নরওয়ের ইতিহাস ১০,০০০ বছরেরও বেশি পুরাতন। প্রথম অধিবাসীরা এই উত্তরাঞ্চলীয় দেশে শেষ বরফ যুগের শেষের দিকে এসেছিল। প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলি দেখায় যে তারা শিকার, মাছধরা এবং সংগ্রহ সম্ভব করত।
প্রাচীন সংস্কৃতির সবচেয়ে পরিচিত সাক্ষ্য হলো পেট্রোগ্লিফ, যা নরওয়ের বিভিন্ন স্থানে পাওয়া গেছে, যা প্রায় ৬০০০ খৃষ্টপূর্বাব্দের দিকে তারিখিত। এই চিত্রগুলি প্রাকৃতিক মানুষের জীবন ও বিশ্বাসগুলি সম্পর্কে ধারণা দেয়।
ভাইকিং যুগ (৭৯৩–১০৬৬ খ্রিস্টাব্দ) নরওয়ের ইতিহাসের সবচেয়ে পরিচিত সময়গুলোর একটি। স্ক্যান্ডিনেভিয়া থেকে আসা ভাইকিংরা সামুদ্রিক অভিযানে গমন করে, লুটপাট করে, ব্যবসা করে এবং নতুন ভূমি গ্রাস করে।
৭৯৩ সালে লিন্ডিসফার্ন মঠে বিখ্যাত আক্রমণ ঘটে, যা ভাইকিং যুগের শুরু হিসেবে বিবেচিত। নরওয়ে ভাইকিং সংস্কৃতির একটি গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্র হয়ে ওঠে, এবং অনেক বিখ্যাত ভাইকিং যেমন রাগনার লডব্রোক এবং এরিক রেড নরওয়েজিয়ান ছিলেন।
এই সময়ে প্রথম রাজ্যগুলির উত্থান ঘটে, যেমন নরওয়ে, যা ৯ম শতকের শেষ দিকে রাজা হারাল্ড I-এর অধীনে একত্রিত হয়।
নরওয়ের খ্রিষ্টানীকরণ ১০ম শতকে শুরু হয়, যখন রাজা ওলাফ I (ওলাফ ট্রুগগভাসন) খ্রিষ্টধর্ম গ্রহণ করেন এবং নতুন ধর্মটি প্রচার করতে শুরু করেন। এই প্রক্রিয়াটি কয়েক শতক ধরে চলেছিল, এবং চূড়ান্ত খ্রিষ্টানীকরণ ১১৫০ সালে ঘটে।
মধ্যযুগ গুরুত্বপূর্ণ পরিবর্তনের সময় ছিল: বরগেন এবং ওসলো-এর মতো নতুন শহরগুলি গঠন হল, বাণিজ্য এবং শিল্প বিকশিত হল। নরওয়ে ১৩৯৭ সালে ক্যালমার ইউনিয়নের অংশ হয়ে ওঠে, যা ডেনমার্ক, নরওয়ে এবং সুইডেনকে এক ছাতার নিচে একত্রিত করে।
ক্যালমার ইউনিয়নের ফলে নরওয়ে ডেনমার্কের আধিপত্যের অধীনে চলে আসে। এর ফলে রাজনৈতিক এবং অর্থনৈতিক নির্ভরতা তৈরি হয় এবং স্বায়ত্তশাসন হারানো হয়। কয়েক শতক ধরে নরওয়ে ডেনমার্কের ছায়ায় থেকে যায়।
তবুও, নরওয়ের সংস্কৃতি এবং ভাষা বিকশিত হতে থাকে। এই সময়ে নরওয়েজিয়ান সাহিত্য আবির্ভূত হয় এবং নরওয়েজিয়ানদের ডানিশদের থেকে পৃথক করে এমন ঐতিহ্য ও রীতি বজায় থাকে।
১৮১৪ সালে, নেপোলিয়নের যুদ্ধের পরে, নরওয়ে কিয়েন শান্তি চুক্তির মাধ্যমে সুইডেনের কাছে হস্তান্তর করা হয়। নরওয়ে স্বাধীনতা ঘোষণা করে এবং তার সংবিধান গ্রহণ করে, কিন্তু দ্রুত সুইডেনের সাথে একটি ইউনিয়ন স্বীকার করে, যা ১৯০৫ সাল পর্যন্ত বজায় থাকে।
১৯০৫ সালে, দীর্ঘ আলোচনার পরে, নরওয়ে একটি স্বাধীন রাষ্ট্র হয়ে ওঠে। এই সময়ে জাতীয় পরিচয় এবং নরওয়েজিয়ানদের সংস্কৃতিগত আত্মসচেতনতা প্রতিষ্ঠা লাভ করে।
২০তম শতকে নরওয়ে অনেক ঘটনার মধ্য দিয়ে যায়, উভয় বিশ্বযুদ্ধ সহ। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময়, দেশটি ১৯৪০ থেকে ১৯৪৫ সালের মধ্যে নাৎসি জার্মানির দ্বারা দখল হয়ে যায়।
যুদ্ধের পরে, নরওয়ে পুনর্গঠন এবং অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির একটি সময় অতিক্রম করে, বিশ্বের সবচেয়ে সমৃদ্ধ দেশগুলির একটি হয়ে ওঠে। নরওয়ে ১৯৪৯ সালে ন্যাটোর সদস্যও হয়ে ওঠে এবং আন্তর্জাতিক রাজনীতিতে সক্রিয় অংশগ্রহণ করছে।
আজ নরওয়ে তার উচ্চ জীবনমান, স্থিতিশীল অর্থনীতি এবং তেল ও গ্যাসসহ প্রাকৃতিক সম্পদের সমৃদ্ধির জন্য পরিচিত। দেশটি সুখ এবং শিক্ষার স্তরের বিশ্ব র্যাঙ্কিংয়ে উচ্চ স্থান অধিকার করে।
নরওয়ে পরিবেশ রক্ষায় সক্রিয় এবং টেকসই উন্নয়নের ক্ষেত্রে উদ্ভাবনী রাজনীতি চালিয়ে যাচ্ছে। দেশের সংস্কৃতি, শিল্প এবং ঐতিহ্যগুলি এখনও বিকশিত হচ্ছে, তাদের অনন্য বৈশিষ্ট্যগুলি রক্ষা করে।
নরওয়ের ইতিহাস হল স্বাধীনতার জন্য যুদ্ধ, সংস্কৃতি সংরক্ষণ এবং কঠিন সময় অতিক্রম করার ইতিহাস। আজ নরওয়ে একটি অনন্য দেশ, যেখানে প্রাচীন ঐতিহ্য এবং আধুনিক সমাজের সংমিশ্রণ ঘটছে, এবং এর ইতিহাস বিশ্ব সংস্কৃতির একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ।