ঐতিহাসিক এনসাইক্লোপিডিয়া
ক্যামেরুনের রাষ্ট্রীয় ব্যবস্থা বিভিন্ন পর্যায়ে বিবর্তনের মধ্য দিয়ে গেছে, ঔপনিবেশিক শাসনের সময়কাল থেকে শুরু করে স্বাধীনতা লাভের মধ্য দিয়ে এবং আজকের আধুনিক রাজনৈতিক ব্যবস্থার দিকে এগিয়ে। ক্যামেরুনের রাজনৈতিক কাঠামোর বিবর্তন অভ্যন্তরীণ এবং বাইরের নীতির পরিবর্তন এবং বিভিন্ন ঐতিহাসিক পর্যায়ে রাষ্ট্রটির সামনে আসা চ্যালেঞ্জের প্রতি প্রতিক্রিয়াকে প্রতিফলিত করে। ক্যামেরুনের রাষ্ট্রীয় ব্যবস্থার ইতিহাস স্বাধীনতার জন্য সংগ্রাম, ফেডারেল মডেল থেকে একক রাষ্ট্রে রূপান্তর এবং ২০ শতকের শেষে অথরিটেরিয়ান শাসনের প্রতিষ্ঠার মতো গুরুত্বপূর্ণ ঘটনাবলীকে নির্দেশ করে।
ক্যামেরুন একটি স্বাধীন রাষ্ট্র হয়ে ওঠার আগে, এর অঞ্চল বিভিন্ন ইউরোপীয় দেশের ঔপনিবেশিক স্বার্থের লক্ষ্যবস্তু ছিল। ১৮৮৪ সাল থেকে ক্যামেরুন জার্মান সাম্রাজ্যের নিয়ন্ত্রণে ছিল, এটি তাদের ঔপনিবেশ হয়ে ওঠে। প্রথম বিশ্বযুদ্ধে জার্মানির পরাজয়ের পর, ১৯১৯ সালে অঞ্চলটি ফ্রান্স এবং ব্রিটেনের মধ্যে ভাগ করা হয়। ফরাসি অংশ ক্যামেরুন, যা অধিকতর বড় ছিল, ফ্রান্সের নিয়ন্ত্রণে ছিল, যখন ব্রিটিশ অংশটি দুটি অঞ্চলে বিভক্ত ছিল, একটিতে উপকূলে এবং অন্যটি দেশের উত্তর অংশে। ঔপনিবেশিক পর্বে স্থানীয় জনসাধারণ রাজনৈতিক অধিকার থেকে বঞ্চিত ছিল এবং ঔপনিবেশিক কর্তৃপক্ষের নিকট আধিপত্যে ছিল, যা পরে রাজনৈতিক মনোভাবের গঠন এবং স্বাধীনতার আকাঙ্ক্ষায় প্রভাব ফেলেছিল।
ক্যামেরুনের স্বাধীনতার সংগ্রাম ২০ শতকের মধ্যভাগে শুরু হয়, যখন বিভিন্ন জাতীয়তাবাদী আন্দোলন ফরাসি এবং ব্রিটিশ শাসনের বিরুদ্ধে সক্রিয়ভাবে অভিযুক্ত হতে শুরু করে। ১৯৪৯ সালে ক্যামেরুন জাতীয় পার্টি গঠন করা হয়, যা স্বাধীনতা এবং রাজনৈতিক সংস্কারের জন্য আহ্বান জানায়। ১৯৫৫ সালে স্থানীয় জনগণের অধিকারের দাবি জানানোর জন্য প্রথম প্রতিবাদ এবং ধর্মঘট শুরু হয়। এসব ঘটনা ক্যামেরুনে বাড়তি উত্তেজনা এবং ক্রমবর্ধমান রাজনৈতিক কার্যকলাপের দিকে নিয়ে যায়।
১ জানুয়ারি ১৯৬০ সালে স্বাধীনতা ঘোষণা করা হয়, যখন ক্যামেরুন একটি স্বাধীন রাষ্ট্র হয়ে ওঠে। প্রথম প্রেসিডেন্ট হিসেবে আহমাদু আহিদজো নির্বাচিত হন, যিনি দেশটির স্বাধীনতার প্রথমে নেতৃত্ব দেন। ক্যামেরুন দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ পরবর্তী মোড়ে স্বাধীনতা লাভকারী প্রথম আফ্রিকান রাষ্ট্রগুলোর মধ্যে একটি হয়ে ওঠে, যা দেশের পাশাপাশি পুরো আফ্রিকার জন্য গুরুত্বপূর্ণ ছিল।
১৯৬০ সালে স্বাধীনতা অর্জনের পর ক্যামেরুন একটি ফেডারেল রাষ্ট্রে পরিণত হয়, যা দুই ভাগে বিভক্ত — ফরাসি ভাষী এবং ইংরেজি ভাষী ক্যামেরুন। ১৯৬১ সালে ক্যামেরুন ফেডারেশন প্রতিষ্ঠিত হয়, যখন ব্রিটিশ অংশ ফরাসি অংশের সঙ্গে একত্রিত হয়। এই ফেডারেল কাঠামোর কিছু বিশেষত্ব ছিল এবং এটি ইংরেজি ভাষী অঞ্চলগুলোকে নির্দিষ্ট পর্যায়ের স্বায়ত্তশাসন প্রদান করেছিল।
১৯৬১ সালে গৃহীত ক্যামেরুনের প্রথম সংবিধান রাষ্ট্রের গঠনের জন্য গণতান্ত্রিক ভিত্তি তৈরি করেছিল এবং ক্ষমতা ভাগ করার নির্দেশ দেয়। কিন্তু গণতান্ত্রিক যন্ত্রাবলী থাকা সত্ত্বেও, এই পর্যায়ে কেন্দ্রীয় ক্ষমতার শক্তিশালীকরণের একটি প্রবণতা দেখা যেতে লাগল, যা ভবিষ্যতে আরও অথরিটেরিয়ান শাসনের ভিত্তি হয়ে দাঁড়ায়।
১৯৭২ সালে ক্যামেরুন একটি নতুন সংবিধান গ্রহণ করে, যা দেশটিকে একটি ফেডারেল রাষ্ট্র থেকে একটি একক রাষ্ট্রে রূপান্তরিত করে। ১৯৭২ সালের সংবিধান 'একক রিপাবলিক ক্যামেরুন' প্রতিষ্ঠা করে, যেখানে ফেডারেল ব্যবস্থা অদৃশ্য হয়ে যায়। এই পরিবর্তন রাজনৈতিক স্থিতিশীলতার ফলে হয়েছিল, তবে এটি কেন্দ্রীয় সরকারের বিভিন্ন অঞ্চলের উপর নিয়ন্ত্রণ বাড়ানোর একটি প্রচেষ্টাও ছিল। শক্তিশালীকৃত ক্ষমতা প্রেসিডেন্ট আহমাদু আহিদজোকে দেশটি আরও কার্যকরভাবে পরিচালনা করতে সহায়তা করেছিল, তবে ফরাসি এবং ইংরেজি ভাষী অঞ্চলের মধ্যে উত্তেজনা সৃষ্টির কারণ হয়, কারণ ইংরেজি ভাষী নাগরিকরা নিজেদের নিপীড়িত বোধ করতে শুরু করে।
আহিদজোর শাসনে গুরুত্বপূর্ণ রাজনৈতিক এবং অর্থনৈতিক সংস্কারের একটি নম্বর গৃহীত হয়, যা অবকাঠামোর উন্নয়ন ও এক স্থিতিশীল অর্থনীতির সৃষ্টি করতে এবং রাজনৈতিক শৃঙ্খলা প্রতিষ্ঠায় সহায়তা করে। তবুও, রাজনৈতিক ব্যবস্থা এখনও অথরিটেরিয়ান রয়ে গেছে এবং বিরোধীপক্ষে নিপীড়নের মুখোমুখি হতে হয়েছে।
১৯৮২ সালে আহমাদু আহিদজোর পদত্যাগের পরে, পল বিয়া ক্যামেরুনের প্রেসিডেন্ট হন। তার শাসন রাজনৈতিক পরিস্থিতি উন্নত করার প্রতিশ্রুতি দিয়ে শুরু হয়, তবে সময় গড়ানোর সাথে সাথে বিয়ার সরকারের প্রতীক হয়ে ওঠে অথরিটেরিয়ানিজমের। বিয়া রাজনৈতিক ব্যবস্থা স্থিতিশীল করেছিলেন, তবে পাশাপাশি সত্যিকারের সংস্কারের অভাবও প্রদর্শন করেছিলেন, যা ক্যামেরুনের রাজনৈতিক জীবনের গণতন্ত্রীকরণের দিকে উন্নীত হয়েছিল।
১৯৯০এর দশকের শুরুতে, যখন আফ্রিকার মধ্যে গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া জনপ্রিয়তা অর্জন করছিল, তখন ক্যামেরুনেও প্রতিবাদ এবং সংস্কারের দাবী শুরু হয়। এই পরিস্থিতির প্রতিক্রিয়া হিসেবে বিয়া ১৯৯১ সালে একটি সংবিধান গ্রহণ করেন, যা আনুষ্ঠানিকভাবে বহু-দলীয়তা অনুমোদন করে, কিন্তু সমস্ত গুরুত্বপূর্ণ রাজনৈতিক ক্ষমতা প্রেসিডেন্টের হাতে রয়ে যায়। এটি দেশের রাজনৈতিক প্রক্রিয়াতে আস্থা নষ্ট করে এবং দেশের ভিতর এবং বাইরে সমালোচনা সৃষ্টি করে।
ক্যামেরুনের আধুনিক রাজনৈতিক ব্যবস্থা এখনও শক্তিশালী এবং কেন্দ্রীভূত রয়েছে, যেখানে প্রেসিডেন্টের বিস্তৃত ক্ষমতা রয়েছে। ১৯৯৬ সালে গৃহীত একটি সংবিধান ক্যামেরুনকে একটি একক রিপাবলিক হিসাবে সংজ্ঞায়িত করে, যেখানে প্রেসিডেন্ট রাষ্ট্র ও কার্যনির্বাহী শক্তির প্রধান হিসেবে থাকে। তবে প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের জন্য সাধারণত প্রতিযোগিতার অভাব এবং গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ার নীতির লঙ্ঘনের জন্য সমালোচনা করা হয়।
বিদ্যমান রাজনৈতিক এবং সামাজিক সমস্যা, যার মধ্যে দুর্নীতি, মানবাধিকার বিষয় এবং জাতিগত ও ভাষাগত চাপ অন্তর্ভুক্ত, দেশটির জন্য গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হিসেবে অব্যাহত রয়েছে। ২০০৮ সালে সংবিধানে পরিবর্তন করা হয়, যা পল বিয়াকে নতুন মেয়াদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে অনুমতি দেয়, যা দেশের দীর্ঘমেয়াদী ক্ষমতার বিষয়ে আন্তর্জাতিক সমালোচনা এবং উদ্বেগ সৃষ্টি করে।
ক্যামেরুনের রাষ্ট্রীয় ব্যবস্থার বিবর্তন একটি জটিল প্রক্রিয়া, যেখানে রাজনৈতিক ও সামাজিক দিক থেকে অর্জনের পাশাপাশি গভীর সমস্যাও উপস্থিত রয়েছে। একটি স্থিতিশীল এবং গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র গঠনের বহু বছরের প্রচেষ্টার পরও, ক্যামেরুন এখনও গণতন্ত্রের বিকাশ, মানবাধিকারের বিষয় এবং সামাজিক সুবিচার সংক্রান্ত চ্যালেঞ্জগুলির মুখোমুখি হচ্ছে। অথরিটেরিয়ানিজম এবং রাষ্ট্রের ব্যবস্থার অনেক দিকের সঙ্গে সম্পর্কিত সমস্যাগুলি এখনও আলোচনায় রয়ে গেছে এবং দেশের রাজনৈতিক ব্যবস্থার ভবিষ্যৎ কর্তৃপক্ষের উপর নির্ভর করে যে তারা সমাজের দাবিগুলি মেটাতে এবং একটি প্রকৃত রাজনৈতিক পরিবর্তন নিশ্চিত করতে পারবে।