বুলগেরিয়ার ইতিহাস শতাব্দীর গভীরে চলে যায়। আধুনিক বুলগেরিয়ার অঞ্চলে প্রাগৈতিহাসিক মানুষের বসতির চিহ্ন পাওয়া গেছে, যা নব্য পাথরের যুগের সাথে সম্পর্কিত। ট্রিপোলিয়া সংস্কৃতি, যা এই অঞ্চলে বিকশিত হয়েছিল, একটি গুরুত্বপূর্ণ উত্তরাধিকার রেখে গেছে।
খনিজ খননপূর্ব ষষ্ঠ শতাব্দীতে বুলগেরিয়ার অঞ্চলে গ্রীক উপনিবেশের আবির্ভাব ঘটে, যেমন ওডেসোস (আধুনিক ভারনা) এবং অ্যাপস্টল, যা বাণিজ্য এবং সাংস্কৃতিক বিনিময়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিল।
৬৮১ খ্রিস্টাব্দে প্রথম বুলগেরীয় সাম্রাজ্যের প্রতিষ্ঠা হয়, যা বিভিন্ন স্লাভিক এবং তুর্কি উপজাতির একত্রীকরণের ফলস্বরূপ। এর প্রতিষ্ঠাতা হিসেবে খান আসপারুখকে বিবেচনা করা হয়। রাষ্ট্রটি দ্রুত বিস্তার লাভ করে এবং ৯ম শতাব্দীর শেষে এটি একটি উল্লেখযোগ্য এলাকায় বিস্তৃত হয়।
যখন প্রিন্স বোরিস প্রথম খ্রিস্টধর্ম গ্রহণ করেন ৮৬৫ সালে, বুলগেরিয়া প্রথম স্লাভিক দেশের একটি হয়ে ওঠে, যা খ্রিস্টধর্ম গ্রহণ করে। এই ঘটনা বুলগেরীয় পরিচয় এবং সংস্কৃতি গঠনে একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিল।
১০-১১ শতাব্দীতে বুলগেরিয়া একটি স্বর্ণযুগের মধ্য দিয়ে চলে, যা সর্বাধিক উজ্জ্বলতা লাভ করে। রাজা সিমিওন প্রথমের অধীনে, দেশটি তার ক্ষমতার শিখরে পৌঁছায় এবং সাংস্কৃতিক ও বৈজ্ঞানিক বিকাশের ক্ষেত্রেও । সিমিওন সক্রিয়ভাবে শিক্ষা এবং সাহিত্য উন্নয়নে সহায়তা করেছিলেন, যার ফলে বুলগেরীয় লিপি গঠিত হয়েছিল, যা কিরিল এবং মেফোডিয়ের মাধ্যমে তৈরি হয়েছিল।
স্লাভিক সাহিত্য এবং সংস্কৃতি নতুন প্রাণ পেয়েছিল, এবং বুলগেরিয়া বালকান অঞ্চলে একটি গুরুত্বপূর্ণ সাংস্কৃতিক কেন্দ্রে পরিণত হয়েছিল।
১২ শ শতাব্দীর শুরুতে বুলগেরিয়া অভ্যন্তরীণ বিরোধ এবং বাহ্যিক হুমকির দ্বারা দুর্বল হয়ে পড়ে। ১০১৮ সালে রাজ্যটি বাইজেন্টাইন সাম্রাজ্যের দ্বারা দখল হয় এবং প্রায় দুই শতাব্দী ধরে এর নিয়ন্ত্রণে থাকে। এই সময়টি অবক্ষয় এবং স্বাধীনতার হারানোর সময় হিসেবে চিহ্নিত হয়।
শুধুমাত্র ১১৮৫ সালে বুলগেরিয়ারা বাইজেন্টাইন শাসনের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করে এবং ফলে দ্বিতীয় বুলগেরীয় রাজ্যের প্রতিষ্ঠা হয়, যা দেশটিকে আবার স্বাধীনতা প্রদান করে।
তবে ১৩৯৬ সালে বুলগেরিয়া আবার স্বাধীনতা হারায়, এইবার ওসমানীয় বিজয়ের কারণে। ওসমানীয় সাম্রাজ্য প্রায় পাঁচশত বছর ধরে বুলগেরিয়া নিয়ন্ত্রণ করে, যা সংস্কৃতি এবং সমাজে গভীর প্রভাব ফেলে।
এই সময়ে জাতি এবং সংস্কৃতির মধ্যে উল্লেখযোগ্য মিশ্রণ ঘটে, যা ভাষা এবং ঐতিহ্যে পরিবর্তন আনে।
১৯ শতকের শেষ দিকে স্বাধীনতা আন্দোলন শুরু হয়, যার চূড়ান্ত পরিণতি ১৮৭৮ সালে রুশ-তুরস্ক যুদ্ধের পরে বুলগেরিয়ার মুক্তি ছিল। ১৯০৮ সালে বুলগেরিয়া ওসমানীয় সাম্রাজ্য থেকে সম্পূর্ণ স্বাধীনতা ঘোষণা করে।
প্রথম এবং দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পরে বুলগেরিয়া উল্লেখযোগ্য পরিবর্তনের মুখোমুখি হয়। ১৯৪৬ সালে বুলগেরিয়া জনগণের প্রজাতন্ত্র ঘোষণা করা হয়, যা সোভিয়েত ইউনিয়নের প্রভাবের অধীনে ছিল।
ক্রমশ দেশে অর্থনৈতিক এবং সামাজিক সংস্কার হয়, তবে রাজনৈতিক দমন অব্যাহত ছিল। ১৯৮৯ সালে কমিউনিস্ট শাসন পতনের পরে, বুলগেরিয়া গণতন্ত্রীকরণ এবং বাজার অর্থনীতির দিকে যাত্রা শুরু করে।
বর্তমানে বুলগেরিয়া একটি সংসদীয় প্রজাতন্ত্র এবং ২০০৭ সাল থেকে ইউরোপীয় ইউনিয়নের সদস্য। দেশটি আন্তর্জাতিক বিষয়গুলিতে সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করে এবং তার অর্থনীতি ও সংস্কৃতি বিকাশ করতে থাকে। বুলগেরিয়া তার সমৃদ্ধ সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের জন্য পরিচিত, যার মধ্যে লোকসঙ্গীত, সঙ্গীত এবং ঐতিহ্যবাহী কারিগরি রয়েছে।
আধুনিক বুলগেরিয়া হাজার বছরের ইতিহাসের ভিত্তিতে তার পরিচয় বজায় রেখেছে, যা তার জনগণের গর্ব।