লি কুয়ান ইউ, ১৬ই সেপ্টেম্বর ১৯২৩ সালে সিঙ্গাপুরে জন্মগ্রহণ করেন, আধুনিক বিশ্বের ইতিহাসের একটি সবচেয়ে প্রতীকী চরিত্র। তিনি সিঙ্গাপুরের প্রথম প্রধানমন্ত্রী ছিলেন এবং ১৯৫৯ থেকে ১৯৯০ সাল পর্যন্ত এই পদে অধিষ্ঠিত ছিলেন, দেশকে একটি দারিদ্র্যপূর্ণ বন্দরের শহর থেকে সমৃদ্ধ রাষ্ট্রে রূপান্তরে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিলেন।
লি কুয়ান ইউ একটি চীনা পরিবারের সদস্য, তার মা-বাবা গুয়াংডং প্রদেশের অভিবাসী। যৌবনে তিনি পড়াশোনার প্রতি বৃহৎ আগ্রহ প্রকাশ করেছিলেন এবং মাধ্যমিক বিদ্যালয় পাশ করার পর সিঙ্গাপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হন, যেখানে তিনি আইন অধ্যয়ন করেন। আইনস্টাডি সম্পন্ন করার পর লি ক্যাম্ব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ে আরও পড়াশোনা চালিয়ে যান, যেখানে তিনি মাস্টার্স ডিগ্রি অর্জন করেন।
১৯৫৪ সালে লি কুয়ান ইউ পিপলস অ্যাকশন পার্টির (পিএপি) প্রতিষ্ঠাতাদের একজন হন, যা সিঙ্গাপুরকে ব্রিটিশ উপনিবেশীয় শাসন থেকে স্বাধীনতার দিকে নিয়ে যেতে চেয়েছিল। ১৯৫৯ সালে, নির্বাচনের পর, পিএপি জয়লাভ করে এবং লি সিঙ্গাপুরের প্রথম প্রধানমন্ত্রী হিসেবে নির্বাচিত হন। তার শাসন কঠিন সময়ে শুরু হয়, যখন দেশ অর্থনৈতিক এবং সামাজিক সমস্যার মুখোমুখি হয়।
লি কুয়ান ইউ বুঝতে পেরেছিলেন যে সিঙ্গাপুরের স্থায়ী উন্নয়ন অর্জনের জন্য কিছু অর্থনৈতিক সংস্কার প্রয়োজন। তিনি শিল্পায়নের প্রোগ্রাম, বিদেশী বিনিয়োগ আকৃষ্ট করা এবং কর্মসংস্থান সৃষ্টি করার উদ্যোগ নেন। এই প্রচেষ্টার মাধ্যমে দেশের অর্থনীতি দ্রুত বৃদ্ধির দিকে এগিয়ে যায়, এবং নাগরিকদের জীবনযাত্রার মান উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি পায়।
লির নীতির একটি গুরুত্বপূর্ণ দিক শিক্ষা উন্নয়ন। তিনি বিশ্বাস করতেন যে শিক্ষিত নাগরিকরা সিঙ্গাপুরের ভবিষ্যৎ সমৃদ্ধির ভিত্তি। তার শাসনে একটি শিক্ষা ব্যবস্থা প্রবর্তিত হয় যা অর্থনীতির প্রয়োজনের দিকে মনোনিবেশ করে। লি স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের প্রতি মনোযোগ দেন, যা জনস্বাস্থ্যের সামগ্রিক অবস্থা উন্নত করতে সহায়তা করে।
লি কুয়ান ইউ এক কঠোর সামাজিক নীতি পরিচালনা করেছিলেন, যা শৃঙ্খলা ও স্থিতিশীলতা রক্ষার দিকে লক্ষ্য ছিল। তিনি সামাজিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে কঠোর আইন প্রবর্তন করেন, যা কখনও কখনও মানবাধিকার কর্মীদের পক্ষ থেকে সমালোচনা সৃষ্টি করেছিল। তবে তিনি বলেছিলেন যে এই ধরনের পদক্ষেপ শান্তি এবং দেশের সমৃদ্ধি রক্ষার জন্য প্রয়োজনীয়।
লি কুয়ান ইউ বহিঃশক্তি নীতির দিকেও মনোযোগ দেন। তিনি প্রতিবেশী দেশগুলোর সঙ্গে ভালো সম্পর্ক স্থাপন করতে চান, যা সিঙ্গাপুরকে অঞ্চলে গুরুত্বপূর্ণ একটি স্থান নিতে অনুমতি দেয়। লি আন্তর্জাতিক রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক সহযোগিতার জন্য সাউথ ইস্ট এশিয়ান নেশনস (আসিয়ান) তৈরি করতে সক্রিয়ভাবে কাজ করেন।
লি কুয়ান ইউ ১৯৯০ সালে সক্রিয় রাজনীতি থেকে বিদায় নেন, তবে আঞ্চলিক নিরাপত্তা বিষয়ক সিনিয়র মন্ত্রী ও মন্ত্রী সমন্বয়ক হিসেবে সিঙ্গাপুরের উন্নয়নে প্রভাবশালী ভূমিকা পালন করেন। তিনি ২৩শে মার্চ ২০১৫ সালে মৃত্যু বরন করেন, তার পিছনে শক্তিশালী একটি উত্তরাধিকার রেখে।
লি কুয়ান ইউ সফল পরিচালনার এবং অর্থনৈতিক বৃদ্ধির একটি প্রতীক হয়ে ওঠেন। তার পদ্ধতি ও দৃষ্টিভঙ্গি অনেক দেশে অধ্যয়ন করা হয়, যারা সিঙ্গাপুরের সফলতা পুনরাবৃত্তি করার চেষ্টা করছে। তিনি প্রজন্মের পর প্রজন্মের নেতাদের অনুপ্রাণিত করেন, দেখিয়ে দেয় কিভাবে সংযুক্ত সম্পদ সীমাবদ্ধতার মধ্যে সমৃদ্ধি অর্জন সম্ভব।
লি কুয়ান ইউ শুধু একজন রাজনীতিবিদই নয়, বরং আধুনিক সিঙ্গাপুরের একজন প্রকৃত স্থপতি। দেশের ব্যবস্থাপনার বিষয়গুলোতে তার ধারণা ও পদ্ধতিগুলো আজও প্রাসঙ্গিক। লি কুয়ান ইউর ইতিহাস হলো নির্ধারক পদক্ষেপ ওWisdom দ্বারা একটি জাতির ভবিষ্যৎ পরিবর্তনের গল্প।