বেলারুশের রাষ্ট্রীয় প্রতীকগুলির মধ্যে আছে প্রতীক, পতাকা এবং গীত। এসব প্রতীক শুধু আন্তর্জাতিক মঞ্চে রাষ্ট্রকে উপস্থাপন করে না, বরং এর ইতিহাস, সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যকেও প্রতিফলিত করে। বেলারুশের রাষ্ট্রীয় প্রতীকগুলির ইতিহাস বহুমাত্রিক এবং এর শেকড় গভীর অতীতে, ইতিহাসের পরিস্থিতি ও রাজনৈতিক বাস্তবতার ওপর নির্ভর করে পরিবর্তিত হয়েছে।
প্রথম প্রতীক, যা বেলারুশীয় জনগণের সঙ্গে সম্পর্কিত ছিল, ১৪শ শতকে পপথ এবং 'পোগনিয়া' নামে পরিচিত। এটি একটি রণক্ষেত্রে যোদ্ধাকে প্রকাশ করেছিল, যা প্রযুক্তির সুরক্ষা এবং স্বাধীনতা সংগ্রামের প্রতীক। এই প্রতীকটি লিথুয়ানিয়ার মহান княশাসনে ব্যবহৃত হয়েছিল এবং এটি বেলারুশীয়দের পরিচয়ের একটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান হয়ে দাঁড়িয়ে।
আধুনিক বেলারুশের প্রতীকটি ১৯৯৫ সালে গৃহীত হয়েছে। এতে কৃষি এবং শিল্পের প্রতীক হিসেবে উপাদান আছে, এবং একটি সোনালী তারা যা স্বরাষ্ট্রীকরণের প্রতিনিধি। প্রতীকের চারপাশে গম ও ফসলের মালা রয়েছে, যা দেশের কৃষি ঐতিহ্যকে তুলে ধরে। প্রতীকের কেন্দ্রে বেলারুশের একটি মানচিত্র চিত্রিত, যা রাষ্ট্রের আঞ্চলিক ঐক্যকে তুলে ধরে।
বেলারুশের পতাকাও একটি সমৃদ্ধ ইতিহাস বহন করে। পতাকার প্রথম উল্লেখ ১৬শ শতকের, যখন বিভিন্ন সাদা-লাল-সাদা পতাকার রকমভেদ ব্যবহার করা হত, যা বেলারুশীয় জাতীয় আন্দোলনের প্রতীক হয়ে উঠেছিল। ১৯৯৫ সালে আধুনিক পতাকার সংস্করণ গৃহীত হয়, যা দুটি অনুভূমিক রেখা নিয়ে গঠিত: একটি লাল এবং একটি সবুজ, বাঁ দিকে সাদা-লাল নকশা।
লাল রং স্বাধীনতার জন্য ঝরিত রক্তকে চিহ্নিত করে, এবং সবুজ প্রকৃতি ও সমৃদ্ধিকে। পতাকায় সাদা-লাল নকশা লোককাহিনী এবং শিল্পের দিকে নির্দেশ করে, বেলারুশের সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের সঙ্গে সংযোগকে তুলে ধরে।
রাষ্ট্রীয় গীতটি বেলারুশেরও কয়েকটি পরিবর্তনের মধ্যে দিয়ে গেছে। প্রথম গীতটি ১৯৫৫ সালে গৃহীত হয় এবং এতে সমাজতান্ত্রিক ভাবধারা ছিল। আধুনিক গীতটি ২০০২ সালে গৃহীত হয়, এবং তার বাণী বেলারুশীয় জনগণের স্বাধীনতা এবং স্বকীয়তার প্রতি উৎসর্গ করা হয়েছে। গীতের সঙ্গীত রচনার কাজ করেছেন সঙ্গীতজ্ঞ নেস্টর সাকালস, এবং বাণী কবি ইগর লিসকোভ।
গীতটি বেলারুশের ভূমি, তার সৌন্দর্য এবং জনগণকে গায়, দেশের প্রতি গর্ব অনুভব করে। এটি ঐক্য এবং দেশপ্রেমের প্রতীক হিসেবে কাজ করে, ভালো ভবিষ্যতের লক্ষ্যে মানুষকে একত্রিত করে।
বেলারুশের প্রতীকগুলি ইতিহাসের পরিস্থিতির ওপর নির্ভর করে পরিবর্তিত হয়েছে। যখন বেলারুশ সোভিয়েত ইউনিয়নের অংশ ছিল, তখন দেশের প্রতীক ও পতাকা সমাজতান্ত্রিক আদর্শগুলো প্রতিফলিত করেছিল। ১৯৯১ সালে স্বাধীনতা পাওয়ার পর জাতীয় প্রতীকগুলির পুনরুজ্জীবনের প্রক্রিয়া শুরু হয়, যা বেলারুশীয় জাতীয় পরিচয়ের পুনরুত্থানের সঙ্গে যুক্ত।
১৯৯০-এর দশকে সোভিয়েত প্রতীক থেকে ঐতিহ্যবাহী বেলারুশীয় প্রতীকগুলির দিকে অগ্রসর হতে দেখা যায়, যা জাতীয় স্বাধিকারের নতুন রূপগুলির অনুসন্ধানের সঙ্গে যুক্ত ছিল। 'পোগনিয়া' প্রতীক এবং সাদা-লাল-সাদা পতাকায় ফিরে আসা এই প্রক্রিয়ার অংশ ছিল, কিন্তু ১৯৯৫ সালে নতুন প্রতীকগুলো গৃহীত হয়েছিল, যা দেশের আধুনিক অবস্থাকে তুলে ধরে।
বেলারুশের রাষ্ট্রীয় প্রতীকগুলির ইতিহাস কেবল পতাকা, প্রতীক এবং গীতের ইতিহাস নয়, বরং এটি জনগণের ইতিহাস, তাদের আকাঙ্ক্ষা এবং স্বাধীনতার জন্য সংগ্রামের ইতিহাস। এই প্রতীকগুলো বেলারুশীয়দের জীবনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে, দেশের সমৃদ্ধ ঐতিহ্য এবং অনন্য সংস্কৃতির কথা স্মরণ করিয়ে দেয়। তারা জাতীয় পরিচয় এবং জনগণের ঐক্যের ভিত্তি গঠন করে, এবং সেইসঙ্গে ঐতিহাসিক ঘটনাবলী এবং মূল্যবোধকে প্রতিফলিত করে, যা আধুনিক রাষ্ট্র গঠনে গুরুত্বপূর্ণ ছিল।