ফ্রাঙ্ক রাজ্যের গঠন
বেলজিয়ামের মধ্যযুগ শুরু হয় রোমান সাম্রাজ্যের পতন ও জার্মান জাতিগুলোর আগমনের সাথে, যার মধ্যে প্রধান ভূমিকা পালন করে ফ্রাঙ্করা। ৫ম শতাব্দীতে রাজা ক্লোভার I-এর নেতৃত্বে ফ্রাঙ্করা উল্লেখযোগ্য অঞ্চলে একত্রিত হয়, যার মধ্যে বর্তমানে বেলজিয়া হিসেবে পরিচিত ভূমি অন্তর্ভুক্ত ছিল। এটি মেরোভিংগিয়ান সময়ের প্রাথমিক মধ্যযুগীয় রাজ্যের সূচনা করে, যা ৮ম শতাব্দী পর্যন্ত স্থায়ী হয়েছিল।
প্রাথমিক মধ্যযুগের সময়ে খ্রিষ্টধর্মের বিস্তার ঘটে, যা অঞ্চলটির বিকাশে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা পালন করে। সেন্ট আমান্ড ও সেন্ট লাম্বার্টের মতো মিশনারিরা স্থানীয় জনসংখ্যাকে খ্রিষ্টান ধর্মে ধর্মান্তরের জন্য সক্রিয়ভাবে চেষ্টা করেন। গির্জা ও মঠগুলি কেবলমাত্র আধ্যাত্মিক কেন্দ্র নয়, বরং সাংস্কৃতিক কেন্দ্র হিসাবেও প্রতিষ্ঠিত হয়। এই সময়ে অঞ্চলে সামন্তবাদের জন্য মৌলিক ভিত্তি গড়ে উঠে।
কারোলিংগিয়ান সাম্রাজ্য ও ফ্রাঙ্ক সাম্রাজ্যের বিভাজন
৮ম শতাব্দীতে মেরোভিংগিয়ানদের পরিবর্তে কারোলিংগিয়ানরা আসে, সবচেয়ে পরিচিত শাসক ছিলেন চার্লস মহান। তাঁর শাসনামলে বেলজিয়াম একটি বিশাল সাম্রাজ্যের অংশ হয়ে ওঠে, যা পশ্চিম ইউরোপের অধিকাংশ অঞ্চলে বিস্তৃত ছিল। চার্লস মহান ক্ষমতার শক্তিশালীকরণ, খ্রিষ্টধর্মের বিকাশ এবং কার্যকর প্রশাসনিক ব্যবস্থা নির্মাণের প্রতি বিশেষ গুরুত্ব দেন। তাঁর শাসন অঞ্চলের জন্য তুলনামূলক সমৃদ্ধি ও স্থিতিশীলতা নিয়ে আসে।
চার্লস মহানর মৃত্যুর পর তাঁর সাম্রাজ্য ৮৪৩ সালের ভার্দেন চুক্তিতে তাঁর নাতিদের মধ্যে বিভক্ত হয়। বেলজিয়াম মধ্য-ফ্রাঙ্ক রাজ্যের অন্তর্ভুক্ত হয়, যা তাড়াতাড়ি বিঘ্নিত হয় এবং অঞ্চলগুলি পূর্ব-ফ্রাঙ্ক ও পশ্চিম-ফ্রাঙ্ক রাজ্যগুলির দখলে চলে যায়। এটি ছোট ছোট সামন্ততন্ত্রের উদ্ভব ঘটায়, যা বৃহৎ রাজাদের প্রাতিষ্ঠানিক ক্ষমতার অধীনে ছিল, তবে বাস্তবে স্থানীয় সনারীদের দ্বারা পরিচালিত হত।
সামন্তবাদ ও শহরের শক্তি বৃদ্ধি
৯ম থেকে ১১তম শতাব্দী পর্যন্ত বেলজিয়াম বহু সামন্তীয় প্রিন্সডম, কাউন্টি ও ডুখির মধ্যে বিভক্ত হয়, যার মধ্যে ফ্ল্যান্ডার্স, ব্রাবান্ত ও লুক্সেমবর্গের কাউন্টিগুলি গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠে। এই অঞ্চলগুলি শক্তিশালী সামন্তীয় শাসকদের দ্বারা পরিচালিত হত, যারা ভূমি ও প্রভাবের জন্য স্থায়ী যুদ্ধ ও সংঘর্ষে লিপ্ত থাকত। সামন্তবাদী ব্যবস্থার একটি মূল উপাদান ছিল কৃষকদের নিজেদের সনারীদের প্রতি নির্ভরতামূলক অবস্থানে থাকা, যারা তাদের ভাড়া পরিশোধ করত এবং নিরাপত্তার জন্য বাধ্যবাধকতা গ্রহণ করত।
১১-১২ শতাব্দীতে শহর ও শহরীয় কমিউনের বৃদ্ধি শুরু হয়। ফ্ল্যান্ডার্স, বিশেষ করে ব্রুগস, ইপরে ও ঘেন্টের শহরগুলি কাপড় ও উল জাতীয় পণ্যের উৎপাদনের কারণে ইউরোপের একটি গুরুত্বপূর্ণ বাণিজ্য কেন্দ্র হয়ে ওঠে। শহরের বুর্জোয়া, যারা বাণিজ্যের মাধ্যমে ধন গড়ে তুলেছে, তারা রাজনীতিতে প্রভাব বিস্তার করতে শুরু করে এবং সামন্তদের শাসনের বিরুদ্ধে প্রতিস্তান অর্জন করে। এটি শহরীয় কমিউনগুলির উদ্ভব ঘটায়, যারা স্বায়ত্তশাসন ও আত্ম-প্রশাসনের জন্য সংগ্রাম করত।
গণ crusades এবং অর্থনৈতিক উত্থান
১১ শতকের শেষের দিকে শুরু হওয়া গণ crusades বেলজিয়ামের জীবনে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা পালন করে। অনেক অভিজাত পরিবার পবিত্র ভূখণ্ডে অভিযানে অংশগ্রহণ করে, যা পশ্চিম ইউরোপ ও পূর্বের মধ্যে সংযোগ আরও দৃঢ় করে। বেলজিয়ামের শহরগুলি, যেমন ব্রুগস, আন্তর্জাতিক বাণিজ্যে সক্রিয় অংশগ্রহণ করে, যা অঞ্চলের অর্থনৈতিক উত্থানে সাহায্য করে। উত্তরের সাগরের মাধ্যমে নাবিক পথগুলি এবং ইংল্যান্ড ও স্ক্যান্ডিনেভিয়ার সাথে বাণিজ্য ফ্লান্ডার্সকে ইউরোপের অন্যতম সমৃদ্ধ অঞ্চল করে তোলে।
১২-১৩ শতকে বেলজিয়ামে শিল্প ও গিল্ড সংগঠনগুলি দ্রুত বিকাশ করতে শুরু করে। শহরের শিল্পীরা গিল্ড ও সেক্টরে সংগঠিত হয়ে উৎপাদন ও পণ্যের মান নিয়ন্ত্রণ করেন। এই সময়ে সাংস্কৃতিক ও স্থাপত্য বিকাশ ঘটে: বড় শহরগুলিতে ঐশ্বর্যময় গির্জাগুলি নির্মিত হয়, যেমন ঘেন্টে সেন্ট বাভোনের গির্জা ও ব্রাসেলসে সেন্ট মাইকেল ও সেন্ট গুডুলার গির্জা।
স্বায়ত্তশাসনের জন্য সংগ্রাম ও সামন্তীয় সংঘর্ষ
বেলজিয়ামের মধ্যযুগীয় ইতিহাসের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ মাইলফলক ছিল শহরগুলির সামন্তীয় শাসকদের বিরুদ্ধে স্বাধীনতার জন্য সংগ্রাম। ১৪ শতকে ফ্ল্যান্ডার্স ও অন্যান্য অঞ্চলে একাধিকবার বাইরে থেকে চাপ, বিশেষ করে ফরাসি রাজাদের পক্ষ থেকে, যাদের ধনবান ফ্লেমিশ শহরগুলিকে নিজেদের অধীনে আনতে চেষ্টা করত, বিরুদ্ধে বিদ্রোহ ঘটে। উক্ত সংঘর্ষগুলির মধ্যে সবচেয়ে পরিচিত যুদ্ধ ছিল ১৩০২ সালের কুর্ট্রে যুদ্ধ, যা "সোনালী খোঁচা যুদ্ধ" নামেও পরিচিত, যেখানে ফ্লেমিশ সৈনিকরা ফরাসি নাইটদের বিরুদ্ধে বিজয়ী হয়।
বাইরের হুমকির পাশাপাশি, বেলজিয়ামে প্রায়শই সামন্তীয় সংঘর্ষ দেখা দেয়। কাউন্টি ও ডুখিরা একে অপরের বিরুদ্ধে অঞ্চল ও বাণিজ্য পথের নিয়ন্ত্রণের জন্য যুদ্ধ করত। এই সংঘর্ষগুলি অঞ্চলের দুর্বলতা সৃষ্টি করে, কিন্তু একইসাথে স্থানীয় পরিচিতি গঠনে ও শহরের স্বায়ত্তশাসনের শক্তিবৃদ্ধিতে সহায়তা করে। বেলজিয়ামের শহরগুলি ক্রমবর্ধমানভাবে স্বাধীন অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক একক হিসেবেও গড়ে ওঠে।
মধ্যযুগের অবসান ও বুরগান্ডির উত্থান
১৪ শতকের শেষের দিকে বেলজিয়াম বুরগান্ডীয় বাড়ির অধীনে আসে, যা বিভিন্ন সামন্তীয় মালিকানাগুলিকে একটি রাজ্যে একত্রিত করে। ফিলিপ সাহসী থেকে শুরু করে বুরগান্ডীয় ডিউকরা তাদের অধিকার বাড়াতে সক্রিয়ভাবে কাজ করে, এবং বেলজিয়াম তাদের অঞ্চলগুলির একটি কৌশলগত অংশ হয়ে ওঠে। এই সময়কালটি রাজনৈতিক সংহতি ও কেন্দ্রীয় সরকারের শক্তিশালীকরণের সঙ্গে চিহ্নিত হয়।
বুরগান্ডির অধীনে ফ্ল্যান্ডার্স, ব্রাবান্ত ও অন্যান্য অঞ্চলের শহরগুলি সমৃদ্ধিতে অব্যাহত ছিল। বাণিজ্য, শিল্প ও কারুশিল্প নতুন বিকাশের স্তরে পৌঁছায়। ব্রুগস, এন্টওয়ার্প ও ঘেন্টের মতো শহরগুলি ইউরোপে সংস্কৃতি ও বাণিজ্যের কেন্দ্র হয়ে ওঠে। কিন্তু বুরগান্ডীয় রাজবংশের শক্তি বৃদ্ধির সাথে শহরগুলির কেন্দ্রীয়ীকরণের নীতির বিরুদ্ধে বিরোধও বৃদ্ধি পেতে থাকে। এই বিরোধ নতুন সময়েও অব্যাহত থাকে।