জর্ডানের ম্যান্ডেটকাল, যা প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পরে শুরু হয়, দেশটির ইতিহাসে একটি গুরুত্বপূর্ণ পর্ব হয়ে দাঁড়ায়, যা তার ভবিষ্যত উন্নয়ন এবং জাতীয় পরিচয় গঠনে প্রভাব ফেলে। এই সময়টি উপনিবেশিক শাসন, রাজনৈতিক পরিবর্তন এবং স্বাধীনতার জন্য সংগ্রামের দ্বারা চিহ্নিত হয়, যা 20 শতকের মাঝামাঝি একটি স্বাধীন দেশ জর্ডানের প্রতিষ্ঠার দিকে পরিচালিত করে।
প্রথম বিশ্বযুদ্ধের ফলস্বরূপ ওসমান সাম্রাজ্যের পতনের পর, ব্রিটেন এবং ফ্রান্স মধ্যপ্রাচ্যের প্রাক্তন ওসমানী অঞ্চলগুলোর উপর নিয়ন্ত্রণ ভাগাভাগি করে। 1920 সালে প্যারিসের শান্তি সম্মেলনে ম্যান্ডেট প্রতিষ্ঠার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়, যা স্থানীয় জনগণের স্বাধীনতার জন্য সময়োপযোগী শাসন এবং প্রস্তুতি নিশ্চিত করার লক্ষ্যে ছিল।
জর্ডান ব্রিটিশ ম্যান্ডেটের একটি অংশ ছিল, যা প্যালেস্টাইনকেও অন্তর্ভুক্ত করেছিল। ব্রিটিশ শাসন 1921 সালে শুরু হয়, যখন ট্রান্সজর্ডানীয় এলাকা প্যালেস্টাইন থেকে আলাদা করা হয় এবং শেখ আবদাল্লা বিন হুসেন প্রথম ট্রান্সজর্ডানের emeer নিযুক্ত হন। এই সিদ্ধান্ত অঞ্চলটিতে একটি স্বায়ত্তশাসিত সরকার প্রতিষ্ঠার সুযোগ করে দেয়, কিন্তু প্রকৃত ক্ষমতা ব্রিটিশদের হাতে থাকে।
ম্যান্ডেটের সময় জর্ডান একটি ম্যান্ডেট শাসন ব্যবস্থার মাধ্যমে শাসিত ছিল, যা স্থানীয় জনগণের স্বায়ত্তশাসনকে সীমিত করে। ব্রিটিশ কর্তৃপক্ষ শাসনের গুরুত্বপূর্ণ দিকগুলোর ওপর নিয়ন্ত্রণ রাখত, যেমন বিদেশی নীতি, নিরাপত্তা এবং অর্থনৈতিক উন্নয়ন। আবদাল্লা emeer, তার ভূমিকা সত্ত্বেও, প্রায়শই ব্রিটিশ কর্মকর্তাদের হস্তক্ষেপ এবং নিষেধাজ্ঞার মুখোমুখি হতেন।
ব্রিটিশ সরকার স্থানীয় জনগণের শাসনের জন্য বিভিন্ন প্রশাসনিক ব্যবস্থা চালু করে। এটি স্থানীয় পরিষদ এবং স্বায়ত্তশাসনের সংস্থা গঠনের অন্তর্ভুক্ত ছিল, তবে প্রকৃত ক্ষমতা ব্রিটিশ কমিশনারের হাতে ছিল, যা প্রধান সিদ্ধান্ত গ্রহণ করত। এছাড়াও, স্থানীয় জনগণ উচ্চ কর এবং রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে সীমাবদ্ধতার মুখোমুখি হয়েছিল, যা অসন্তোষ এবং প্রতিবাদের জন্ম দেয়।
ম্যান্ডেটের সময় জর্ডানের অর্থনীতি কৃষি এবং ছোট শিল্প প্রতিষ্ঠানের দিকে কেন্দ্রিত ছিল। ব্রিটিশ কর্তৃপক্ষ অবকাঠামোর উপর বিনিয়োগ করেছিল, রাস্তা ও সেচ সিস্টেমসহ, যা জীবনযাত্রার মান উন্নত করতে সহায়ক ছিল, কিন্তু স্থানীয় জনসাধারণকে ব্রিটিশ সরবরাহ এবং প্রযুক্তির প্রতি নির্ভরশীল করে তুলেছিল।
অঞ্চলের সামাজিক কাঠামোও পরিবর্তনের সম্মুখীন হয়। ব্যবসায়ী এবং স্থানীয় উদ্যোক্তাদের মতো নতুন শ্রেণীর উদ্ভব সামাজিক চাপ সৃষ্টি করে। স্থানীয় জনসাধারণ আরও বেশি রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক স্বাধীনতার চেষ্টা করছিল, যা উভয় পক্ষে — উপনিবেশিক শাসকদের এবং স্থানীয় জনগণের মধ্যে অসন্তোষ সৃষ্টি করেছিল।
1930-এর দশকের শুরু থেকে জর্ডানে জাতীয় আন্দোলন দেখা দিতে শুরু করে, যা স্বাধীনতার জন্য এবং উপনিবেশিক শাসনের বিরুদ্ধে সংগ্রাম করছিল। এই আন্দোলনগুলি বৃহত্তর আরব জাতীয়তাবাদের অংশ ছিল, যা পুরো মধ্যপ্রাচ্য জুড়ে বিস্তৃত ছিল। স্থানীয় জনগণের অসন্তোষের প্রতিক্রিয়া হিসাবে ব্রিটিশ কর্তৃপক্ষ কিছু সংস্কার কার্যকর করতে শুরু করে, কিন্তু এগুলি জাতীয়তাবাদীদের দাবিগুলি পূরণ করতে পারেনি।
1939 সালে জর্ডানে "জনতা পার্টি" এবং "আরব জাতীয়তাবাদী পার্টি" সহ বিভিন্ন রাজনৈতিক পার্টি প্রতিষ্ঠিত হয়, যারা স্বাধীনতা এবং স্থানীয় জনগণের অধিকারের পক্ষে ছিল। এই দলগুলি মিছিল ও প্রতিবাদ সংগঠিত করেছিল, উপনিবেশিক শাসনের শেষ এবং স্থানীয় জনগণের জন্য আরও প্রতিনিধিত্বের দাবি করেছিল।
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ মধ্যপ্রাচ্যের ভূরাজনৈতিক পরিস্থিতিতে পরিবর্তন এনে দেয়। ব্রিটিশ সাম্রাজ্য অর্থনৈতিক সমস্যার মুখোমুখি হয়েছিল, এবং যুদ্ধের পরে স্পষ্ট ছিল যে উপনিবেশিক ব্যবস্থা পূর্বের মতো কাজ করতে পারে না। যুদ্ধের ফলস্বরূপ, জর্ডান এবং অন্যান্য আরব দেশে জাতীয়তাবাদী আন্দোলনের বৃদ্ধি এক অবশ্যম্ভাবী বিষয় হয়ে দাঁড়ায়।
যুদ্ধ পরবর্তী বছরগুলোতে স্থানীয় জাতীয়তাবাদীরা স্বাধীনতার জন্য তাদের দাবি জোরালো করে তোলে। 1946 সালে, ম্যান্ডেটের সমাপ্তির পর, জর্ডানকে একটি স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে আনুষ্ঠানিকভাবে ঘোষণা করা হয়। আবদাল্লা emeer নতুন দেশের প্রথম রাজা হন, এবং তার শাসন জর্ডানের ইতিহাসে একটি নতুন যুগের প্রতীক হিসেবে দাঁড়ায়।
1946 সালের 14 ফেব্রুয়ারী, জর্ডান আনুষ্ঠানিকভাবে তার স্বাধীনতার ঘোষণা করে। এই ঘটনা স্থানীয় জনগণের মধ্যে আনন্দ ও উদ্দীপনার সাথে পালিত হয়, যারা বহু বছর ধরে উপনিবেশিক শাসনের শিকার হয়েছিল। রাজা আবদাল্লা অঙ্গীকার করেন যে নতুন সংবিধান নাগরিকদের অধিকারের保障 এবং গণতন্ত্রের উন্নয়ন নিশ্চিত করবে।
তবে, স্থিতিশীল স্বাধীনতার পথে চলা সহজ ছিল না। জর্ডান অভ্যন্তরীণ এবং বাইরের চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হয়েছিল, অর্থনৈতিক সমস্যা, রাজনৈতিক অস্থিরতা এবং প্রতিবেশী আরব দেশগুলির সাথে সংঘাত সহ। কিন্তু, জর্ডানের স্বাধীনতা জাতীয় আত্মসচেতনতা এবং রাজনৈতিক আত্মনিয়ন্ত্রণের দিকে একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ হয়ে দাঁড়ায়।
জর্ডানে ম্যান্ডেটকাল এবং স্বাধীনতার সংগ্রাম দেশটির ইতিহাসে একটি গুরুত্বপূর্ণ পৃষ্ঠা উপস্থাপন করে। এই পর্বটি জটিল রাজনৈতিক এবং সামাজিক পরিবর্তন দ্বারা চিহ্নিত হয়েছে, যা জাতীয় পরিচয় গঠনে সহায়ক হয়েছে এবং একটি স্বাধীন রাষ্ট্রের প্রতিষ্ঠায় সহযোগিতা করেছে। 1946 সালে প্রাপ্ত স্বাধীনতা, জর্ডানি জনগণের স্বাধীনতা এবং আত্মনিয়ন্ত্রণের প্রতি আকাঙ্ক্ষার একটি প্রতীক হিসেবে দাঁড়িয়েছে, যা তাদের ইতিহাসের একটি নতুন অধ্যায় খুলে দিয়েছে।