ঐতিহাসিক এনসাইক্লোপিডিয়া

প্যাট্রিয়নে আমাদের সমর্থন করুন

দক্ষিণ কোরিয়ার সরকারি ব্যবস্থার বিবর্তন

দক্ষিণ কোরিয়ার সরকারি ব্যবস্থার ইতিহাস একটি জটিল প্রক্রিয়া, যেখানে দেশটি ঐতিহ্যগত রাজতন্ত্র থেকে আধুনিক গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রের দিকে উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন সন্নিবেশিত করেছে। দক্ষিণ কোরিয়ার সরকারি ব্যবস্থার বিবর্তনের বিভিন্ন পর্যায় বিভিন্ন ঐতিহাসিক ঘটনার প্রভাব প্রতিফলিত করে, যেমন জাপানি দখল, কোরীয় যুদ্ধ, পাশাপাশি গণতন্ত্রের জন্য লড়াই এবং আধুনিক অর্থনৈতিক রূপান্তর।

কোরীয় রাজতন্ত্র ও জাপানি দখলের আগে রাজতন্ত্র

১৯শ শতকের শেষের আগে কোরীয় উপদ্বীপটি চোসন রাজতন্ত্রের অধীনে একত্রিত ছিল, যা ১৩৯২ সাল থেকে শাসন করছিল। চোসন রাজতন্ত্রের সময় কোরিয়া একটি থিওক্র্যাটিক রাষ্ট্র ছিল যেখানে রাজা কর্তৃত্ব প্রায় সম্পূর্ণভাবে ছিল। এ সময় সমাজটি কঠোরভাবে শ্রোণীকৃত ছিল, এবং সরকারি কাঠামো কনফুসিয়ান নীতির উপর ভিত্তি করে নির্মিত হয়েছিল, যা শাসন এবং সমাজে সম্পর্ক নির্ধারণ করেছিল।

এ সময় সরকারি ব্যবস্থা একটি শক্তিশালী রাজতান্ত্রিক কর্তৃত্বের অস্তিত্ব অনুমান করেছিল, যা ভূমির সম্পদ নিয়ন্ত্রণ করত এবং সেনাবাহিনীর নেতৃত্ব দিত। একই সাথে, চোসন রাজতন্ত্র সক্রিয়ভাবে সংস্কৃতি এবং বিজ্ঞানের বিকাশ সাধন করেছিল, যা ১৫-১৬ শতকে কোরীয় সভ্যতার স্বর্ণযুগে পৌঁছেছিল। তবে কেন্দ্রীয় কর্তৃৃত্বের দুর্বলতা এবং ১৮-১৯ শতকে বাড়তে থাকা বাইরের হুমকির কারণে কোরীয় রাজতন্ত্র অভ্যন্তরীণ এবং বাইরের সমস্যার সম্মুখীন হতে শুরু করে, যা তার পতনের পূর্ব সংকেত ছিল।

জাপানি দখল এবং এর প্রভাব সরকারি ব্যবস্থায়

১৯১০ সালে কোরিয়া জাপানের দ্বারা সংযুক্ত হয়, যা স্বাধীন কোরীয় রাষ্ট্রের অস্তিত্বের সমাপ্তি নির্দেশ করে। ৩৫ বছরের জন্য কোরীয়রা নির্মম জাপানি উপনিবেশী শাসনের অধীনে ছিল। জাপান কঠোর সাংস্কৃতিক সমন্বয়ের নীতিগতভাবে জাপানি ভাষা, সংস্কৃতি এবং শাসন ব্যবস্থার বলপূর্বক প্রবর্তন অন্তর্ভুক্ত করেছিল। কোরিয়ার সরকারি ব্যবস্থা জাপানি প্রশাসনে প্রতিস্থাপন করা হয়েছিল, এবং সব ক্ষমতা জাপানি জন কর্মকর্তাদের হাতে কেন্দ্রিত হয়েছিল।

উপনিবেশত্বের সময়ে কোরীয় জাতীয় পরিচয় এবং রাষ্ট্রক্ষমতায় ধ্বংসাত্মক প্রভাব ফেলেছিল। এর পরেও, কোরীয়রা জাপানি কর্তৃত্বের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ করেছিল এবং স্বাধীনতার বিভিন্ন সংগ্রামী গোষ্ঠী, যেমন ঐতিহ্যবাহী মুক্তি সেনাবাহিনী, কোরিয়ার জাতীয় অখণ্ডতার পুনর্বিন্যাসে প্রভাব ফেলেছিল।

স্বাধীনতার পুনরুত্থান: দক্ষিণ কোরিয়া প্রজাতন্ত্রের প্রতিষ্ঠা

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ শেষ হওয়ার পর ১৯৪৫ সালে কোরিয়া জাপানি দখল থেকে মুক্ত হয়, তবে দেশটি দখলকৃত অঞ্চলে বিভক্ত হয়। সোভিয়েত ইউনিয়ন উপদ্বীপের উত্তর অংশ নিয়ন্ত্রণ করছিল, এবং ইউএসএ দক্ষিণ অংশ নিয়ন্ত্রণ করছিল। এই বিভাজন দুই পৃথক কোরীয় রাষ্ট্রের গঠনের কারণ হয়ে দাঁড়ায়। ১৯৪৮ সালে দক্ষিণ উপদ্বীপে দক্ষিণ কোরিয়া প্রজাতন্ত্র (দক্ষিণ কোরিয়া) ঘোষণা করা হয়, এবং উত্তরে কোরীয় প্রজাতন্ত্র গঠিত হয় (উত্তর কোরিয়া)।

দক্ষিণ কোরিয়া প্রজাতন্ত্র শুরু থেকেই নতুন সরকারি ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠার চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন হয়েছিল। দেশটি ১৯৪৮ সালে সংবিধান গ্রহণ করে, এবং একটি এক-প্যালামেন্ট রাষ্ট্রপ্রতি প্রজাতন্ত্র স্থাপন করে। রাষ্ট্রপতি সরাসরি ভোটের ভিত্তিতে নির্বাচিত হন, তবে সরকার রাজনৈতিক অস্থিরতার সম্মুখীন হয়, যা অভ্যন্তরীণ প্রতিরোধ এবং কমিউনিস্ট উত্তর প্রতিবেশীর বাইরের হুমকির ফলস্বরূপ ছিল।

কোরীয় যুদ্ধ এবং এর প্রভাব সরকারি ব্যবস্থায়

কোরীয় যুদ্ধ (১৯৫০-১৯৫৩) দক্ষিণ কোরিয়ার ইতিহাসে একটি উল্লেখযোগ্য মোড় ছিল। যুদ্ধের ফলে বহু লাখ মানুষের প্রাণহানি এবং ধ্বংস হয়, তবে এটি দক্ষিণ কোরিয়ার রাষ্ট্রকে শক্তিশালী করার জন্য একটি উদ্দীপকও হয়ে উঠেছিল। যুদ্ধের পর ১৯৫৩ সালে একটি শান্তিচুক্তি স্বাক্ষরিত হয়, যা উপদ্বীপের দুই রাষ্ট্ররে বিভাজনকে প্রতিষ্ঠিত করে। দক্ষিণ কোরিয়া, অর্থনৈতিক এবং সামাজিক প্রতিকূলতার সত্ত্বেও, নতুন রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠানগুলি গড়ে তোলার কাজ শুরু করে।

যুদ্ধ-পরবর্তী বছরগুলিতে দক্ষিণ কোরিয়া সামরিক শাসনের অধীনে ছিল। ১৯৬১ সালে জেনারেল পাক চোং হি সামরিক অভ্যুত্থানের মাধ্যমে ক্ষমতায় আসেন, এবং এরপর কর্তৃত্বমূলক শাসনের একটি যুগ শুরু হয়। তিনি রাজনৈতিক জীবনের উপর কঠোর নিয়ন্ত্রণ স্থাপন করেন এবং বিরোধী দলের কণ্ঠস্বর দমন করেন, তবে একই সাথে দেশের শিল্পায়ন এবং অর্থনীতির আধুনিকীকরণের জন্য সহায়ক হন।

সামরিক শাসনের সময়কাল এবং রাজনৈতিক সংস্কার

পাক চোং হির শাসন ১৯৭৯ সালে তার হত্যাকাণ্ড পর্যন্ত চলেছিল। এই সময়ে দক্ষিণ কোরিয়া উল্লেখযোগ্য অর্থনৈতিক সাফল্য অর্জন করে, তবে রাজনৈতিক ব্যবস্থা একান্ত কর্তৃত্বমূলক ছিল। তার মৃত্যুর পর থেকে দেশে গণতন্ত্রের জন্য সংগ্রাম শুরু হয়। ১৯৮০ সালে দক্ষিণ কোরিয়াতে গণ আন্দোলন ঘটে, যা গুইঞ্জু বিদ্রোহ নামে পরিচিত, যা ক্ষমতায় পরিবর্তন এবং রাজনৈতিক সংস্কারের সূচনা করে।

১৯৮৭ সালে দক্ষিণ কোরিয়া একটি নতুন সংবিধান গ্রহণ করে, যেখানে সরাসরি গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত হয় এবং রাষ্ট্রপতি全民 ভোটের মাধ্যমে নির্বাচিত হন। এই পরিবর্তন অভ্যন্তরীণ প্রতিরোধ ও বৃহত্তর মানুষের আন্দোলনের চাপের ফলস্বরূপ ঘটেছিল। এই সংস্কার দক্ষিণ কোরিয়ার সরকারি ব্যবস্থার বিবর্তনে একটি গুরুত্বপূর্ণ পর্যায় এবং গণতান্ত্রিক সমাজের বিকাশের সূচনা করে।

বর্তমান দক্ষিণ কোরিয়ার সরকারি ব্যবস্থা

আজ দক্ষিণ কোরিয়া একটি গণতান্ত্রিক প্রজাতন্ত্র, যেখানে উন্নত অর্থনীতি এবং উচ্চ জীবনযাত্রার মান রয়েছে। দক্ষিণ কোরিয়ার ১৯৮৭ সালের সংবিধান ক্ষমতার বিচ separation এবং নাগরিক স্বাধীনতার নীতি закрепিত করে, পাশাপাশি মানবাধিকারের নিশ্চয়তা প্রদান করে। দেশের রাষ্ট্রপতি ৫ বছরের মেয়াদের জন্য নির্বাচিত হন এবং আন্তর্জাতিক ও অভ্যন্তরীণ নীতিতে বিস্তৃত ক্ষমতা রাখেন। দক্ষিণ কোরিয়া শক্তিশালী গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানগুলির অধিকারী, যার মধ্যে বহুস্তরীয় নির্বাচন ব্যবস্থা, স্বাধীন বিচারক ব্যবস্থা এবং রাজনৈতিক দলগুলোর বৈচিত্র্য অন্তর্ভুক্ত রয়েছে।

গত কয়েক দশকে দক্ষিণ কোরিয়া রাজনৈতিক স্থিরতা অর্জন করেছে এবং তার সরকারি ব্যবস্থার উন্নতি অব্যাহত রেখেছে। অর্থনৈতিক সাফল্য এবং রাজনৈতিক অর্জনের সত্ত্বেও দেশের পূর্ব এবং পশ্চিমের মধ্যে সম্পর্ক, নিরাপত্তা এবং অভ্যন্তরীণ সামাজিক সমস্যার সাথে সম্পর্কিত সমস্যাগুলি নিয়ে আরো চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন হচ্ছে।

উপসংহার

দক্ষিণ কোরিয়ার সরকারি ব্যবস্থার বিবর্তন একটি দীর্ঘ এবং জটিল পথ, ঐতিহ্যগত রাজতন্ত্র থেকে আধুনিক গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র পর্যন্ত। বাইরের এবং অভ্যন্তরীণ কারণ, যেমন জাপানী দখল, কোরীয় যুদ্ধ, সামরিক অভ্যুত্থান এবং গণতান্ত্রিক সংস্কার দ্বারা ঘটিত পরিবর্তনগুলি দক্ষিণ কোরিয়ার রাষ্ট্র গঠনে একটি মূল ভূমিকা পালন করেছে। আজ দক্ষিণ কোরিয়া একটি সফল গণতন্ত্র হিসাবে পরিচিত, উন্নত প্রতিষ্ঠান এবং উচ্চ কার্যক্ষম অর্থনীতি অধিকারী, তবে এর ইতিহাস জাতীয় স্বাধীনতা এবং গণতন্ত্রের জন্য সংগ্রামের একটি উজ্জ্বল উদাহরণ remains।

শেয়ার করতে:

Facebook Twitter LinkedIn WhatsApp Telegram Reddit Viber email

অন্য নিবন্ধগুলি:

প্যাট্রিয়নে আমাদের সমর্থন করুন