আধুনিক পর্তুগালের ইতিহাস 19 শতকের শেষ থেকে আজকের দিন পর্যন্ত যেমন অতিবাহিত হয়েছে। এই সময়কালে মনার্কির পতন, প্রজাতন্ত্র প্রতিষ্ঠা, বিশ্বযুদ্ধে অংশগ্রহণ, স্বৈরশাসন এবং পরে গণতন্ত্রের দিকে ফিরে যাওয়া এবং ইউরোপীয় ইউনিয়নে অন্তর্ভুক্তির মতো গুরুত্বপূর্ণ ঘটনাবলী অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। এই ঘটনাবলীর ফলে দেশের রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক এবং সামাজিক জীবনে উল্লেখযোগ্য প্রভাব পড়েছে।
20 শতকের শুরুতে পর্তুগাল রাজনৈতিক অস্থিরতা এবং অর্থনৈতিক সমস্যার মুখোমুখি হয়েছিল। XII শতক থেকে দেশটি শাসন করা মনার্কিকে দুর্নীতি এবং অকার্যকরতার জন্য কঠোর সমালোচনা করা হয়েছিল। 1910 সালের 5 অক্টোবর ঘটে গিয়েছিল প্রজাতন্ত্রের বিপ্লব, যার ফলে মনার্কির পতন ঘটে এবং প্রথম পর্তুগিজ প্রজাতন্ত্র ঘোষণা করা হয়। এই পরিবর্তনটি সহজ ছিল না এবং এটি রাজনৈতিক সংঘাত ও হিংসার সাথে জড়িত ছিল।
প্রথম প্রজাতন্ত্র অস্থিতিশীল ছিল, এবং সল্প সময়ের মধ্যে পর্তুগাল অনেক সরকারী পরিবর্তনের অভিজ্ঞতা লাভ করেছিল। 1910 থেকে 1926 সালের সময়কালটি সংকট, অর্থনৈতিক সমস্যাগুলি এবং শাসন ব্যবস্থায় অস্বাস্থ্যকর পরিবর্তনের কারণে জনগণের অসন্তোষ সৃষ্টি করেছিল। 1926 সালে সামরিক অভ্যুত্থান ঘটানোর সময়, দেশটি অস্থিতিশীলতার সীমানায় ছিল।
1926 সালের অভ্যুত্থানের পরে পর্তুগালে একটি সামরিক স্বৈরশাসন প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল, যা 1932 সালে আন্চোনিও দে ওলিভেইরা স্যালাজারকে ক্ষমতায় আনে। তিনিই প্রধানমন্ত্রী হিসেবে নিযুক্ত হন এবং Estado Novo নামে পরিচিত একটি শাসন ব্যবস্থা কার্যকর করেন, যা 1974 সাল পর্যন্ত স্থায়ী ছিল। এটি একটি স্বৈরাচারী ব্যবস্থা ছিল, যা জাতীয়তাবাদ, রক্ষণশীলতা এবং কমিউনিস্ট বিরোধিতার ভিত্তিতে প্রতিষ্ঠিত ছিল।
স্যালাজার একটি কঠোর সেন্সরশিপ নীতি, রাজনৈতিক বিরোধীদের দমন এবং অর্থনৈতিক নিয়ন্ত্রণ পরিচালনা করেন। তবুও, তার শাসন 1950-60 এর দশকে কিছু অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি অর্জন করে, মূলত উপনিবেশের নীতি এবং কৃষি সংস্কারের কারণে। এই সময় পর্তুগাল আফ্রিকায় তাদের উপনিবেশগুলি ধরে রেখেছিল, যেমন অ্যাঙ্গোলা, মোজাম্বিক এবং গিনি-বিসাউ ফলে অভ্যন্তরীণ সংঘাত এবং আন্তর্জাতিক সমালোচনা সৃষ্টি হয়েছিল।
1960 এবং 1970 এর দশকে পর্তুগিজ উপনিবেশিক নীতি আফ্রিকান উপনিবেশগুলিতে স্বাধীনতার জন্য দীর্ঘস্থায়ী যুদ্ধের দিকে পরিচালিত হয়েছিল। এই সংঘাতগুলি, যা উপনিবেশিক যুদ্ধ নামে পরিচিত, দেশের ভিতরে ব্যাপক অসন্তোষ সৃষ্টি করে। উপনিবেশিক যুদ্ধগুলিতে সামরিক ব্যয় অর্থনীতি কে নিঃস্ব করে দিয়েছিল এবং জনসাধারণের প্রতিবাদ উত্থাপন করেছিল।
1974 সালে পর্তুগালে ঘটে গিয়েছিল গেজ বিরোধী বিপ্লব, যা স্যালাজারের শাসনকে পতন ঘটায়। ওই শান্তিপূর্ণ বিপ্লব, যাকে গেজের কারণে নামকরণ করা হয়েছে, যা প্রতিবাদকারীরা প্রতীক হিসাবে ব্যবহার করেছিল, গণতান্ত্রিক সংস্কারের এবং আফ্রিকায় উপনিবেশিক শাসনের সমাপ্তির পথ খুলে দেয়। 1975 সালের শেষের দিকে সমস্ত পর্তুগিজ উপনিবেশ আফ্রিকাতে স্বাধীনতা পায়।
বিপ্লবের পর, পর্তুগাল একটি জটিল গণতন্ত্রের প্রক্রিয়ার মধ্যে দিয়ে গেছে। 1976 সালে একটি নতুন সংবিধান গৃহীত হয়, যা গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠান এবং মানবাধিকার নিশ্চিত করে। তবে রাজনৈতিক পরিস্থিতি প্রথম কয়েক বছরে অস্থিতিশীল ছিল, প্রায়ই নির্বাচন এবং সরকারী সংকটগুলির কারণে।
1986 সালে পর্তুগাল ইউরোপীয় ইউনিয়নে প্রবেশ করে, যা তার রাজনৈতিক এবং অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধারের একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ ছিল। ইউরোপীয় ইউনিয়নের সদস্যপদ দেশটিকে অর্থনৈতিক তহবিলে প্রবেশের সুযোগ দেয়, যা অবকাঠামো, শিল্প এবং কৃষির উন্নয়নে সহায়তা করে। পর্তুগাল একাধিক অর্থনৈতিক সংস্কার শুরু করেছে, যা প্রতিযোগিতামূলকতা উন্নত করতে এবং বিদেশি বিনিয়োগ আকর্ষণ করতে লক্ষ্য করবে।
তবে 2000 সালের শুরুতে পর্তুগাল অর্থনৈতিক সমস্যার মুখোমুখি হয়েছিল, যার মধ্যে উচ্চ রাষ্ট্র ঋণ এবং ঘাটতি অন্তর্ভুক্ত ছিল। 2010 সালে বিশ্বময় আর্থিক সংকট এই সমস্যাগুলিকে তীব্র করে তোলে এবং 2011 সালে পর্তুগাল ইউরোপীয় ইউনিয়ন এবং আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের কাছে সাহায্য চাইতে বাধ্য হয়।
পর্তুগাল কঠোর অর্থনৈতিক সাশ্রয়ের ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে, যা ব্যাপক প্রতিবাদ এবং জনসাধারণের অসন্তোষ সৃষ্টি করে। তবে কাঠামোগত সংস্কার এবং অর্থনৈতিক পরিস্থিতির উন্নতির মাধ্যমে, 2014 সালের মধ্যে পর্তুগাল আবার অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিতে ফিরে আসে। দেশের অর্থনীতি পুনরুদ্ধার হতে শুরু করে এবং বেকারত্বের হার কমতে শুরু করে।
আধুনিক পর্তুগাল তার উচ্চ জীবনযাত্রার মান, স্থিতিশীল গণতন্ত্র এবং আন্তর্জাতিক বিষয়গুলিতে সক্রিয় অংশগ্রহণের জন্য পরিচিত। দেশটি শিক্ষা, স্বাস্থ্য এবং সামাজিক নিরাপত্তায় উল্লেখযোগ্য সাফল্য অর্জন করেছে। পর্তুগাল একটি জনপ্রিয় পর্যটন গন্তব্যে পরিণত হয়েছে, যা প্রতি বছর লক্ষ লক্ষ পর্যটককে আকর্ষণ করে।
তবে দেশটি কিছু চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন হয়েছে, যেমন জনসংখ্যা সংক্রান্ত সমস্যাগুলি, কম জন্মহার এবং বিদেশে উন্নত সুযোগের সন্ধানে যুবদের অভিবাসন। এই সকল বিষয়গুলি সামাজিক এবং অর্থনৈতিক কাঠামোর উপর চাপ সৃষ্টি করে। এর পাশাপাশি, পর্তুগাল জলবায়ু পরিবর্তন এবং টেকসই উন্নয়নের বিষয়গুলির সমাধানের উপর কাজ করতে থাকে, যার মধ্যে পুনর্নবীকরণযোগ্য শক্তির দিকে অগ্রসর হওয়া অন্তর্ভুক্ত।
আধুনিক পর্তুগালের ইতিহাস একটি চ্যালেঞ্জ মোকাবেলার এবং পুনরুদ্ধারের ইতিহাস। বহু পরীক্ষার মধ্য দিয়ে যাওয়া পর্তুগাল একটি গণতান্ত্রিক সমাজ গঠন করতে সক্ষম হয়েছে এবং আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে একটি গুরুত্বপূর্ণ খেলোয়াড় হয়ে উঠেছে। দেশের ভবিষ্যৎ নতুন চ্যালেঞ্জের সাথে খাপ খাইয়ে নেওয়ার এবং তার অনন্য সাংস্কৃতিক এবং ঐতিহাসিক ঐতিহ্য রক্ষা করার ওপর নির্ভর করবে।