নিউজিল্যান্ড, বিশ্বের অন্যতম দূরবর্তী দেশ, একটি অনন্য ইতিহাসের অধিকারী, যা মৌরি আদিবাসী জনগণ এবং ইউরোপীয় উপনিবেশীদের মধ্যে সংঘাতের সাথে গভীরভাবে সম্পর্কিত। স্বায়ত্তশাসনের পথ দীর্ঘ এবং কঠিন ছিল, এবং এই প্রক্রিয়ায় রাজনৈতিক, সামাজিক এবং সাংস্কৃতিক ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ পরিবর্তন ঘটেছিল।
ইউরোপিয়ানদের সাথে নিউজিল্যান্ডের প্রথম যোগাযোগ ঘটে ১৭৬৯ সালে, যখন ক্যাপ্টেন জেমস কুক তার তীরে অবতরণ করেন। এই ঘটনা ইউরোপীয় উপনিবেশের শুরুতে পরিণত হয়, যা মৌরিদের জীবনকে উল্লেখযোগ্যভাবে পরিবর্তন করে। বিশ শতকের প্রথমার্ধে ইউরোপীয় বসবাসকারীদের সংখ্যা বাড়তে শুরু করে, যা জমি এবং সম্পদ নিয়ে সংঘাতে পরিণত হয়।
১৮৪০ সালে ওয়াইটাংই চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়, যা মৌরি এবং ব্রিটিশ কর্তৃপক্ষের মধ্যে সম্পর্ক পরিচালনাধীন মূল নথি হয়ে ওঠে। এই চুক্তিতে মৌরিদের জমি এবং সম্পদের ওপর অধিকার সুরক্ষার বিষয়ে উল্লেখ ছিল, কিন্তু এর ব্যাখ্যা বিতর্কিত ছিল। চুক্তির প্রধান ধারা সমূহ অন্তর্ভুক্ত ছিল:
তবে বাস্তবে মৌরিদের অনেক অধিকার লঙ্ঘিত হয়, যা আদিবাসী জনগণের মধ্যে সংঘাত এবং অসন্তোষের কারণ হয়।
আউনিবেশিকতার শুরু থেকেই সশস্ত্র সংঘাত শুরু হয়, যা মাওরি যুদ্ধ (১৮৬০-১৮৭২) নামে পরিচিত। প্রধান কারণগুলির মধ্যে অন্তর্ভুক্ত ছিল:
এই যুদ্ধগুলির ফলে উভয় পক্ষেই উল্লেখযোগ্য ক্ষয়ক্ষতি হয় এবং নিউজিল্যান্ডের রাজনৈতিক মানচিত্র পরিবর্তিত হয়।
১৮৫২ সাল থেকে নিউজিল্যান্ডে স্বায়ত্তশাসনের প্রক্রিয়া শুরু হয়। ব্রিটিশ সরকার স্বায়ত্তশাসন আইন পরীক্ষণ করে, যা প্রথম বিধানসভা তৈরি করে এবং কলোনিদের স্বায়ত্তশাসনের অধিকার প্রদান করে। তবে অনেক মৌরি এই প্রক্রিয়ার মধ্যে প্রতিনিধিত্বহীন ছিল এবং তাদের অধিকার প্রায়শই উপেক্ষা করা হয়েছিল।
১৮৫৪ সালে নিউজিল্যান্ডের প্রথম সংসদ গঠিত হয়। সংসদে ইউরোপীয় এবং মৌরি প্রতিনিধিরা উভয়ই উপস্থিত ছিলেন। তবে মৌরির জন্য সত্যিকারের স্বায়ত্তশাসন অধিকারহীন ছিল। মূল আইন এবং সিদ্ধান্তগুলি আদিবাসী জনগণের মতামতের প্রতি মনোযোগ দেয়ার বাইরে গৃহীত হত।
ঊনবিংশ শতকের শেষের দিকে মৌরির অধিকার সংক্রান্ত আইন তৈরির কাজ শুরু হয়। ১৮৬৫ সালে মৌরি আইন পাশ হয়, যা সংসদে মৌরির প্রতিনিধিত্বের নিয়মাবলী চালু করে এবং তাদের জমির অধিকার নিশ্চিত করে। তবে এর বাস্তবায়ন অপ্রত đủ ছিল এবং অনেক মৌরি এখনও তাদের জমির অধিকার নিয়ে সমস্যার সম্মুখীন হত।
২০ শতক মৌরি জনগণের জন্য নতুন চ্যালেঞ্জের সময় ছিল। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর নিউজিল্যান্ডের সরকার মৌরিদের জীবন উন্নতির জন্য সংস্কারের প্রয়োগ শুরু করে। তবে এসব সংস্কারের মধ্যে অনেকগুলি সংঘাত এবং আদিবাসী জনগণের মধ্যে অসন্তোষের কারণ হয়ে দাঁড়ায়।
১৯৭০ এর দশক থেকে মৌরি সংস্কৃতি এবং ভাষার পুনর্জাগরণ শুরু হয়। এই আন্দোলন স্বায়ত্তশাসনের দিকে একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ ছিল, কারণ মৌরিরা তাদের অধিকার এবং সাংস্কৃতিক পরিচয় রক্ষার জন্য সক্রিয়ভাবে লড়াই শুরু করে। ১৯৮০-এর দশকগুলোতে মৌরি ভাষার শিক্ষা বিদ্যালয়ে প্রচার এবং ঐতিহ্য সংরক্ষণ সম্পর্কিত আইনগুলি পাশ হয়।
উন্নতির পরেও, অনেক সমস্যা অমীমাংসিত রয়ে গেছে। আধুনিক সংঘাতগুলির মধ্যে অন্তর্ভুক্ত:
মৌরি সক্রিয়ভাবে রাজনীতিতে অংশগ্রহণ করছে এবং তাদের কন্ঠস্বর সমাজে ক্রমেই গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠছে।
নিউজিল্যান্ডের স্বায়ত্তশাসনের পথে চলা ছিল দীর্ঘ এবং সংঘাতপূর্ণ। ওয়াইটাংই চুক্তি একটি গুরুত্বপূর্ণ নথি ছিল, কিন্তু এর লঙ্ঘন অসন্তোষ এবং সশস্ত্র সংঘাতের কারণ হয়েছিল। ২১ শতকে মৌরিরা তাদের অধিকার ও সাংস্কৃতিক এবং জমির অধিকার পুনঃস্থাপনের জন্য সংগ্রাম চালিয়ে যাচ্ছে। এই প্রক্রিয়া, যদিও কঠিন, নিউজিল্যান্ডে একটি আরো ন্যায়সঙ্গত এবং অন্তর্ভুক্ত সমাজ প্রতিষ্ঠার জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ।