দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ ফিলিপাইনের উপর ব্যাপক প্রভাব ফেলেছিল, যা দেশের ইতিহাসে একটি গুরুত্বপূর্ণ সময়ে পরিণত হয়েছিল। যুদ্ধটি গুরুতর ধ্বংস, মানবিক প্রাণহানি এবং ফিলিপাইনের ভবিষ্যত উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে, স্বাধীনতার দিকে যাত্রার সূচনা করেছিল। ১৯৪২ থেকে ১৯৪৫ সালের মধ্যে জাপানি দখল ফিলিপিনোদের স্মৃতিতে গভীর দাগ ফেলেছিল, যা দেশের ন্যাশনাল সংস্কৃতি এবং রাজনীতিতে প্রতিফলিত হয়েছিল।
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের শুরুতে ফিলিপাইন একটি মার্কিন উপনিবেশ ছিল এবং ইতিমধ্যেই ১৯৪৬ সালে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের দ্বারা প্রতিশ্রুত স্বাধীনতার জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছিল। এশিয়া-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে বাড়তে থাকা চাপের মধ্যে ফিলিপাইনকে একটি কৌশলগত গুরুত্বপূর্ণ অঞ্চল হিসেবে দেখা হচ্ছিল। যখন জাপান এশিয়ায় তার প্রভাব বাড়াতে শুরু করেছিল, মার্কিন সামরিক বাহিনী সম্ভাব্য ফিলিপাইন রক্ষার জন্য প্রস্তুতি নিতে শুরু করেছিল।
৭ ডিসেম্বর ১৯৪১ সালে পার্ল হার্বরে জাপানি আক্রমণ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং জাপানের মধ্যে সামরিক সংঘাতের সূচনা করেছিল। ৮ ডিসেম্বরেই জাপানি সেনা ফিলিপাইন তে আক্রমণের সূচনা করে, যা মুখ্য শহর এবং কৌশলগত স্থানে হামলা করে। কয়েক সপ্তাহের মধ্যে, জাপানি বাহিনী প্রধান শহরগুলো দখল করে এবং আমেরিকান এবং ফিলিপিনো সেনাদের ব্যাটান উপদ্বীপ এবং কল্পরিহিদর দ্বীপে ঠেলে দেয়। ফিলিপিনো এবং আমেরিকান বাহিনীর তীব্র প্রতিরোধ এপ্রিল ১৯৪২ পর্যন্ত চলতে থাকে, যখন তারা জাপানি বাহিনীর চাপের কাছে আত্মসমর্পণ করতে বাধ্য হয়।
ফিলিপাইন নিয়ন্ত্রণ স্থাপন করার পর জাপানীরা "স্বাধীন" ফিলিপিনো রাষ্ট্র গঠনের ঘোষণা করে এবং একটি পুতুল সরকার গঠন করে, যেটির নেতৃত্ব দেন হোসে লরেল। এই সরকার আনুষ্ঠানিকভাবে স্বাধীনতা ঘোষণা করেছিল, তবে পুরোপুরি জাপানি নিয়ন্ত্রণে ছিল। জাপানীরা দেশের প্রাকৃতিক সম্পদগুলি ব্যবহার করতে এবং জনগণকে জাপানি অর্থনৈতিক অঞ্চলে নিয়ে আসতে চেয়েছিল, কিন্তু স্থানীয়রা উল্লেখযোগ্য প্রতিরোধ দেখায়। এর প্রতিক্রিয়ায় ফিলিপিনো গেরিলা বাহিনী জাপানি দখলদারের বিরুদ্ধে প্রতিরোধে সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করে।
ফিলিপাইনগুলিতে গেরিলা আন্দোলন জাপানি দখলের বিরুদ্ধে প্রতিরোধের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ হয়ে ওঠে। প্রতিরোধ বিভিন্ন সংগঠন নিয়ে গঠিত ছিল, যার মধ্যে সেনাবাহিনীর ইউনিট এবং সাধারণ জনগণ অন্তর্ভুক্ত ছিল। সবচেয়ে পরিচিত প্রতিরোধ গোষ্ঠী ছিল "হুকবালাহাপ" ("অ্যান্টি-জাপানি পিপলস আর্মি"), যা ফিলিপিনো কৃষক এবং কমিউনিস্টদের নিয়ে গঠিত ছিল। গেরিলারা জাপানি বাহিনীর উপর হামলা পরিচালনা করত এবং আমেরিকান বাহিনীর সাথে সহযোগিতা করত, তাদের জাপানির অবস্থান সম্পর্কে তথ্য পেতে সাহায্য করত।
জাপানি দখলদারের পক্ষ থেকে পরিচালিত নির্মম ব্যবস্থা প্রতিরোধকে আরও শক্তিশালী করেছিল। দেশের জনগণ গেরিলাদের খাবার এবং অন্যান্য সম্পদ সরবরাহ করেছিল, এবং আশ্রয়ও প্রদান করেছিল। এই কাজগুলো একটি শক্তিশালী প্রতিরোধ ব্যবস্থার গঠন করে, যা দখলের সময়কাল জুড়ে জনগণের যুদ্ধের মনোবল সমর্থন করেছিল।
১৯৪৪ সালের অক্টোবর মাসে ফিলিপাইন মুক্তিযুদ্ধের অভিযান শুরু হয়, যখন আমেরিকান বাহিনী জেনারেল ডগলাস ম্যাকআর্থারের নেতৃত্বে লেইত দ্বীপে অবতরণ করে। এই ঘটনা আর্কিপেলাগোর মুক্তির জন্য একটি বৃহৎ অভিযানের সূচনা করেছিল। ১৯৪৫ সালের জানুয়ারিতে আমেরিকানরা রাজধানী ম্যানিলা নিয়ন্ত্রণ পুনঃপ্রতিষ্ঠা করে, যা যুদ্ধের সময় মারাত্মকভাবে ধ্বংস হয়েছিল। ফিলিপাইনগুলি চূড়ান্তভাবে ১৯৪৫ সালের গ্রীষ্মে মুক্ত হয়।
জেনারেল ডগলাস ম্যাকআর্থার ফিলিপাইনগুলিকে জাপানি দখলের থেকে মুক্ত করার একটি প্রতীকে পরিণত হন। ১৯৪২ সালে তিনি ফিলিপাইন ত্যাগ করতে বাধ্য হয়েছিলেন, কিন্তু ফিরে আসার শপথ নিয়েছিলেন। তার বিখ্যাত বাক্য "আমি ফিরে আসব" ফিলিপিনোদের মধ্যে আশার স্লোগানে পরিণত হয়েছিল। ১৯৪৪ সালে ম্যাকআর্থারের ফিরে আসা ফিলিপিনোদের জয়ের প্রতি বিশ্বাসকে দৃঢ়তর করে। তার নেতৃত্বে গুরুত্বপূর্ণ অভিযান পরিচালিত হয়, যা দেশের চূড়ান্ত মুক্তির দিকে নিয়ে যায়।
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ ফিলিপাইনগুলির উপর বিশাল প্রভাব ফেলেছিল। যুদ্ধের কর্মযজ্ঞ, জাপানি দখল এবং মুক্তি উল্লেখযোগ্য ধ্বংসের কারণ হয়েছিল। ম্যানিলা, যা আগে "পূর্বের মুক্তা" নামে পরিচিত ছিল, তা ধ্বংসপ্রাপ্ত অবস্থায় ছিল, এবং এর বাসিন্দারা যুদ্ধের কর্মযজ্ঞ এবং জাপানি দখলদারের পক্ষ থেকে দমন পীড়নের দ্বারা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল। অনেক ফিলিপিনো তাদের বাড়ি হারিয়েছিল এবং দেশের অর্থনীতি সম্পূর্ণভাবে ধ্বংস হয়েছিল।
কিন্তু যুদ্ধ জাতীয় পরিচয় এবং সম্পূর্ণ স্বাধীনতার জন্য প্রচেষ্টার একটি শক্তিশালী প্রণোদনা স্পষ্ট করেছিল। জাপানি দখলের নির্মমতা এবং ফিলিপিনো গেরিলাদের বীরত্ব ফিলিপিনো জনগণের সংকল্পের একটি প্রতীক হয়ে উঠেছিল। এই ঘটনা ফিলিপাইন এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে সম্পর্ক দৃঢ় করে, যারা যুদ্ধের পরে দেশে পুনর্গঠন প্রক্রিয়ায় সক্রিয়ভাবে সহায়তা করেছিল।
যুদ্ধ শেষ হওয়ার পর, ফিলিপাইনগুলি স্বাধীনতার জন্য প্রস্তুতি অব্যাহত রেখেছিল, যা ৪ জুলাই ১৯৪৬ সালে আনুষ্ঠানিকভাবে প্রদান করা হয়। জাপানি দখল এবং ফিলিপিনোদের সক্রিয় প্রতিরোধ দেশের রাজনৈতিক জীবনে একটি দাগ ফেলেছিল। জাতীয় গর্ব এবং যুদ্ধের নায়কদের প্রতি শ্রদ্ধা গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানগুলিকে শক্তিশালী করতে সহায়তা করেছিল। যুদ্ধ সামাজিক ন্যায় এবং সংস্কারের বিষয়ে আগ্রহ বৃদ্ধি করেছে, বিশেষ করে গ্রামীণ জনগণের এবং গেরিলা আন্দোলনের জাতীয়তাবাদীদের মধ্যে।
আজ ফিলিপাইনগুলিতে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ, এর শিকার এবং নায়কদের স্মরণ করা হয়। ম্যানিলা এবং দেশের অন্যান্য শহরে নিহত এবং প্রতিরোধের অংশগ্রহণকারীদের জন্য স্মৃতিস্তম্ভ স্থাপন করা হয়। যুদ্ধের গেরিলারা এখনও সম্মানিত চরিত্র হিসেবে রয়ে গেছে, এবং ফিলিপিনোদের জাপানি দখলের বিরুদ্ধে প্রতিরোধের ইতিহাস স্কুলে শেখানো হয় এবং দেশের সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ।
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের প্রভাব ফিলিপাইনগুলির ইতিহাসের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ হয়ে রয়েছে। যুদ্ধ এবং দখলের অভিজ্ঞতা একটি প্রজন্ম তৈরি করেছে, যার জন্য স্বাধীনতা এবং মুক্তির সংগ্রাম প্রধান লক্ষ্য হয়ে ওঠে। সেই সময়ের ঘটনার স্মৃতি জাতীয় ঐক্য এবং পিতৃতন্ত্রকে শক্তিশালী করতে একটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান হয়ে দাঁড়িয়েছে, যা ভবিষ্যতের ফিলিপিনোদের জন্য অতীত এবং বর্তমানের মধ্যে ঐতিহাসিক সম্পর্ক রক্ষা করতে সাহায্য করে।