ঐতিহাসিক এনসাইক্লোপিডিয়া
বাংলাদেশের রাষ্ট্রীয় ব্যবস্থা ১৯৭১ সালে দেশটির প্রতিষ্ঠার পর উল্লেখযোগ্য বিবর্তনের মধ্য দিয়ে গেছে, যখন এটি রক্তক্ষয়ী স্বাধীনতা যুদ্ধের পর স্বাধীনতা অর্জন করে। এর গঠন প্রক্রিয়ায় বাংলাদেশ রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা, অর্থনৈতিক সমস্যাগুলি এবং সামাজিক পরিবর্তনসহ অনেক অভ্যন্তরীণ এবং বাইরের চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হয়েছে। দেশটির রাষ্ট্র ব্যবস্থা বিবর্তনের বিভিন্ন পর্যায় অতিক্রম করেছে, যার মধ্যে রয়েছে প্রজাতন্ত্রের প্রতিষ্ঠা, সংস্কার, গণতান্ত্রিকরণ এবং দেশের স্থিতিশীলতার জন্য প্রয়োজনীয় প্রতিষ্ঠানগুলোর বিকাশ।
স্বাধীনতা লাভের আগে বাংলাদেশ ছিল ব্রিটিশ ভারতের একটি অংশ, যা ১৯৪৭ সালে দুইটি স্বাধীন দেশে বিভক্ত হয় - ভারত এবং পাকিস্তানে। বিভাজনের ফলস্বরূপ, পূর্ব পাকিস্তানের পূর্ব অংশ, বর্তমান বাংলাদেশের অঞ্চল, পূর্ব পাকিস্তান হয়ে ওঠে। এই সময়টা পশ্চিম পাকিস্তানের সামরিক এবং রাজনৈতিক অভিজাতদের শাসনের দ্বারা চিহ্নিত হয়েছিল, যা রাজনৈতিক এবং সামাজিক উত্তেজনা সৃষ্টি করেছিল। পূর্ব পাকিস্তান তার রাজনৈতিক এবং অর্থনৈতিক মার্জিনালাইজেশন নিয়ে অসন্তুষ্ট ছিল, যা স্বায়ত্তশাসন এবং স্বাধীনতার জন্য আন্দোলনগুলোর উত্থানে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছিল।
পূর্ব পাকিস্তানের রাষ্ট্র ব্যবস্থা ইসলামাবাদে কেন্দ্রীয় কর্তৃপক্ষের রাজনৈতিক নিয়ন্ত্রণের অধীনে ছিল, যা স্থায়ী অভ্যন্তরীণ সংঘাত সৃষ্টি করেছিল। ১৯৫০-এর দশকে সাংস্কৃতিক এবং ভাষাগত পার্থক্য ভিত্তিক প্রতিবাদের একটি ঢেউ শুরু হয়, কারণ পূর্ব পাকিস্তানে বাংলা সংস্কৃতি এবং ভাষা প্রাধান্য ছিল, যখন পশ্চিম পাকিস্তানে উর্দু এবং আরবী সংস্কৃতি প্রাধান্য পেত।
১৯৭১ সালের রক্তাক্ত স্বাধীনতা যুদ্ধের পর, বাংলাদেশ একটি স্বাধীন রাষ্ট্রে পরিণত হয়। রাষ্ট্র ব্যবস্থার বিবর্তনের প্রথম পদক্ষেপ ছিল ১৯৭২ সালের সংবিধান গ্রহণ, যা দেশটিকে একটি সংসদীয় প্রজাতন্ত্র হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করে। সংবিধান ক্ষমতাসমূহের বিভাজন এবং গণতান্ত্রিক পরিচালনার নীতিমালা স্থাপন করে। স্বাধীনতার প্রথম বছরে দেশটি যুদ্ধের বিধ্বংস থেকে পুনরুদ্ধার এবং জাতীয় প্রতিষ্ঠান নির্মাণের উপর বিশালভাবে মনোনিবেশ করেছিল।
বাংলাদেশের প্রথম প্রেসিডেন্ট শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে একটি নতুন রাজনৈতিক ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করা হয়েছিল, যা গণতন্ত্র, সামাজিক ন্যায় এবং সমতার নীতির উপর ভিত্তি করে একটি ন্যায়সঙ্গত সমাজ গঠনের দিকে অগ্রসর হয়। তবে দেশে রাজনৈতিক পরিস্থিতি প্রশাসনের সমস্যা, অর্থনৈতিক অসুবিধা এবং অভ্যন্তরীণ সংঘাতের কারণে অস্থিতিশীল ছিল। ১৯৭৫ সালে শেখ মুজিবুর রহমানকে সামরিক অভ্যুত্থানের সময় হত্যা করা হয়, যা দেশে সামরিক স্বৈরশাসনের স্থাপন করে।
শেখ মুজিবুর রহমানের হত্যার পর বাংলাদেশে রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা এবং কর্তৃত্ববাদী শাসনের একটি পর্ব শুরু হয়। প্রথমে ক্ষমতা সেনাবাহিনী সরকারের হাতে ন্যস্ত হয়, যা সামরিক অভ্যুত্থান এবং কঠোর নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে দেশ পরিচালনা করে। জেনারেল হোসেন মুহম্মদ এরশাদ ১৯৮২ সালে ক্ষমতায় আসেন, এবং একটি স্বৈরতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করেন। তিনি দেশের নেতৃত্ব গ্রহণ করেন, দাবি করে যে দেশে সংকট এবং অর্থনৈতিক সমস্যাগুলি মোকাবেলার জন্য একটি শক্তিশালী হাতের প্রয়োজন।
এরশাদের শাসন কেন্দ্রীকৃত ক্ষমতার বৈশিষ্ট্য, বিরোধীদের বিরুদ্ধে কঠোর দমন এবং কিছু অর্থনৈতিক সংস্কারের জন্য পরিচিত। এ সময় কিছুটা স্থিতিশীলতা লক্ষ্য করা যায়, তবে রাজনৈতিক স্বাধীনতা সীমিত ছিল। ১৯৯০ সালে গণবিক্ষোভ এবং বিরোধীদলীয় চাপের ফলে এরশাদ রাষ্ট্রপতির পদ ত্যাগ করতে বাধ্য হন, এবং বাংলাদেশ গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় ফিরে আসে।
এরশাদের স্বৈরতন্ত্রের পতনের পর বাংলাদেশে রাজনৈতিক বিবর্তনের একটি নতুন পর্যায় শুরু হয়। দেশটি বহুদলীয় ব্যবস্থায় ফিরে আসে, এবং ১৯৯১ সালে প্রথম বহুদলীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। নির্বাচনে বাংলাদেশ জাতীয় পার্টি (বিএনপি) বিজয়ী হয়, যার নেতৃত্বে ছিলেন বেগম খালেদা জিয়া, যিনি প্রধানমন্ত্রী হন। এই সময়টি বিএনপি ও আওয়ামী লীগের মধ্যে রাজনৈতিক প্রতিযোগিতা দ্বারা চিহ্নিত হয়, যার নেতৃত্বে ছিলেন শেখ হাসিনা, শেখ মুজিবুর রহমানের কন্যা।
এই সময়কালে অনুসৃত সংস্কারগুলি গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানগুলোর শক্তিশালীকরণ এবং অর্থনৈতিক অবকাঠামোর বিকাশের দিকে মনোনিবেশ করা হয়েছিল। তবে রাজনৈতিক জীবন বিরোধীদলগুলোর মধ্যে সংঘাত এবং প্রশাসনে অস্থিতিশীলতার কারণে উত্তেজিত ছিল। দলের মধ্যে প্রতিযোগিতা একাধিক রাজনৈতিক সংকটে এবং সহিংসতা ও বিশৃঙ্খলার উপাদানে নেতৃত্ব দেয়।
২০০০-এর দশকের শুরুর দিকে বাংলাদেশ রাজনৈতিক এবং অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতার দিকে আরও অগ্রসর হতে শুরু করে। ২০০৯ সালে নির্বাচনে আওয়ামী লীগ বিজয়ী হয়, এবং শেখ হাসিনা প্রধানমন্ত্রী হন। তারপর থেকে দেশটি গণতন্ত্রের বিকাশ এবং অর্থনৈতিক বৃদ্ধির পথে অব্যাহত রয়েছে। একই সময়ে, দেশে রাজনৈতিক প্রতিযোগিতা বজায় রয়েছে, এবং দারিদ্র্য ও সামাজিক অসমতা মতো অর্থনৈতিক সমস্যা এখনও প্রাসঙ্গিক।
বাংলাদেশের আধুনিক রাষ্ট্র ব্যবস্থা একটি সংসদীয় প্রজাতন্ত্র হিসাবে গঠিত হয়েছে যার উন্নত গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠান রয়েছে, যদিও রাজনৈতিক স্বচ্ছতা, মানবাধিকার এবং দুর্নীতির বিরুদ্ধে লড়াই নিয়ে প্রশ্ন রয়ে গেছে। আওয়ামী লীগ এবং বিএনপির মতো দলগুলি রাজনৈতিক ক্ষেত্রে একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে, এবং সামাজিক ও অর্থনৈতিক সংস্কার জনগণের জীবনের উন্নতির লক্ষ্যে উদ্যোক্তা।
বাংলাদেশের রাষ্ট্র ব্যবস্থার বিবর্তন বিভিন্ন পর্যায় অতিক্রম করেছে, স্বাধীনতা থেকে গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠান এবং রাজনৈতিক স্থিতিশীলতার দিকে। সামরিক শাসন এবং রাজনৈতিক সংকটসহ জটিল পথ সত্ত্বেও, দেশটি বহুদলীয় ব্যবস্থাসহ একটি সংসদীয় প্রজাতন্ত্র হিসাবে প্রতিষ্ঠিত হতে সক্ষম হয়েছে। বর্তমানে বাংলাদেশ নতুন চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হয়ে এবং নাগরিকদের জন্য উচ্চমানের জীবন নিশ্চিত করতে চেষ্টা করে এগিয়ে যাচ্ছে।