতে অর্থনীতির জন্য যোগ্য জনশক্তি তৈরি করা যায়। গবেষণার ক্ষেত্রে, বিশেষ করে আইটি তে, আরও জনপ্রিয় হচ্ছে, যা দেশে উচ্চ প্রযুক্তির উন্নয়নে সহায়ক হচ্ছে।
আর্মেনিয়ার স্বাধীনতা এবং আধুনিকতা হল জটিল পরিবর্তন এবং চ্যালেঞ্জের সময়, কিন্তু এটি উজ্জ্বল ভবিষ্যতের আশা নিয়ে আসে। দেশ গণতন্ত্রের উন্নয়ন, জীবনযাত্রার মানের উন্নতি এবং আন্তর্জাতিক অবস্থানকে শক্তিশালী করার চেষ্টা করে চলেছে। কষ্ট সত্ত্বেও, আর্মেনীয় জাতি তাদের পরিচয় এবং সংস্কৃতি বজায় রেখেছে, যা আর্মেনিয়াকে একটি সমৃদ্ধ ঐতিহাসিক ঐতিহ্য নিয়ে একটি অনন্য দেশে পরিণত করে।