ভ্লাদিমির ইলিচ লেনিন, প্রকৃত নাম উলিয়ানভ, ২২ এপ্রিল ১৮৭০ সালে সিম্বিরস্কে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি ২০ শতকের অন্যতম প্রভাবশালী ব্যক্তিত্ব হিসেবে পরিচিত এবং সোভিয়েত ইউনিয়নের প্রতিষ্ঠাতা। লেনিন ছিলেন মার্কসবাদ বিষয়ে একজন তাত্ত্বিক এবং ব্যবহারিক বিপ্লবী, যা তাঁকে বিশ্ব ইতিহাসে একটি মূল ভূমিকা প্রদান করেছে।
লেনিন একজন বুদ্ধিজীবী পরিবারে বেড়ে উঠেছিলেন। তাঁর বাবা, একটি গিমনেজিয়ামের পরিচালক, যখন লেনিনের মাত্র ১৬ বছর বয়স ছিল তখন মারা যান। এই ঘটনা তাঁর বিশ্বদৃষ্টি গভীরভাবে প্রভাবিত করে। ১৮৮৭ সালে, তাঁর বড় ভাইয়ের ফাঁসির পর, যিনি জার আলেকজান্ডার তৃতীয়-এ হামলার চেষ্টা করেছিলেন, লেনিন বিপ্লবী ধারণায় আগ্রহী হন।
লেনিন কাদানের বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন факульт্যে ভর্তি হন, তবে ছাত্র বিক্ষোভে অংশগ্রহণ করার কারণে তাঁকে বহিষ্কার করা হয়। এর পরে তিনি নিজের উদ্যোগে শিক্ষার ধারাবাহিকতা বজায় রাখেন এবং শীঘ্রই বিপ্লবী আন্দোলনের সক্রিয় সদস্য হয়ে ওঠেন। ১৮৯৩ সালে তিনি সেন্ট পিটার্সবার্গে চলে আসেন, যেখানে তিনি মার্কসবাদী গোষ্ঠীতে যোগদান করেন।
লেনিন রাশিয়ার অন্যতম শীর্ষ মার্কসিস্ট হয়ে ওঠেন এবং "ইস্ক্রা" নামে একটি পত্রিকা প্রতিষ্ঠা করেন। তিনি পেশাদার বিপ্লবী পার্টির সৃষ্টি প্রয়োজনীয়তার উপর ধারণা তৈরি করেন, যা তাঁকে অন্যান্য সমসাময়িক সমাজবাদীদের থেকে আলাদা করে। ১৯০৩ সালে আরএসডিআরপির দ্বিতীয় কংগ্রেসে বোলশেভিক এবং মেনশেভিকের মধ্যে বিভাজন ঘটে, এবং লেনিন প্রথম গোষ্ঠীর নেতৃত্ব গ্রহণ করেন।
মার্চ ১৯১৭ সালে, ফেব্রুয়ারি বিপ্লবের পর, লেনিন নির্বাসনে ছিলেন। তবে শীঘ্রই তিনি রাশিয়ায় ফিরে আসেন। ৭ নভেম্বর ১৯১৭ সালে (নতুন তারিখে ২৫ অক্টোবর) অক্টোবর বিপ্লব ঘটে, যার ফলে বোলশেভিকরা ক্ষমতা দখল করে। লেনিন নতুন সরকারের প্রধান হয়ে ওঠেন।
লেনিন খাদ্য সংকট এবং শিল্পের পতনের মতো অনেক অর্থনৈতিক সমস্যার সম্মুখীন হন। ১৯১৮ সালে তিনি সামরিক সমাজতন্ত্র চালু করেন, যা সমস্ত শিল্পের জাতীয়করণ এবং সম্পদের বিতরণে কঠোর নিয়ন্ত্রণ অন্তর্ভুক্ত ছিল। তবে এর ফলে জনসাধারণের মধ্যে অসন্তোষ এবং প্রতিরোধ সৃষ্টি হয়।
১৯২১ সালে লেনিন নতুন অর্থনৈতিক নীতি (এনইপি) চালু করেন, যা ব্যক্তিগত উদ্যোগকে অনুমোদন দেয় এবং বাজার সম্পর্ক পুনরুদ্ধার করে। এই সিদ্ধান্তটি দেশের অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধারে সহায়তা করে, কিন্তু এটি দলের আরও মৌলবাদী উপাদানের দ্বারা সমালোচনার সম্মুখীন হয়।
লেনিন ২১ জানুয়ারি ১৯২৪ সালে ৫৩ বছর বয়সে মৃত্যুবরণ করেন। তাঁর ধারণা ও কার্যক্রম সারা বিশ্বে সমাজতান্ত্রিক এবং কমিউনিস্ট আন্দোলনের বিকাশের উপর গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব ফেলেছিল। তাঁর মৃত্যুর পরে, তাঁর দেহ বাক্সবন্দী করা হয় এবং মস্কোর রেড স্কোয়ারে মওজোলিতে রাখা হয়, যা তাঁর ব্যক্তিত্বের পূজার প্রতীক হয়ে ওঠে।
লেনিন একটি উত্তরাধিকার রেখে গেছেন, যা সোভিয়েত ইউনিয়নের আকারে ১৯৯১ সালে এর পতন পর্যন্ত অব্যাহত ছিল। তাঁর শ্রেণীর লড়াই, প্রলেতারিয়েতের স্বৈরতন্ত্র এবং সমাজতন্ত্রের নির্মাণের ধারণাগুলি অনেক দেশের জন্য ভিত্তি হয়ে ওঠে, যারা তাঁর অনুসরণ করার চেষ্টায় ছিল।
ভ্লাদিমির লেনিন ইতিহাসে একটি অত্যন্ত বিতর্কিত এবং অধ্যয়নশীল ব্যক্তিত্ব হিসেবে রয়ে গেছেন। তাঁর জীবন এবং কার্যক্রম এখনও আগ্রহ এবং বিতর্ক সৃষ্টি করে, এবং তাঁর ধারণাসমূহ বিশ্বব্যাপী অনেক গবেষক ও রাজনীতিকদের জন্য প্রাসঙ্গিক রয়েছে।