পাথরের যুগ এবং প্রথম বসতি
বেলজিয়ার ইতিহাস শুরু হয় পাথরের যুগ থেকে, যখন বর্তমান বেলজিয়ার অঞ্চলে প্রাথমিক শিকারী ও সংগৃহীত সম্প্রদায়গুলি বসবাস করত। এখানে মানব উপস্থিতির সবচেয়ে পুরনো উক্তি প্রায় ৪০০,০০০ বছর আগে থেকে। এই সময় আবহাওয়া অবস্থার কঠোরতা ছিল এবং মানুষগুলি মহাউষ্ণকালীন কঠিন পরিস্থিতিতে বাঁচতে বাধ্য হয়েছিল। এই প্রাচীন মানুষগুলি বড় প্রাণী শিকার এবং প্রকৃতির উপহার সংগ্রহ করতে পাথরের তৈরি প্রাথমিক সরঞ্জাম ব্যবহার করত।
প্রায় ১০,০০০ বছর আগে আবহাওয়া পরিস্থিতির উন্নতির সাথে সাথে, মেসোলিথের শুরু হয়, যার ফলে মানুষগুলি আরও উন্নত সরঞ্জাম ও প্রযুক্তি তৈরিতে আগ্রহী হয়। ধীরে ধীরে শিকারী-সংগ্রাহকরা আরও স্থায়ী জীবন যাপনের দিকে পেশ হয়েছিল, প্রথম বসতিগুলি প্রতিষ্ঠা করতে শুরু করেছিল। এই সময় মানুষগুলি ছোট ছোট বাসস্থান তৈরি করতে, মাটি ব্যবহার করতে এবং পাথরের প্রক্রিয়াকরণ প্রযুক্তি উন্নত করতে শুরু করে।
নেওলিথ: কৃষি সংস্কৃতির উন্মোচন
প্রায় ৬,০০০ বছর আগে বেলজিয়ার অঞ্চলে নেইলিথের উদ্ভব ঘটে — এটি পরিবর্তনের সময়। এই সময় মানুষরা কৃষি এবং পশুপালন শিখে নেয়। কৃষির উন্মোচন সমাজে বিশাল পরিবর্তন আনে: মানুষগুলি স্থায়ী বসতি গড়ে তুলে, পশু পালন এবং জমি চাষ করতে শুরু করে। এই সময়ের একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কার ছিল বৃহৎ মেগালিথিক নির্মাণ, যা সেই সময়ের ধর্মীয় ও সাংস্কৃতিক প্রথার কথা মনে করিয়ে দেয়।
বর্তমান বেলজিয়ার অঞ্চলের নেওলিথ সংস্কৃতি একটি বৃহত্তর ইউরোপীয় সংস্কৃতির অংশ ছিল, যা লিনিয়ার-স্ট্রিপড মাটির সৈনিকের সংস্কৃতি নামে পরিচিত। মানুষগুলি নদী ও নালের চারপাশে বসতি স্থাপন করতে শুরু করে, যাতে ফসল চাষ এবং পশুর যত্নের জন্য প্রয়োজনীয় জল সরবরাহের ব্যবস্থা করতে পারে। এই সময় সামাজিক বৈষম্যের প্রথম চিহ্ন দেখা দিতে শুরু করে: ধনশালীতা পার্থক্যগুলি বেশি পশু, জমি বা ভালো আবাসনের মাধ্যমে প্রকাশ পেতে পারে।
তাম্রযুগ এবং প্রাথমিক সমাজ
খ্রিষ্টপূর্ব ২০০০ সালের দিকে তাম্রযুগ শুরু হয়, যা অঞ্চলের ইতিহাসে একটি নতুন যুগকে চিহ্নিত করে। এই সময় মানুষরা তামা ও টিনের সংমিশ্রণের কাজে তাম্র ব্যবহার করা শিখে, আরও মজবুত এবং কার্যকরী সরঞ্জাম ও অস্ত্র তৈরি করতে শুরু করে। এটি কারিগরি ও বাণিজ্যের উন্নতির দিকে নিয়ে যায়। বাণিজ্যের পথগুলি ইউরোপের বিভিন্ন অঞ্চলের সাথে সংযুক্ত হতে শুরু করে এবং বেলজিয়ার অঞ্চলে অন্যান্য সংস্কৃতির প্রভাবও শুরু হয়, যাদের মধ্যে রয়েছে কেল্টস এবং জার্মানরা।
প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলি দেখায় যে এই অঞ্চলে ছোট ছোট উপজাতীয় সমিতিগুলি ছিল, যারা কৃষি, শিকার, মাছ ধরা এবং শিল্প কলার কাজে রত ছিল। তামা শুধু সরঞ্জাম তৈরিতেই নয়, গহনা তৈরিতেও ব্যবহার করা হত, যা সমাজে জটিল সামাজিক কাঠামো থাকার ইঙ্গিত দেয়। সমাজে হাতিদের একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা ছিল, যারা উল্লেখযোগ্য প্রভাব এবং সম্পদ নিয়ন্ত্রণে অধিকারী ছিল।
লোহার যুগ এবং কেল্টদের আগমন
খ্রিষ্টপূর্ব ৮ম শতাব্দীতে তাম্রযুগের স্থানে লোহার যুগ আসতে শুরু করে। লোহার ব্যবহার সরঞ্জাম ও অস্ত্র তৈরির জন্য প্রধান উপকরণ হয়ে ওঠে, যা প্রাচীন জনগণের জীবনের মান উল্লেখযোগ্যভাবে উন্নত করে। এই সময় বর্তমান বেলজিয়ার ভূখণ্ডে কেল্টিক উপজাতিরা প্রবাহিত হতে শুরু করে, যারা স্থানীয় জনসংখ্যার উপর উল্লেখযোগ্য প্রভাব ফেলে। এই সময় এখানে বসবাসকারী সবচেয়ে পরিচিত উপজাতির মধ্যে ছিল বেলগি, যার নাম থেকে দেশের আধুনিক নাম এসেছে।
কেল্টরা দক্ষ কুঠির ও মিস্ত্রি ছিল, এবং তাদের সংস্কৃতি পশ্চিম ইউরোপজুড়ে ছড়িয়ে পড়ে। তারা নতুন প্রযুক্তি এবং কৃষিকাজের পদ্ধতি নিয়ে আসে, যা অঞ্চলের আরও উন্নয়নে সহায়ক হয়। এই সময়ে বিভিন্ন কেল্টিক উপজাতির মধ্যে বাণিজ্য এবং বিনিময়ও উন্নত হতে শুরু করে। প্রত্নতত্ত্বের খননগুলি সুরক্ষিত বসতিগুলির অস্তিত্ব নির্দেশ করে, যা কেবল বসবাসের স্থান নয়, বরং কারিগরি ও বাণিজ্যের কেন্দ্র হিসাবেও কাজ করত।
রোমান বিজয়
খ্রিষ্টপূর্ব ৫৭ সালে জুলিয়াস সিজারের নেতৃত্বে রোমানরা কেল্টিক উপজাতিরা দ্বারা বসবাসকারী অঞ্চলগুলি দখল করার অভিযান শুরু করে। বর্তমান বেলজিয়ার অঞ্চল রোমান সাম্রাজ্যের অন্তর্ভুক্ত হয় এবং গাল প্রদেশের অংশ হয়ে ওঠে। এটি স্থানীয় জনগণের জীবনে উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন নিয়ে আসে। রোমানরা সড়ক, জলপ্রবাহ এবং অন্যান্য অবকাঠামোগত প্রকল্প তৈরি করে, যা শহর এবং বাণিজ্যের উন্নয়নে সহায়তা করে।
রোমান প্রভাব জীবনের সকল ক্ষেত্রে দৃশ্যমান ছিল। স্থানীয় জনগণ রোমান রীতিনীতি, ধর্ম এবং ভাষা গ্রহণ করতে শুরু করে। তবুও, কেল্টিক সংস্কৃতির অনেক দিক বিশেষত গ্রামীণ এলাকায় বিদ্যমান ছিল। এই সময়ের একটি সবচেয়ে পরিচিত প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কার হল টনগেরেন শহর, যা রোমানদের দ্বারা প্রতিষ্ঠিত হয় এবং গাল ও জার্মানির মধ্যে বাণিজ্যপথের একটি গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্র হয়ে ওঠে।
রোমান যুগ অঞ্চলটিকে বৃহত্তর ভূমধ্যসাগরীয় সভ্যতার সাথে একীভূত করে। তবে খ্রিষ্টাব্দের ৩ শতাব্দীতে রোমান সাম্রাজ্য জার্মানী উপজাতির আক্রমণের কারণে দুর্বল হতে শুরু করে। ফ্রাঙ্কদের আক্রমণ অবশেষে অঞ্চলে রোমান কর্তৃপক্ষের ধসে যাওয়া এবং নতুন রাজনৈতিক গঠনের সূচনা করে, যা বেলজিয়াতে মধ্যযুগের শুরুতে চিহ্নিত করে।