মধ্যপ্রাচ্যের সংঘাত একটি বহুমুখী এবং জটিল সমস্যা, যা একশত বছরেরও বেশি সময় ধরে চলছে। এর প্রধান অংশীদার হল ইস্রায়েল এবং ফিলিস্তিনি আরব, পাশাপাশি কিছু আরব দেশ, যেগুলো পরিস্থিতিতে প্রভাব ফেলে। সংঘাতটি মূলত ভূমি, জাতীয় পরিচয় এবং রাজনৈতিক স্বাধীনতার জন্য সংগ্রামের উপর ভিত্তি করে।
ঐতিহাসিক প্রসঙ্গ
মধ্যপ্রাচ্যের সংঘাতের শিকড় বিংশ শতাব্দীর শুরুতে, যখন ইহুদিদের এবং আরবদের মধ্যে জাতীয়তার ধারনা উদ্ভব হয়। এই সংঘাতের প্রধান পর্যায়গুলো অন্তর্ভুক্ত করে:
সিয়োনিজম: ইহুদি আন্দোলন, যার লক্ষ্য ছিল প্যালেস্টাইনতে একটি ইহুদি রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করা, যা ১৯শ শতকের শেষের দিকে উদ্ভব হয়।
আরব জাতীয়তা: সিয়োনিজমের সাথে পাশাপাশি আরব জাতিগুলো নিজেদের জাতীয় পরিচয় গঠন করতে শুরু করে এবং স্বাধীনতার জন্য সংগ্রাম করে।
ব্রিটিশ ম্যান্ডেট: প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পর, যুক্তরাজ্য প্যালেস্টাইন পরিচালনার জন্য ম্যান্ডেট পায়, যা ইহুদি অভিবাসনের বৃদ্ধি ও সম্প্রদায়গুলোর মধ্যে উত্তেজনাকে বাড়িয়ে তোলে।
ইস্রায়েলের সৃষ্টি এবং প্রথম যুদ্ধগুলো
১৯৪৭ সালে ইউএন সাধারণ পরিষদ প্যালেস্টাইনকে ইহুদি এবং আরব রাষ্ট্রে ভাগ করার জন্য প্রস্তাব গ্রহণ করে। ১৯৪৮ সালে, ইস্রায়েলের স্বাধীনতা ঘোষণা করার পর, প্রথম আরব-ইস্রায়েল যুদ্ধ শুরু হয়:
প্রথম আরব-ইস্রায়েল যুদ্ধ (১৯৪৮-১৯৪৯): নতুন গঠিত ইস্রায়েল রাষ্ট্র এবং আরব দেশগুলোর মধ্যে সংঘাত। যুদ্ধের ফলস্বরূপ ইস্রায়েল তার territory বৃদ্ধি করে, এবং শত শত হাজার ফিলিস্তিনি উদ্বাস্তুতে পরিণত হয়।
পরিণতি: এই যুদ্ধ পরবর্তী সংঘাতগুলোর জন্য ভিত্তি স্থাপন করে এবং ফিলিস্তিনি উদ্বাশীদের সমস্যা তৈরি করে, যা এখনো সক্রিয়।
১৯৬০ এবং ১৯৭০ দশকের সংঘাত
পরবর্তী দশকগুলো নতুন যুদ্ধে এবং সংঘর্ষে উদ্ভূত হয়েছিল:
ছয়দিনের যুদ্ধ (১৯৬৭): ইস্রায়েল আরব দেশগুলোর বিরুদ্ধে নিশ্চিত একটি বিজয় অর্জন করে এবং পশ্চিম তীর, গাজা, সিনাই এবং গোলান হাইটস দখল করে।
যুদ্ধের দিন (১৯৭৩): আরব দেশগুলো, যার মধ্যে মিসর এবং সিরিয়া অন্তর্ভুক্ত, হারানো territory ফিরিয়ে আনতে চেষ্টা করে, তবে ইস্রায়েল তাদের অবস্থান ধরে রাখতে সক্ষম হয়।
শান্তির উদ্যোগ এবং অসলো
২০শ শতকের শেষে সংঘাতের শান্তিপূর্ণ সমাধানের প্রচেষ্টা শুরু হয়েছিল:
ক্যাম্প ডেভিড চুক্তি (১৯৭৮): ইস্রায়েল এবং মিসরের মধ্যে আলোচনার মাধ্যমে একটি শান্তি চুক্তির স্বাক্ষর এবং সিনাই মিসরে ফিরিয়ে দেয়।
অসলো চুক্তি (১৯৯৩): ইস্রায়েল এবং ফিলিস্তিনের মুক্তি সংস্থা (পিএলও) এর মধ্যে শান্তি প্রতিষ্ঠার প্রথম প্রচেষ্টা। অসলো প্যালেস্টাইনির স্বায়ত্তশাসন প্রতিষ্ঠা করে, তবে চুক্তির বাস্তবায়ন জটিল হয়ে পড়ে।
ইনতিফাদা এবং শেষ ঘটনাগুলো
এই অঞ্চলের পরিস্থিতি উত্তেজিত থাকতে থাকে:
প্রথম ইনতিফাদা (১৯৮৭-১৯৯৩): ইস্রায়েলি দখলের বিরুদ্ধে ফিলিস্তিনিদের মৌলিক প্রতিবাদ।
দ্বিতীয় ইনতিফাদা (২০০০-২০০৫): সহিংসতা ও সংঘর্ষের পুনরুজ্জীবন, বিশেষ করে শান্তি আলোচনার ব্যর্থতার পর।
শেষ কয়েক বছরে সংঘাত অব্যাহতভাবে সমাধানহীন রয়েছে। জেরুজালেমের স্বীকৃতি, সীমান্ত, নিরাপত্তা এবং ফিলিস্তিনি উদ্বাশীদের ফিরতে দেওয়ার অধিকারসহ সমস্যা শান্তির পথে প্রধান বাধা রয়ে গেছে।
সংঘাতের আধুনিক দিক
বর্তমানে, মধ্যপ্রাচ্যের সংঘাত রাজনৈতিক এবং সামাজিক জীবনে উল্লেখযোগ্য প্রভাব ফেলতে থাকে:
মানবিক পরিস্থিতি: ফিলিস্তিনি অঞ্চলগুলো অর্থনৈতিক সংকট এবং মানবিক সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছে, যা ইস্রায়েলি ব্লকডেড দ্বারা আরও খারাপ হচ্ছে।
রাজনৈতিক বিভাজন: ফিলিস্তিনি গোষ্ঠীগুলোর মধ্যে বিভক্তি, যেমন ফাতহ এবং হামাস, আলোচনা প্রক্রিয়াকে জটিল করে তোলে।
আন্তর্জাতিক প্রভাব: বিভিন্ন দেশ ও সংগঠন, যেমন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, ইউরোপীয় ইউনিয়ন এবং জাতিসংঘ, সংঘাতে মধ্যস্থতার চেষ্টা করছে, কিন্তু উল্লেখযোগ্য সফলতা নেই।
নিষ্কর্ষ
মধ্যপ্রাচ্যের সংঘাত ইতিহাসে সবচেয়ে জটিল ও দীর্ঘস্থায়ী সংঘাতের একটি। বেশ কয়েকটি শান্তি উদ্যোগ ও আলোচনার পরও পরিস্থিতি এখনও উত্তেজিত, এবং সংঘাত সমাধানে সকল অংশীদারের পাশাপাশি আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের উল্লেখযোগ্য প্রচেষ্টা প্রয়োজন।