ঐতিহাসিক এনসাইক্লোপিডিয়া

ইদি আমিনের শাসনকাল

ভূমিকা

ইদি আমিনের শাসনকাল, যা ১৯৭১ থেকে ১৯৭৯ সাল পর্যন্ত চলেছিল, উগান্ডার ইতিহাসের সবচেয়ে ট্র্যাজিক এবং বিতর্কিত সময়গুলোর একটি। আমিন রাষ্ট্রপতি মিল্টন অভোতেকে উৎখাত করে এক সামরিক অভ্যুত্থানের মাধ্যমে ক্ষমতায় আসেন এবং একটি শাসন ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করেন যা নিষ্ঠুরতা, স্বেচ্ছাচারিতা এবং ব্যাপক মানবাধিকার লঙ্ঘনের জন্য বিখ্যাত ছিল।

ক্ষমতার উত্থান

ইদি আমিন ১৯২৫ সালে লুও নৃগোষ্ঠীতে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি ব্রিটিশ সেনাবাহিনীতে এবং পরে উগান্ডার সেনাবাহিনীতে কাজ করেন। ১৯৬২ সালে, স্বাধীনতা পাওয়ার পর, আমিনকে সেনাবাহিনীর প্রধান হিসাবে নিযুক্ত করা হয়, যা তাকে প্রভাব বৃদ্ধি করার সুযোগ দেয়। ২৫ জানুয়ারি ১৯৭১ সালে তিনি সফল একটি রাষ্ট্রপতি উৎখাতের মাধ্যমে মিল্টন অভোতেকে টেনে নামান।

স্বৈরশাসন এবং দমনপীড়ন

ক্ষমতায় আসার পর আমিন নিজেকে রাষ্ট্রপতি এবং সশস্ত্র বাহিনীর প্রধান ঘোষণা করেন। তাঁর শাসনকাল রাজনৈতিক প্রতিপক্ষের বিরুদ্ধে নিষ্ঠুর দমন-পীড়ন, নৃগোষ্ঠীগুলোর প্রতি persegution এবং ব্যাপক হত্যাকাণ্ড দ্বারা চিহ্নিত হয়। রাজনৈতিক দমনে নিহতের সংখ্যা ১00,০০০ থেকে ৫00,০০০ এর মধ্যে পরিবর্তিত হয়।

আমিন ক্ষমতা এককভাবে হাতে নিয়ে একটি স্বৈরশাসন স্থাপন করেন। তিনি বিরোধী দলগুলোকে নিষিদ্ধ করেন এবং গণমাধ্যমের নিয়ন্ত্রণ করেন, যার ফলে কোনো ভিন্নমত প্রকাশ করা অসম্ভব হয়ে পড়ে। উপরন্তু, তিনি সেনাবাহিনীকে ব্যবহার করে কোনো প্রতিবাদ এবং বিদ্রোহ দমন করতে উদ্যত হন, ফলে একটি আমলাতান্ত্রিক আতঙ্ক এবং দমনের পরিবেশ সৃষ্টি হয়।

অর্থনৈতিক নীতি এবং জাতীয়করণ

আমিনের নীতির একটি মূল দিক হল বৃহত্তর শিল্প এবং জমির জাতীয়করণ। তিনি সমস্ত বিদেশী ব্যবসার জাতীয়করণ ঘোষণা করেন, যা ইউরোপীয় ব্যবসায়ীদের এবং বিশেষজ্ঞদের ব্যাপকভাবে চলে যাওয়ার দিকে পরিচালিত করে এবং অর্থনীতির উপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলে। এই পদক্ষেপ কিছু জনগণের মধ্যে জনপ্রিয়তা অর্জন করে, কারণ এটি অর্থনৈতিক স্বাধীনতার একটি ভ্রম তৈরি করে, কিন্তু শেষ পর্যন্ত এর ফলে অর্থনৈতিক বিপর্যয় ঘটে।

১৯৭০-এর মাঝামাঝি সময়ে দেশের অর্থনীতি গভীর সংকটে ছিল। উগান্ডায় খাদ্যদ্রব্যের ঘাটতি, বেকারত্বের বৃদ্ধি এবং হাইপার-ইনফ্লেশনের সমস্যার মুখোমুখি হতে হয়। অর্থনৈতিক ভিত্তির ধ্বংস জনসাধারণের অসন্তোষ সৃষ্টি করে এবং বিরোধী মনোভাব বৃদ্ধি করে।

বহির্বিশ্বের নীতি

আমিনের পররাষ্ট্রনীতি নিয়েও বিতর্ক তৈরি হয়। তিনি প্রথমে পশ্চিমের সাথে সম্পর্ক স্থাপনের চেষ্টা করেছিলেন, তবে পরে তিনি ঔপনিবেশবিরোধী আন্দোলন সমর্থনকারী দেশগুলোর দিকে মুখ ফিরিয়ে নেন। তিনি লিবিয়া, কিউবা এবং অন্যান্য দেশের সাথে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক স্থাপন করেন, যা পশ্চিমের মধ্যে উদ্বেগ সৃষ্টি করে। আমিন প্রকাশ্যে পশ্চিমের সাম্রাজ্যবাদের বিরুদ্ধে সোচ্চার হন এবং আফ্রিকার বিভিন্ন বিপ্লবী আন্দোলনকে সমর্থন করেন।

তানজানিয়ার সাথে যুদ্ধ

১৯৭৮ সালে আমিন তানজানিয়ার সাথে সংঘাত শুরু করেন, যা তাঁর পরিণতির শুরু হয়। উগান্ডার বাহিনী তানজানিয়ার ভূখণ্ডে আক্রমণ করে যুদ্ধ শুরু হয়। তবে দ্রুতই বোঝা যায় যে আমিনের সেনাবাহিনী একটি গুরুতর প্রতিরোধের জন্য প্রস্তুত নয়। তানজানিয়া, উগান্ডার বিদ্রোহীদের সাথে মিলে, দ্রুত উগান্ডার বাহিনীকে পরাজিত করে।

১৯৭৯ সালের জানুয়ারিতে তানজানিয়ার সৈন্যরা উগান্ডায় প্রবেশ করে, যা আমিনের শাসনের অবসান ঘটায়। তিনি প্রথমে লিবিয়ায় এবং পরে সৌদি আরবসহ অন্যান্য দেশে পালিয়ে যান।

শাসনের পরিণতি

ইদি আমিনের শাসন উগান্ডার ইতিহাসে একটি গভীর ছাপ ফেলেছে। তাঁর সামন্ততান্ত্রিক কাল ব্যাপক মানবাধিকার লঙ্ঘন, অর্থনৈতিক বিপর্যয় এবং আন্তর্জাতিক বিচ্ছিন্নতা দ্বারা চিহ্নিত হয়। উগান্ডা তাঁর শাসন থেকে পুনরুদ্ধারের পথে বিশাল কষ্ট ভোগ করেছে।

আমিনের শাসনের পতনের পর দেশ একটি নতুন নেতা দ্বারা পরিচালিত হতে থাকে, কিন্তু তাঁর শাসনের পরিণতি দীর্ঘকাল পরেও অনুভূত হয়। মিলিয়ন মিলিয়ন উগান্ডাবাসী দমন-পীড়নের শিকার হয়, এবং দেশের অর্থনীতি ধ্বংস হয়ে যায়। আমিন উগান্ডিয়ার ভয়ের এবং স্বৈরাচারের প্রতীক হয়ে ওঠে, এবং তাঁর উত্তরাধিকার গভীর বিতর্ক এবং গবেষণার বিষয় হয়ে আছে।

নিষ্কर्ष

ইদি আমিনের শাসন উগান্ডার ইতিহাসের সবচেয়ে অন্ধকাকী পাতাগুলোর একটি হয়ে উঠেছে। অর্থনৈতিক স্বাধীনতা এবং সামাজিক ন্যায়ের প্রতিশ্রুতি দেওয়ার পরেও বাস্তবতা দমন এবং সহিংসতার দ্বারা বিকৃত হয়েছিল। এই সময়ের পাঠগুলি এখনও প্রাসঙ্গিক, মানবাধিকারের সুরক্ষা এবং আধুনিক সমাজে গণতান্ত্রিক মূল্যবোধের গুরুত্ব তুলে ধরে।

শেয়ার করতে:

Facebook Twitter LinkedIn WhatsApp Telegram Reddit email

অন্য নিবন্ধগুলি: