মালয়েশিয়ার ইতিহাস ৭০০০ বছরেরও বেশি সময় ধরে বিস্তৃত এবং বিভিন্ন সংস্কৃতি, ধর্ম এবং রাজনৈতিক ব্যবস্থাকে অন্তর্ভুক্ত করে। দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় অবস্থিত এই দেশটি শতাব্দী ধরে বাণিজ্য পথ এবং সাংস্কৃতিক প্রভাবের কেন্দ্রস্থল ছিল।
মালয়েশিয়ার ভূমিতে প্রথম বসতি স্থাপন হয়েছিল প্রায় ৪০০০ খ্রিস্টপূর্বাব্দে। গুহা চাঁ টেইয়ের প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলি শিকারী এবং সংগ্রাহকদের প্রাচীন সম্প্রদায়গুলির অস্তিত্ব নির্দেশ করে। ৩০০ খ্রিস্টপূর্বাব্দের কাছাকাছি লোহিত যুগের আগমনের সাথে সাথে উপদ্বীপে কৃষিকাজ এবং বাণিজ্যে নিযুক্ত আরও জটিল সমাজগুলি বিকাশ লাভ করতে শুরু করে।
খ্রিস্টাব্দের প্রথম দিকে মালয়েশিয়া ভারত এবং চীনের মধ্যে বৃহৎ বাণিজ্য নেটওয়ার্কের একটি অংশ হয়ে ওঠে। ভারতীয় ব্যবসায়ীরা শুধুমাত্র পণ্যই নয়, ধর্ম — বৌদ্ধবাদ এবং হিন্দুধর্ম নিয়ে এসেছিলেন। এই ধর্মগুলি সংস্কৃতি এবং সমাজে উল্লেখযোগ্য প্রভাব ফেলেছিল। এই সময়ে কেদাহ এবং শ্রী বিজয়া-এর মতো প্রথম রাষ্ট্রগুলি গঠিত হয়, যা গুরুত্বপূর্ণ বাণিজ্য কেন্দ্র হয়ে ওঠে।
১৩ শতকে ইসলাম মালয়েশিয়ায় ছড়িয়ে পড়তে শুরু করে, বিশেষ করে আরব দেশগুলোর সাথে বাণিজ্যের মাধ্যমে। ইসলাম নিয়ে এসেছিলেন আরব এবং ভারতীয় ব্যবসায়ীরা, পাশাপাশি ধর্ম প্রচারকরা। 15 শতক নাগাদ ইসলাম অঞ্চলে প্রাধান্য লাভ করে, যা মালাকাসহ অনেক সুলতানাতের সৃষ্টি হতে সাহায্য করে, যা দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার অন্যতম শক্তিশালী সুলতানাত হয়ে ওঠে।
১৬ শতকে, ইউরোপীয় উপনিবেশকারীদের আগমনের সাথে সাথে মালয়েশিয়ার ইতিহাস একটি নতুন মোড় নেয়। ১৫১১ সালে পর্তুগিজদের দ্বারা মালাকাকে অধিকার করা হয়, পরে ১৬৪১ সালে এটি ডাচদের হাতে চলে যায়। ইংল্যান্ড ১৭৮৬ সালে পেনাং জয় করার মাধ্যমে এবং কেদাহর সুলতানের সাথে চুক্তি স্বাক্ষর করে অঞ্চলে তাদের উপস্থিতি শুরু করে।
১৯ শতকের মধ্যে ব্রিটেন মালয়েশিয়ার বৃহত্তর অংশের প্রতি নিয়ন্ত্রণ স্থাপন করে, যা প্রকৃতপক্ষে সুরক্ষা ব্যবস্থার মাধ্যমে ঘটে। এর ফলে অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন ঘটে, যার মধ্যে প্ল্যান্টেশনগুলির বিকাশ ঘটেছিল, যা চীন এবং ভারত থেকে অনেক অভিবাসীকে আকর্ষিত করে, বহুজাতিক সমাজ সৃষ্টি করে।
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পরে, যখন জাপান মালয়েশিয়া দখল করে, তখন স্থানীয় লোকেরা স্বাধীনতার প্রয়োজনীয়তার উপলব্ধি করতে শুরু করে। ১৯৪৬ সালে মালয় ফেডারেশন গঠিত হয়, যা কয়েকটি মালয় রাষ্ট্রকে একত্রিত করে। তবে স্থানীয় স্বাধীনতা আন্দোলনগুলি শক্তি অর্জন করতে শুরু করে, এবং ১৯৫৭ সালে মালয়েশিয়া ব্রিটেন থেকে স্বাধীনতা অর্জন করে।
১৯৬৩ সালে মালয়েশিয়া সিঙ্গাপুর, সাবাহ এবং সারাবকের সাথে একটি ফেডারেশনে যুক্ত হয়, যদিও সিঙ্গাপুর ১৯৬৫ সালে জোট ত্যাগ করে। এই একীকরণের প্রক্রিয়াটি জটিল ছিল এবং জাতিগত সংঘর্ষের সাথে ছিল, তবে এটি শেষ পর্যন্ত একটি ভিন্ন জাতির সৃষ্টি করতে সাহায্য করে।
স্বাধীনতা থেকে মালয়েশিয়া উল্লেখযোগ্য অর্থনৈতিক বৃদ্ধি এবং রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা অর্জন করেছে। দেশটি একটি ধারাবাহিক অর্থনৈতিক সংস্কার এবং আধুনিকায়নের মধ্য দিয়ে গেছে, যা "মালয়েশিয়া 2020" এবং "নতুন অর্থনৈতিক নীতি" প্রোগ্রামের প্রসারিত হয়েছে, যা অর্থনৈতিক বৈষম্য কমানোর এবং জনসংখ্যার জীবনের মান উন্নত করার দিকে পরিচালিত করে।
২১ শতকের শুরুর দিক থেকে মালয়েশিয়া একটি বহু-জাতিগত সমাজ হিসেবে বিকাশ চালিয়ে যাচ্ছে, জাতিগত এবং ধর্মীয় পার্থক্যগুলির সাথে মোকাবিলা করছে। ২০১৮ সালে গুরুত্বপূর্ণ রাজনৈতিক পরিবর্তন ঘটে, যখন ১৯৫৭ সালের পর প্রথমবারের মতো ক্ষমতায় আসা জোটটির নেতৃত্বে দুর্নীতি দমন এবং গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া উন্নত করার জন্য সংস্কারের সূচনা হয়।
মালয়েশিয়ার ইতিহাস একটি বহুসাংস্কৃতিক সমাজের ইতিহাস যা বিভিন্ন সংস্কৃতি এবং ধর্মের প্রভাবে গঠিত হয়েছে। আজকাল মালয়েশিয়া একটি দেশ, যা তার চরিত্রগত ঐতিহ্য ধরে রেখেছে, একই সাথে আধুনিক অর্জন এবং বৈশ্বিক মিথস্ক্রিয়া করতে চেষ্টা করছে।