ঐতিহাসিক এনসাইক্লোপিডিয়া

কিম ইর সেন: উত্তর কোরিয়ার নেতা

কিম ইর সেন (১৯১২-১৯৯৪) ছিলেন উত্তর কোরিয়ার প্রতিষ্ঠাতা এবং প্রথম নেতা, যিনি ১৯৪৮ সালে দেশটির প্রতিষ্ঠা থেকে ১৯৯৪ সালে তাঁর মৃত্যু পর্যন্ত ক্ষমতায় ছিলেন। তাঁর নেতৃত্ব উত্তর কোরীয় জনতান্ত্রিক গণতন্ত্রের (কেডিআর) বিকাশকে নির্ধারণ করে এবং কোরিয়ার ইতিহাস ও আন্তর্জাতিক সম্পর্কের উপর গভীর ছাপ ফেলে।

প্রাথমিক বছরগুলি

কিম ইর সেন সানহাডো গাঁয়ে জন্মগ্রহণ করেন, যেটি সেসময় জাপানী জাতীয়তাবাদী শাসনের অধীনে ছিল। অল্প বয়সে তিনি বিরোধী কলোনিয়াল কার্যক্রমে যোগ দেন এবং বিভিন্ন বিপ্লবী গোষ্ঠীর সাথে যুক্ত হন। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে জাপানের পরাজয়ের পর, কোরিয়া দুটি দখল অঞ্চল, একটি সোভিয়েত উত্তর এবং একটি আমেরিকান দক্ষিণে বিভক্ত হয়।

কেডিআর গঠন

১৯৪৫ সালে, যুদ্ধ শেষ হওয়ার পর, কিম ইর সেন উত্তর কোরিয়ায় ফিরে আসেন, যেখানে তিনি সমাজতান্ত্রিক রাষ্ট্র গঠনে শুরু করেন। তিনি ১৯৪৮ সালে দেশের প্রথম প্রধানমন্ত্রী হন, এবং ১৯৭২ সালে রাষ্ট্রপতির উপাধি গ্রহণ করেন। তাঁর নীতি একটি স্বাধীন সমাজতান্ত্রিক রাষ্ট্র গঠনে কেন্দ্রীভূত হয়েছিল, শিল্পায়ন এবং সমবায়করণের উপর গুরুত্ব দিয়ে।

কোরিয়ান যুদ্ধ

১৯৫০ সালে কিম ইর সেন কোরিয়ান যুদ্ধের সূচনা করেন, দক্ষিণে আক্রমণ শুরু করে। এই সংঘাত ১৯৫৩ সাল পর্যন্ত চলমান ছিল এবং একটি অস্ত্রবিরতি স্বাক্ষরের মাধ্যমে শেষ হয়। যুদ্ধের ফলে বিশাল ধ্বংস এবং মানব জীবনের ক্ষতি হয়, তবে এটি কিম ইর সেনের জনগণের কাছে দেশ রক্ষার একজন হিসাবে প্রভাবকে বৃদ্ধি করে।

চুচে মতবাদ

কিম ইর সেন চুচে মতবাদ তৈরি করেন, যা স্বনির্ভরতা ও স্বাধীনতার উপর গুরুত্ব দেয়। এই মতবাদ কেডিআরের রাষ্ট্রীয় নীতির ভিত্তি হয়ে উঠেছে এবং আজও দেশে প্রভাব ফেলছে। চুচে জাতীয় স্বায়ত্তশাসন এবং স্বনির্ভর উন্নয়নের গুরুত্বকে তুলে ধরে।

ব্যক্তিত্বের culto

কিম ইর সেনের ক্ষমতাকালীন উত্তর কোরিয়ায় একটি শক্তিশালী ব্যক্তিত্বের culto সৃষ্টি হয়েছিল। তিনি প্রায় দেবতুল্য চরিত্র হিসেবে চিত্রিত হন এবং তাঁর নাম রাষ্ট্রীয় প্রতীকীর অবিচ্ছেদ্য অংশ হয়ে ওঠে। প্রচার এবং শিক্ষা ব্যবস্থা এক প্রজন্মকে নেতা ও তাঁর ভাবনার প্রতি ভক্তশ্রদ্ধা রাখতে গড়ে তোলে।

উত্তরাধিকার ও পরবর্তী নেতৃত্ব

কিম ইর সেন ১৯৯৪ সালে মৃত্যুবরণ করেন, তবে তাঁর উত্তরাধিকার তাঁর পুত্র কিম জং ইলের মাধ্যমে জীবিত রয়েছে, যিনি তাঁর উত্তরাধিকারী হন। কিম ইর সেনের রচনা করা নীতি ও মতবাদ কেডিআরের অস্তিত্বের ভিত্তি হিসেবে রয়ে গেছে। দেশটি আন্তর্জাতিক নিষেধাজ্ঞা ও বিচ্ছিন্নতা মোকাবেলা করে চলেছে, তবে কিম ইর সেন অনেক উত্তরকোরিয়ানদের জন্য জাতীয় পরিচয়ের প্রতীক হয়ে রয়েছেন।

উপসংহার

কিম ইর সেন বিশাল, কিন্তু বিতর্কিত ব্যক্তিত্ব ছিলেন ২০শ শতাব্দীর ইতিহাসে। কেডিআর ও পুরো কোরিয়ান উপদ্বীপে তাঁর প্রভাব প্রমাণিত। তাঁর জীবন ও নীতির গবেষণা আধুনিক কোরিয়ার সমস্যাগুলি ও উত্তর ও দক্ষিণের মধ্যে সম্পর্ক বোঝার ক্ষেত্রে সহায়ক।

শেয়ার করতে:

Facebook Twitter LinkedIn WhatsApp Telegram Reddit email