ঐতিহাসিক এনসাইক্লোপিডিয়া

প্যাট্রিয়নে আমাদের সমর্থন করুন

জোসেফ স্ট্যালিন: ব্যক্তিত্ব এবং প্রভাব

জোসেফ বিশারিওনভিচ স্ট্যালিন (১৮৭৮-১৯৫৩) — ২০শ শতাব্দীর সবচেয়ে বিতর্কিত এবং গুরুত্বপূর্ণ নেতা, যিনি সোভিয়েত ইউনিয়নের কমিউনিস্ট পার্টির কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সচিব হয়েছিলেন এবং প্রকৃতপক্ষে ১৯২০-এর দশকের শেষ থেকে ১৯৫৩ সালে মৃত্যু পর্যন্ত দেশটি নিয়ন্ত্রণ করেছিলেন। তাঁর শাসনকাল শিল্পায়ন এবং সমবেতকরণের পাশাপাশি ব্যাপক বিপদ এবং সন্ত্রাসের সময় কাল হিসাবে চিহ্নিত হয়।

প্রাথমিক বছরগুলি

স্ট্যালিন ১৮ ডিসেম্বর ১৮৭৮ সালে জর্জিয়ার গোরিতে জন্মেছিলেন। তিনি এক জুতোর দোকানদার এবং একটি কাপড় কাচার মহিলার ছেলে। কৈশোরে বিপ্লবী ভাবনার প্রতি আগ্রহী হয়ে তিনি আরএসডিআরপি (রুশ সমাজতান্ত্রিক শ্রমিক পার্টি)য়ে যোগদান করেন। ১৯০৩ সালে তিনি বোলশেভিকদের সমর্থক হয়েছিলেন এবং বিপ্লবী কার্যকলাপে সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করেছিলেন, যা শেষ পর্যন্ত তাঁর গ্রেপ্তার এবং নির্বাসনে নিয়ে গিয়েছিল।

শক্তির দিকে যাত্রা

১৯১৭ সালের অক্টোবরে বিপ্লবের পরে স্ট্যালিন পার্টিতে গুরুত্বপূর্ণ অবস্থান গ্রহণ করেন, এবং ১৯২৪ সালে ভ্লাদিমির লেনিনের মৃত্যুর পরে অন্য নেতাদের সাথে শক্তির জন্য লড়াই শুরু করেন, যেমন লেভ ট্রটস্কি। ১৯২৮ সালে স্ট্যালিন তাঁর অবস্থান নিশ্চিত করেন, এবং সোভিয়েত ইউনিয়নের প্রকৃত ডিক্টেটর হয়ে ওঠেন।

শিল্পায়ন এবং সমবেতকরণ

স্ট্যালিন দেশটির শিল্পায়নের লক্ষ্যে ব্যাপক সংস্কারের সূচনা করেন। এর মধ্যে পাঁচ বছরের পরিকল্পনা তৈরির বিষয়টি অন্তর্ভুক্ত ছিল, যা উৎপাদন বৃদ্ধির জন্য উচ্চ লক্ষ্যস্থাপন করেছিল। কৃষির সমবেতকরণে সমবায়গুলোর সৃষ্টি হয় এবং ধনসম্পদশালী কৃষকদের ক্ষুদ্রায়িত করা হয়েছিল, যা এর ফলে লক্ষ লক্ষ মানুষের জীবন নষ্ট করে দিয়েছে, বিশেষ করে ইউক্রেনে (হলোডোমর)।

বিপর্যয় ও সন্ত্রাস

১৯৩০-এর দশকে স্ট্যালিন "মহান সন্ত্রাস" নামে পরিচিত ব্যাপক নির্যাতন শুরু করেন। লক্ষ লক্ষ মানুষ গ্রেপ্তার হয়েছেন, গুলাগের ক্যাম্পে পাঠানো হয়েছে অথবা গুলি করা হয়েছে। এই নির্যাতনগুলি কেবল পার্টির সক্রিয় কর্মীদের মধ্যেই সীমাবদ্ধ ছিল না, বরং শিক্ষিত, কৃষক এবং সাধারণ শ্রমিকদেরও ধরেছে। দেশটির সমাজ জীবনের ভিত্তি হয়ে ওঠে ভয় এবং অন্ধবিশ্বাস।

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় স্ট্যালিন নাৎসীবাদের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে অন্যতম মূল সহযোগী হয়ে ওঠেন। এই যুদ্ধে সোভিয়েত ইউনিয়নের জন্য শুরুতে পরিস্থিতি কঠিন ছিল: ১৯৪১ সালে জার্মান বাহিনী "বারবারোসা" অভিযানের সূচনা করেছিল এবং সোভিয়েত সেনাবাহিনী উল্লেখযোগ্য ক্ষতির সম্মুখীন হয়। তবে মস্কোর সফল প্রতিরক্ষা এবং স্তালিনগ্রাদের অবস্থানে (১৯৪৩) সোভিয়েত ইউনিয়ন পাল্টা আক্রমণের দিকে অগ্রসর হয় এবং ১৯৪৫ সালে জার্মানির বিরুদ্ধে বিজয়ের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।

যুদ্ধের পরের সময় এবং শীতল যুদ্ধ

যুদ্ধের পর স্ট্যালিন দেশটির ভেতর এবং আন্তর্জাতিক অঙ্গনে তাঁর ক্ষমতা আরও শক্তিশালী করতে থাকেন। তিনি পূর্ব ইউরোপে নিয়ন্ত্রণ শক্তিশালী করার উদ্দেশ্যে একাধিক স্ট্যালিনীয় অভিযান শুরু করেন, যা "লেনিনীয় পর্দা"-র স্থাপন এবং শীতল যুদ্ধের সূচনা করেছে। স্ট্যালিন অন্য দেশের কমিউনিস্ট আন্দোলনকে সক্রিয়ভাবে সমর্থন করেন, যা পশ্চিমে উদ্বেগ সৃষ্টি করেছিল।

মৃত্যু এবং উত্তরাধিকার

স্ট্যালিন ৫ মার্চ ১৯৫৩ সালে মারা যান। তাঁর মৃত্যুতে সোভিয়েত ইউনিয়নে রাজনৈতিক পরিবর্তন ঘটে এবং নিকিতা খ্রুশচেভ দ্বারা শুরু হওয়া ডেস্টালিনাইজেশনের প্রক্রিয়া শুরু হয়। স্ট্যালিনের উত্তরাধিকার বিতর্কিত: অনেকেই শিল্পায়ন এবং দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে বিজয়ের জন্য তাঁর প্রশংসা করেন, অন্যদিকে তাঁকে নির্যাতন এবং মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধের জন্য দোষারোপ করেন।

উপসংহার

জোসেফ স্ট্যালিন সোভিয়েত ইউনিয়নের ইতিহাসের একটি জটিল এবং বিতর্কিত সময়ের প্রতীক হয়ে উঠেছেন। দেশের রাজনীতি, অর্থনীতি এবং সমাজ জীবনের উপর তাঁর প্রভাব এখনও অনুভূত হয়। তাঁর জীবন এবং শাসনের অধ্যয়ন কেবল রাশিয়ান নয়, ২০শ শতাব্দীর বিশ্বের ইতিহাস বুঝতে সাহায্য করে।

শেয়ার করতে:

Facebook Twitter LinkedIn WhatsApp Telegram Reddit Viber email
প্যাট্রিয়নে আমাদের সমর্থন করুন