আফগানিস্তানে সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ শুরু হয় ১১ সেপ্টেম্বর ২০০১ সালের সন্ত্রাসী হামলার ফলস্বরূপ, যখন আল-কায়েদার নেতৃত্বে খাদেম বিন লাদেন যুক্তরাষ্ট্রে হামলা চালায়। এই যুদ্ধটি বৈশ্বিক রাজনীতিতে একটি মোড় ঘুরিয়ে দেয় এবং এটি শুধুমাত্র আফগানিস্তানকেই নয়, বরং বহু বছর ধরেই আন্তর্জাতিক সম্পর্ককেও পরিবর্তন করে।
আফগানিস্তান ঐতিহাসিকভাবে সংঘাত এবং যুদ্ধের স্থান ছিল। ১৯৮৯ সালে সোভিয়েত বাহিনী প্রত্যাহারের পর দেশটি একটি গৃহযুদ্ধে প্রবাহিত হয়, যা বিভিন্ন ফ্র্যাকশনের উত্থান ঘটিয়েছিল, বিশেষ করে তালেবানের মতো চরমপন্থী গোষ্ঠীগুলির। ১৯৯৬ সালের মধ্যে তালেবান দেশটির অধিকাংশ নিয়ন্ত্রণ নিয়ে stringent ইসলামী শাসন প্রতিষ্ঠা করে, যা আল-কায়েদার মতো সন্ত্রাসীদের জন্য আশ্রয়স্থল প্রদান করে।
১৯৯০-এর দশকে আল-কায়েদা আফগানিস্তানে তার পদক্ষেপকে মজবুত করে, দেশটিকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং তাদের aliados এর বিরুদ্ধে হামলার পরিকল্পনা এবং প্রস্তুতির জন্য একটি ভিত্তি হিসাবে ব্যবহার করে। ধারাবাহিক হামলা এবং গোষ্ঠীর ক্রমবর্ধমান প্রভাব আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের হস্তক্ষেপের প্রয়োজনীয়তা সৃষ্টি করে।
১১ সেপ্টেম্বর ২০০১ সালের হামলার পর, যুক্তরাষ্ট্র সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করে এবং তালেবান শাসনকে উৎখাত এবং আল-কায়েদাকে বিনাশের লক্ষ্যে "অবরুদ্ধ স্বাধীনতা" অপারেশন শুরু করে। অক্টোবর ২০০১ সালে একটি তীব্র বিমান অভিযান শুরু হয়, যা আফগানিস্তানে কৌশলগত লক্ষ্যে হামলা পরিচালনা করে।
তালেবানের বিভিন্ন শত্রুর সমন্বয়ে গঠিত উত্তর সঙ্ঘের সমর্থনের সাথে, মার্কিন সেনা দ্রুত কাবুল এবং অন্যান্য বড় শহর দখল করে ফেলে, যা ২০০১ সালের ডিসেম্বর মাসে তালেবান শাসনের পতন ঘটায়। এই ঘটনা একটি সংকেত হয়ে ওঠে, তবে দেশের ভবিষ্যৎ সম্পর্কে অনেক প্রশ্ন রেখে যায়।
তালেবান শাসনের পতনের পর, আফগানিস্তান পুনর্গঠন এবং মানবিক সহায়তার চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হয়। হামিদ কারজাইয়ের নেতৃত্বাধীন নতুন সরকার গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠান প্রতিষ্ঠার চেষ্টা করে, কিন্তু নিরাপত্তার সমস্যাগুলি বাড়তে থাকে। তালেবান এবং অন্যান্য গোষ্ঠীরা তাদের কার্যক্রম পুনরায় শুরু করে, যা নতুন সহিংসতার প্রেক্ষাপট তৈরি করে।
আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়, ন্যাটো এবং জাতিসংঘসহ আফগানিস্তানকে সহায়তা করতে সক্ষম হয়, আফগান নিরাপত্তা বাহিনীকে প্রশিক্ষণ ও প্রস্তুতির কার্যক্রম পরিচালনা করে। তবে দুর্নীতি, দারিদ্র্য এবং অবকাঠামোর অভাবের মতো সমস্যা পুনর্গঠনকে বাধাগ্রস্ত করে।
২০০৬ সালে আফগানিস্তানে সহিংসতা পুনরায় বেড়ে যায় এবং তালেবান সরকারী বাহিনী এবং আন্তর্জাতিক বাহিনীর বিরুদ্ধে সংগঠিত হামলা পরিচালনা করতে শুরু করে। আফগানিস্তানে মাদক পাচারের সমস্যাগুলি পরিস্থিতিকে আরো খারাপ করে, কারণ অনেক স্থানীয় নিরাপত্তা সঙ্কটের উপর নির্ভরশীল ছিল।
২০১০ সালের মধ্যে, যুদ্ধটি মার্কিন ইতিহাসে সবচেয়ে দীর্ঘস্থায়ী সংঘাতগুলির মধ্যে একটি হয়ে দাঁড়ায়। বাড়তে থাকা সহিংসতার প্রতিক্রিয়ায়, যুক্তরাষ্ট্র আফগানিস্তানে তাদের বাহিনীর সংখ্যা বাড়িয়ে দিয়েছিল। এই সিদ্ধান্তটি দেশে এবং বিদেশের মধ্যে বিতর্ক সৃষ্টি করে।
২০১৮ সালে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং তালেবানের মধ্যে শান্তি চুক্তির জন্য আলোচনা শুরু হয়। এই আলোচনা দীর্ঘ সময় ধরে যুদ্ধের পর এবং আফগান জনগণ এবং আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের মধ্যে যুদ্ধের প্রতি ক্লান্তির চিহ্নগুলির পরে সম্ভব হয়।
ফেব্রুয়ারি ২০২০ সালে, যুক্তরাষ্ট্র এবং তালেবান একটি চুক্তিতে স্বাক্ষর করে, যা মার্কিন বাহিনী প্রত্যাহার এবং আফগান সরকারের এবং তালেবানের মধ্যে শান্তি আলোচনা শুরু করতে প্রস্তাবিত করে। তবে দেশের পরিস্থিতি অস্থিতিশীল ছিল এবং সহিংসতা অব্যাহত ছিল।
আগস্ট ২০২১ সালে, তালেবান আবার আফগানিস্তানে ক্ষমতা দখল করে, যা বৈশ্বিক নিন্দা এবং মানবিক সংকট সৃষ্টি করে। এই ঘটনা অনেকের জন্য একটি ধাক্কা হয়ে দাঁড়ায়, কারণ এটি অভ্যন্তরীণ নীতির ব্যর্থতা এবং আন্তর্জাতিক হস্তক্ষেপের ফলস্বরূপ হিসাবে দেখা হয়।
তালেবানের ক্ষমতায় ফিরে আসা দেশের মানবাধিকার ভবিষ্যতের জন্য অসংখ্য প্রশ্ন উঠিয়েছে, বিশেষ করে মহিলাদের এবং সংখ্যালঘুদের জন্য। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের কাছে নতুন শাসনের প্রতিক্রিয়া জানানো এবং মানবিক সংকটের মধ্যে আফগান জনগণের সহায়তার প্রয়োজনীয়তা বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়ায়।
আফগানিস্তানে সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ দেশের ইতিহাস এবং বৈশ্বিক রাজনীতিতে গভীর প্রভাব ফেলেছে। এই যুদ্ধ, যা প্রায় দুই দশক ধরে চলেছিল, বিশাল মানবিক ক্ষতির ফলস্বরূপ এবং সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের পদ্ধতিগুলি সম্পর্কিত অনেক প্রশ্ন উত্থাপন করেছে। আফগানিস্তান এখনও বৈশ্বিক সংঘাতের কেন্দ্রে অবস্থান করছে, এবং দেশের ভবিষ্যৎ অজানা রয়ে গেছে। এই যুদ্ধ থেকে প্রাপ্ত পাঠগুলি আন্তর্জাতিক সম্পর্ক এবং কৌশলগত পরিকল্পনার উপর অনেক বছর ধরে প্রভাব ফেলে যাবে।