রোমানিয়ার ইতিহাস ৭,০০০ বছরেরও বেশি। আধুনিক রাষ্ট্রের অঞ্চলগুলোতে প্রথম মানব বসতি প্যালিওলিথিক যুগে দেখা দেয়। পুরাতন যুগের আবিষ্কারগুলো শিকারী ও সংগ্রাহকদের জীবনধারণের চিহ্ন বহন করে, যারা গুহা ও নদীর তীরে বসবাস করতো। পরবর্তী নিওলিথিক যুগে রোমানিয়ার অঞ্চলে আরও জটিল সংস্কৃতিগুলি বিকাশ ঘটে, যেমন কুকুটেনী সংস্কৃতি, যার বৈশিষ্ট্য ছিল তাদের মাটি পাত্র ও বসতিগুলি।
ঈশ্বরের জন্মের ১ম সহস্রাব্দে আধুনিক রোমানিয়ার অঞ্চলে ডাকীরা বসবাস করতো, যারা গ্রিস ও রোমানদের সাথে সক্রিয় বাণিজ্য চালাচ্ছিল। ১০৬ সালে রোমান সম্রাট ট্রায়ান ডাকিয়াকে বিজয়ী করে একটি প্রদেশ গঠন করেন যা ২৭১ সাল পর্যন্ত বজায় ছিল। রোমান সংস্কৃতি স্থানীয় জনগণের উপর উল্লেখযোগ্য প্রভাব ফেলে, শহর ও অবকাঠামোর উন্নয়নে সহায়তা করে।
রোমানদের চলে যাওয়ার পর রোমানিয়ার অঞ্চল বিভিন্ন জাতির আক্রমণের শিকার হয়, যার মধ্যে রয়েছে গথ, আওয়ার এবং славян। ৯ম-১২ম শতাব্দীতে প্রথম সামন্তভিত্তিক রাষ্ট্রগুলি গঠন করা হয়: ভ্যালাচিয়া এবং মলদাভিয়া। ১৩শ-১৪শ শতাব্দীতে বিদেশী শাসনের বিরুদ্ধে স্বাধীনতার জন্য সংগ্রাম শুরু হয়, এবং ১৪৫৬ সালে ভ্লাদ তেপেশ, যাকে ড্রাকুলা নামে জানানো হয়, ভ্যালাচিয়ার শাসক হন।
১৪শ শতাব্দীর শেষের দিকে ভ্যালাচিয়া এবং মলদাভিয়া ওসমানীয় সাম্রাজ্যের ভ্যাসাল হয়ে ওঠে। তবুও, তারা নির্দিষ্ট পরিমাণ স্বায়ত্তশাসন রক্ষা করে। ১৬শ-১৭শ শতাব্দীতে ওসমানী শাসনের বিরুদ্ধে অনেক বিদ্রোহ ঘটে, যার মধ্যে সবচেয়ে বিখ্যাত হলো ১৬০০ সালে মিখাইল হ্রাব্রোর বিদ্রোহ, যখন তিনি ভ্যালাচিয়া, মলদাভিয়া এবং ট্রান্সিলভানিয়াকে একত্রিত করেন।
১৯শ শতাব্দীতে রোমানিয়া জাতীয় পুনর্জাগরণের সময়কাল অতিক্রম করে। ১৮৫৯ সালে ভ্যালাচিয়া ও মলদাভিয়া একত্রিত হয়ে রোমানিয়া গঠন করে। ১৮৭৭-১৮৭৮ সালে দেশটি ওসমানীয় সাম্রাজ্যের বিরুদ্ধে স্বাধীনতার জন্য যুদ্ধ করে, যা বর্লিন কংগ্রেসে আনুষ্ঠানিকভাবে স্বীকৃত হয়। রোমানিয়া অতিরিক্ত অঞ্চল অর্জন করে, যার মধ্যে ডোব্রুজা অন্তর্ভুক্ত।
প্রথম বিশ্বযুদ্ধের সময় রোমানিয়া প্রাথমিকভাবে নিরপেক্ষ ছিল, কিন্তু ১৯১৬ সালে আন্তান্টার পক্ষ থেকে যুদ্ধে যোগ দেয়। যুদ্ধের পর দেশে সীমান্ত সম্প্রসারিত হয়, ট্রান্সিলভানিয়া, বেসারাবিয়া এবং বুকোভিনা যুক্ত হয়। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় রোমানিয়া প্রাথমিকভাবে অক্ষের অংশ ছিল, কিন্তু ১৯৪৪ সালে মিত্রশক্তির পক্ষ থেকে যোগ দেয়। যুদ্ধের ফলস্বরূপ রোমানিয়া কিছু অঞ্চল হারায়, যেমন বেসারাবিয়া।
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর রোমানিয়া একটি সমাজতান্ত্রিক প্রজাতন্ত্রে পরিণত হয় যা কমিউনিস্ট পার্টির দ্বারা পরিচালিত হয়। ১৯৬৫ সাল থেকে নিকোলাই চাউশেস্কু একটি কঠোর শাসন প্রতিষ্ঠা করেন, যা ১৯৮৯ সালে একটি বিপ্লবের মাধ্যমে শেষ হয় যা তার উৎখাত এবং ফাঁসির দিকে নিয়ে যায়। রোমানিয়া গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় এবং বাজার অর্থনীতির দিকে অগ্রসর হতে শুরু করে।
২১শ শতাব্দীতে রোমানিয়া একটি গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র হিসেবে উন্নয়ন অব্যাহত রাখে। ২০০৪ সালে দেশটি ন্যাটোতে যোগ দেয়, এবং ২০০৭ সালে ইউরোপীয় ইউনিয়নে। রোমানিয়া আন্তর্জাতিক বিষয়গুলোতে সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করে, অন্যান্য দেশের সাথে তার অর্থনৈতিক ও সাংস্কৃতিক সম্পর্ককে দৃঢ় করে। আধুনিক চ্যালেঞ্জগুলি, যেমন দুর্নীতি এবং অর্থনৈতিক সমস্যা, এখনও প্রাসঙ্গিক, কিন্তু দেশটি তার নাগরিকদের জীবনযাত্রার উন্নতির জন্য চেষ্টা করে যাচ্ছে।