আজারবাইজান, যা পূর্ব এবং পশ্চিমের সংযোগস্থলে অবস্থিত, একটি সমৃদ্ধ এবং বহুস্তর বিশিষ্ট ইতিহাস রয়েছে, যা সহস্রাব্দকে অতিক্রম করে। এই ভূমি, যার প্রাকৃতিক সম্পদ এবং সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের জন্য সুনাম রয়েছে, বহু ঐতিহাসিক ঘটনা এবং সভ্যতার সাক্ষী ছিল।
আজারবাইজানের ইতিহাস প্রাচীন সময় থেকে শুরু হয়, যখন এর ভূখন্ডে বিভিন্ন উপজাতি ছিল। গোবাস্তানের অলঙ্কারিক অভিজ্ঞানগুলি, যা 30,000 বছরেরও বেশি আগে মানুষের উপস্থিতি নির্দেশ করে, এই অঞ্চলে মানব বসবাসের সাক্ষ্য দেয়। খ্রীষ্টপূর্ব ৩-১ শতকে, অঞ্চলটি মিডিয়া এবং পারফিয়া জাতির অংশ ছিল, এবং পরে আর্মেনিয়ান এবং গ্রীক প্রভাবের অধীনে এসেছে।
৭ম-১০ম শতাব্দীর মধ্যে আজারবাইজানের বর্তমান ভূখন্ডে সংস্কৃতি এবং শিল্প বিকশিত হয়েছিল। এখানে ডেরবেন্ট খানত্ব এবং শিরভানশাহী জাতির মতো রাজ্য গঠিত হয়েছিল। ৭ম শতকে আরব বিজয়ের পর ইসলাম প্রধান ধর্ম হয়ে ওঠে, যা সংস্কৃতি এবং সমাজ জীবনে উল্লেখযোগ্য প্রভাব ফেলেছিল।
১১-১২ শতকে আজারবাইজানের অঞ্চল সেলজুক সাম্রাজ্যের অন্তর্ভুক্ত হয়, এবং পরে খারাজের রাষ্ট্রের অংশ হয়ে ওঠে, যা তার সাংস্কৃতিক অর্জনের জন্য পরিচিত। এই সময় সাহিত্য, স্থাপত্য এবং বিজ্ঞানের বিকাশ ঘটে, এবং বাকু একটি গুরুত্বপূর্ণ বাণিজ্য কেন্দ্র হয়ে ওঠে।
১৩শ শতক থেকে আজারবাইজান মঙ্গোলদের প্রভাবের অধীনে আসে এবং তারপর তীমূরিদদের অধীনে। ১৬শ শতকে অঞ্চলটি সেফেভিদ এবং শিরভানশাহী রাজ্যের মধ্যে ভাগ করা হয়। সেফেভিদরা ইসলামকে আনুষ্ঠানিক ধর্ম হিসাবে প্রতিষ্ঠা করে, যা ইরানের সাথে সাংস্কৃতিক সংযোগ বৃদ্ধি করেছে।
১৭-১৮ শতকে আজারবাইজান অটোমান এবং পার্সিয়ান সাম্রাজ্যের মধ্যে লড়াইয়ের লক্ষ্যবস্তু হয়ে ওঠে। এই সময়টি ধারাবাহিক যুদ্ধে এবং সংঘাতের জন্য চিহ্নিত হয়, যা অঞ্চলের রাজনৈতিক মানচিত্রে পরিবর্তন ঘটায়।
১৯শ শতকের প্রথমদিকে, রুশ-পার্সিয়ান যুদ্ধের পর, আজারবাইজানের বড় অংশ গিউলিস্তান (১৮১৩) এবং তুর্কমানচাই (১৮২৮) চুক্তির মাধ্যমে রাশিয়ান সাম্রাজ্যে যুক্ত হয়। এই সময়টি দেশের আধুনিকীকরণের জন্য গুরুত্বপূর্ণ ছিল: শিল্প, পরিবহন এবং শিক্ষা বিকশিত হয়।
যাইহোক, অর্থনৈতিক উন্নতির সত্ত্বেও, স্থানীয় জনসংখ্যা রাজনৈতিক চাপ এবং সাংস্কৃতিক অভিবাসনের বিরুদ্ধে সংগ্রাম করছে। এই সময়ে জাতীয় আত্মসংবেদন এবং স্বায়ত্তশাসনের জন্য একটি सक्रिय লড়াই শুরু হয়েছিল।
১৯১৭ সালে বিপ্লবের পরে, আজারবাইজান ১৯১৮ সালে স্বাধীনতা ঘোষণা করে, মুসলিম বিশ্বের প্রথম গণতান্ত্রিক প্রজাতন্ত্র হয়ে ওঠে। তবে এই স্বাধীন দেশটি অল্প সময়ের জন্য টেকে: ১৯২০ সালে আজারবাইজান রেড আর্মির দ্বারা দখল করা হয় এবং USSR-এর অংশ হয়ে যায়।
সোভিয়েত সময়কালে আজারবাইজান উল্লেখযোগ্য পরিবর্তনের মুখোমুখি হয়েছিল: শিল্প, শিক্ষা এবং সংস্কৃতি বিকশিত হয়। তবে এই যুগটি দমন এবং মানবাধিকার সীমাবদ্ধতার জন্যও পরিচিত।
১৯৯১ সালে সোভিয়েত ইউনিয়ন ভেঙ্গে যাওয়ার পর আজারবাইজান আবার স্বাধীনতা অর্জন করে। এই সময়টি রাজনৈতিক এবং অর্থনৈতিক পরিবর্তনের সময় হয়ে ওঠে, কিন্তু এছাড়াও সংঘাতের, বিশেষ করে আর্মেনিয়ার সাথে নাগরنو-কারাবাখের কারণে। ২০২০ সালে সংঘাত আবার ছড়িয়ে পড়ে, যা সামরিক কার্যকলাপ এবং সীমান্ত পরিবর্তনের দিকে নিয়ে যায়।
আজকাল আজারবাইজান তার অর্থনীতি সক্রিয়ভাবে উন্নয়ন করছে, তেল এবং গ্যাস সম্পদ ভিত্তি করে, এবং আন্তর্জাতিক অবস্থানের দৃঢ়তার জন্য চেষ্টা করছে। দেশটি জাতীয় পরিচয় এবং সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যকে শক্তিশালী করার জন্য কাজ করে যাচ্ছে।
আজারবাইজানের ইতিহাস হলো সংগ্রামের, সাংস্কৃতিক বৈচিত্র্যের এবং পুনর্জাগরণের। শতাব্দী জুড়ে এই ভূমি অনেক পরীক্ষার এবং পরিবর্তনের মধ্য দিয়ে গেছে, তার অনন্যতা এবং পরিচয় রক্ষা করে। আজ আজারবাইজান উন্নয়ন এবং সমৃদ্ধির পথে চলতে থাকে, আন্তর্জাতিক মঞ্চে একটি গুরুত্বপূর্ণ খেলোয়াড় হিসেবে অবলম্বন করে।