মধ্যযুগে স্পেন একটি অঞ্চল ছিল, যেখানে অনেক স্বাধীন রাজ্য ছিল, প্রতিটি রাজ্যই দেশের ইতিহাস এবং সংস্কৃতিতে নিজের ছাপ রেখে গেছে। মধ্যযুগের স্পেনের সময়কাল রোমান সাম্রাজ্যের পতন থেকে শুরু করে XV শতকের শেষে কাস্টিলিয়া এবং আরাগনের রাজ্যগুলোর একত্রিত হওয়ার সময় পর্যন্ত বিস্তৃত, যা আধুনিক স্পেনীয় রাষ্ট্রের শুরু ঘটায়। এই সময়টি ছিল সামরিক সংঘাত, সাংস্কৃতিক বিনিময় এবং গুরুত্বপূর্ণ রাজনৈতিক পরিবর্তনের সময়কাল।
পশ্চিম রোমান সাম্রাজ্যের পতনের পর V শতকে পিরেনিয়ান অঙ্গরাজ্যের মধ্যে ভিসিগথ রাজ্য প্রতিষ্ঠিত হয়। ভিসিগথরা, যারা জার্মান উপজাতি থেকে উদ্ভূত, তারা স্পেনের বৃহত্তর অংশকে দখল করে এবং তাদের রাজধানী টলেডো তৈরি করে। ভিসিগথদের শাসন পিরেনিয়ান অঙ্গরাজ্যে feudalist সিস্টেমের প্রতিষ্ঠায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। ভিসিগথদের সংস্কৃতি রোমান এবং জার্মান ঐতিহ্যের উপাদানগুলির সমন্বয় করে, তবে স্পেনের ইতিহাসে তাদের প্রভাব দীর্ঘস্থায়ী হয়নি। 711 সালে রাজ্যটি মুসলিমদের দ্বারা দখল করা হয়, যা মুসলিম শাসনের যুগের শুরু হয়।
711 সালে, তারিক ইবন জিয়াদের নেতৃত্বে আরব এবং বার্বারদের সেনাবাহিনী গিব্রাল্টার প্রণালী পেরিয়ে ভিসিগথদের গুয়াডালেটের যুদ্ধে পরাজিত করে। স্পেনের ওপর মুসলিম দখলের শুরু হলো, এবং পিরেনিয়ান অঙ্গরাজ্যের বৃহতাংশ উমাইয়্যাদ খলীফতের অধীনে আসলো। 756 সালে আবদ আর-রাহমান I কোর্ডোবার এমিরেটের স্বাধীনতা ঘোষণা করে, যা 929 সালে কোর্ডোবার খলিফাতে পরিণত হয়।
কোর্ডোবার খলিফাত ইউরোপের মুসলিম জগতের সাংস্কৃতিক এবং অর্থনৈতিক কেন্দ্র ছিল। কোর্ডোয়া তখনকার সময়ের অন্যতম বৃহৎ শহর হয়ে ওঠে যেখানে উন্নত কারিগরি, বিজ্ঞান এবং শিল্প ছিল। খলিফাতে স্থাপত্য, সাহিত্য, জ্যোতিশাস্ত্র এবং চিকিৎসা ব্যাপকভাবে বিকশিত হয়েছিল। তবে অভ্যন্তরীণ মতবিরোধ এবং বিদ্রোহ খলিফাতকে দুর্বল করে দিয়েছিল, এবং 1031 সালে এটি অনেক ছোট মুসলিম রাজ্যে - তাইফাসে বিভক্ত হয়ে যায়।
711 সালে মুসলিমদের দখলের পর, স্পেনের উত্তরে খ্রিস্টীয় রাজ্যগুলি রিকনকুইস্তার প্রক্রিয়া শুরু করে - তাদের ভূমি মুক্ত করার দীর্ঘ যুদ্ধ। এই রাজ্যগুলির মধ্যে প্রথম ছিল আসতুরিয়াস, নবারা, লিওন এবং কাস্টিলিয়া। শতাব্দীজুড়ে খ্রিস্টীয় রাজ্যগুলি ধীরে ধীরে দক্ষিণের দিকে অগ্রসর হয়, মুসলিমদের কাছ থেকে তাদের ভূমি পুনরুদ্ধার করে।
রিকনকুইস্তার গুরুত্বপূর্ণ একটি মুহূর্ত ছিল 1212 সালের লাস-নাভাস-দে-টোলোসার যুদ্ধে, যখন কাস্টিলিয়া, আরাগন, নবারা এবং পর্তুগালের যৌথ বাহিনী আলমোহাদদেরকে পরাজিত করে, যা পিরেনিয়ান অঙ্গরাজ্যের মুক্তি সংগ্রামে একটি মোড় পরিণত হয়। 1236 সালে কাস্টিলিয়া কোর্ডোবা দখল করে, এবং 1492 সালে গ্রানাডার এমিরেট পতন ঘটে - যা স্পেনে মুসলিম রাষ্ট্রের সমাপ্তি চিহ্নিত করে, এটি রিকনকুইস্তার সমাপ্তি ছিল।
কাস্টিলিয়া রাজ্য রিকনকুইস্তা প্রক্রিয়াতে কেন্দ্রীয় ভূমিকা পালন করেছিল এবং অবশেষে পিরেনিয়ান অঙ্গরাজ্যের সর্ব বৃহৎ খ্রিস্টীয় রাজ্য হয়ে ওঠে। 1085 সালে কাস্টিলিয়া টলেডো দখল করে - যা ভিসিগথদের প্রাক্তন রাজধানী। পরে কাস্টিলিয়ার রাজাগণ দক্ষিণে সফল যুদ্ধ অভিযান চালিয়ে তাদের অধিকৃত জমি সম্প্রসারণ করতে থাকেন। সময়ের সাথে সাথে রাজ্যটি একটি শক্তিশালী রাজ্যে পরিণত হয়, যা স্পেনীয় ভূমিগুলির একত্রিত করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
আরমাগন রাজ্য, যা প্রথমে স্পেনের পূর্বে একটি ছোট রাজ্য ছিল, মধ্যযুগের ইতিহাসে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিল। আর্মাগনবাসীরা রিকনকুইস্তায় সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করেছিল, এবং ভ্যালেন্সিয়া এবং বালেয়ার দ্বীপপুঞ্জ দখলের পর তাদের অধিকার বাড়িয়েছিল। পরে আরাগন একটি শক্তিশালী সামুদ্রিক রাজ্যে পরিণত হয়, ভূমধ্যসাগরের বাণিজ্য পথ নিয়ন্ত্রণ করে এবং সিসিলি, কর্সিকা এবং সারডিনিয়াসহ স্পেনের বাইরেও তাদের ভূখণ্ড সম্প্রসারিত করে।
1469 সালে একটি গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা ঘটে - ক্যাথোলিক রাণী ইসমাইলার I এবং পোর্টগালের ফিরদিনান্ড II-এর বিবাহ, যা স্পেনের একত্রীকরণের শুরু ছিল। যদিও তাদের রাজ্যগুলি পৃথক ছিল, পরে তারা একত্রে দেশ পরিচালনা এবং একটি সাধারণ বৈদেশিক নীতি অনুসরণ করে। 1492 সালে তারা রিকনকুইস্তা সম্পূর্ণ করে গ্রানাডা এমিরেট দখল করে, যা স্পেনের মুসলিম উপস্থিতির সমাপ্তি চিহ্নিত করে। একই বছর ক্রিস্টোফার কলম্বাসের দ্বারা নতুন বিশ্বের আবিষ্কার ঘটে, যা স্পেনীয় উপনিবেশ সাম্রাজ্যের সূচনা করে।
মধ্যযুগের স্পেন ছিল খ্রিস্টীয় এবং মুসলিম রাজ্যগুলির মধ্যে সংগ্রামের মাঠ, যা একটি অনন্য সাংস্কৃতিক এবং ধর্মীয় মজাজ তৈরি করেছিল। সেই সময়ের স্থাপত্য, বিজ্ঞান এবং শিল্প দেশের дальнейший বিকাশে উল্লেখযোগ্য প্রভাব ফেলে। মধ্যযুগে নির্মিত দুর্গ, গির্জা এবং প্রাসাদগুলো স্পেনের রাজ্যগুলির শক্তি এবং সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের প্রতীক হয়ে ওঠে।
এই সময়কাল স্পেনের জাতীয় পরিচয় গঠনের জন্যও ভিত্তি স্থাপন করেছিল। সময়ের সাথে সাথে ছোট রাজ্যগুলি একত্রিত হয়ে একটি একক রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করে, যা ইউরোপীয় এবং বিশ্ব ইতিহাসে একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে। অভ্যন্তরীণ সংঘাত এবং মতবিরোধের মধ্যেও, স্পেন মধ্যযুগ থেকে বেরিয়ে আসে একটি একক এবং শক্তিশালী রাজ্য হিসেবে, নতুন চ্যালেঞ্জ এবং দখলের জন্য প্রস্তুত।