মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে ১৮৬১ থেকে ১৮৬৫ সালের মধ্যে চলমান গৃহযুদ্ধ দেশটির ইতিহাসের সবচেয়ে ট্র্যাজিক এবং গুরুত্বপূর্ণ ঘটনাগুলির একটি। এটি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ভবিষ্যৎ নির্ধারণ করে, দাসত্ব এবং দেশের ঐক্যের প্রশ্ন সমাধান করে। সংঘাতটি উত্তরের (সংঘ) এবং দক্ষিণের (কনফেডারেসন) মধ্যে সংঘটিত হয়েছিল এবং উল্লেখযোগ্য সামাজিক, অর্থনৈতিক এবং রাজনৈতিক পরিবর্তনের দিকে নিয়ে যায়।
গৃহযুদ্ধের প্রধান কারণ ছিল দাসত্বের প্রশ্ন, যা দেশটিকে দুই অংশে ভাগ করে। উত্তর, যেখানে শিল্পসম্ভার সক্রিয়ভাবে বিকশিত হচ্ছিল, দাসত্বের সীমাবদ্ধতা এবং শেষ পর্যন্ত এর বিলোপে আগ্রহী ছিল। দক্ষিণ, যার অর্থনীতি কৃষির উপর নির্ভরশীল, বিশেষ করে তুলাকৃষি, দাস শ্রমের উপর নির্ভরশীল ছিল এবং দাসত্বকে রক্ষা করার পক্ষে ছিল। সংঘাতটি প্রতি বছর ক্রমবর্ধমান হয়েছিল, বিশেষ করে নতুন অঞ্চলগুলি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সাথে যুক্ত হওয়ার পর, এবং প্রশ্ন উত্থাপিত হয়েছিল, তারা কি দাসপ্রথাযুক্ত হবে নাকি মুক্ত।
১৮৬০ সালের presidential নির্বাচনে আব্রাহাম লিঙ্কনের বিজয় দক্ষিণের রাজ্যগুলোকে ইউনিয়ন থেকে বেরিয়ে আসার জন্য প্রেরণা দিয়েছিল। দক্ষিণের রাজ্যগুলো ভয় করছিল যে লিঙ্কন এবং রিপাবলিকান পার্টি, যারা দাসত্বকে বিস্তারের বিপক্ষে, দেশজুড়ে এর নিষেধাজ্ঞার দিকে নিয়ে যাবে। ১৮৬০ সালের ডিসেম্বর মাসে দক্ষিণ ক্যারোলিনা প্রথম ইউনিয়ন থেকে বেরিয়ে আসার ঘোষণা দেয়, এর পর অন্যান্য দক্ষিণের রাজ্যগুলোও এর সাথে যোগ দেয় এবং কনফেডারেট স্টেটস অব আমেরিকাকে গঠন করে, যার প্রেসিডেন্ট হলেন জেফারসন ডেভিস।
যুদ্ধ শুরু হয় ১২ এপ্রিল ১৮৬১ তারিখে, যখন কনফেডারেট বাহিনী দক্ষিণ ক্যারোলিনার সামন্টার ফোর্টে গোলাবর্ষণ করে। এই ঘটনাটি উত্তর এবং দক্ষিণের মধ্যে সামরিক কার্যক্রমের শুরুতে পরিণত হয়। লিঙ্কন ইউনিয়ন পুনঃस्थাপন করার জন্য স্বেচ্ছাসেবকদের আহ্বান জানান, এবং শীঘ্রই উভয় পক্ষ একটি পূর্ণমাত্রার সশস্ত্র সংঘাতে জড়িয়ে পড়ে। যুদ্ধের সময়, উত্তর এবং দক্ষিণ উভয়ই নিজেদের ভবিষ্যতের দৃষ্টিভঙ্গি প্রতিষ্ঠার চেষ্টা করে প্রচণ্ড যুদ্ধ চালিয়েছিল।
যুদ্ধটি বহু রক্তক্ষয়ী যুদ্ধ অন্তর্ভুক্ত করেছিল, যার মধ্যে বুল রানের যুদ্ধ, শাইলোর যুদ্ধ, অ্যান্টিটেমের যুদ্ধ এবং গেটিসবার্গের যুদ্ধ উল্লেখযোগ্য। ১৮৬৩ সালের জুলাই মাসে গেটিসবার্গের যুদ্ধ যুদ্ধের মধ্যে একটি বৃহত এবং সিদ্ধান্তমূলক যুদ্ধ হিসেবে বিবেচিত হয়, যার ফলে জেনারেল রবার্ট লির অধীনে কনফেডারেট সেনাবাহিনী পিছু হটতে বাধ্য হয়। এই ঘটনাটি যুদ্ধের মোড় পরিবর্তন করে ইউনিয়নের পক্ষে।
যুদ্ধের কার্যক্রম দক্ষিণের রাজ্যগুলোতে ব্যাপকভাবে সংঘটিত হয়েছিল, যা কনফেডারেশনের অর্থনীতির উপর মারাত্মক প্রভাব ফেলে। রেলপথ এবং অন্যান্য অবকাঠামোগত সুবিধাসমূহ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল, এবং খাদ্য ও সম্পদের সংকট বাড়তে থাকে। ইউনিয়নের পক্ষে আরও অনেক বেশি প্রশিক্ষিত এবং সংখ্যাগরিষ্ঠ সৈন্য যুদ্ধ করেছিল, এবং তাদের শিল্প ভিত্তিও ভাল ছিল।
১৮৬৩ সালের ১ জানুয়ারি, প্রেসিডেন্ট লিঙ্কন মুক্তির ঘোষণা প্রকাশ করেন, যা কনফেডারেশনের নিয়ন্ত্রণাধীন অঞ্চলে দাসদের স্বাধীনতা ঘোষণা করে। এই নথিটি, যদিও তাৎক্ষণিকভাবে দাসদের মুক্তি দেয়নি, ইউনিয়নের উদ্দেশ্যকে সাহস দিয়েছে। এটি কনফেডারেশনকে আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি এবং সমর্থন পাওয়ার আশা থেকে বঞ্চিত করেছিল, যেহেতু ইউরোপের দেশগুলো, বিশেষ করে বৃটেন এবং ফ্রান্স, দাসত্বের ভিত্তিতে প্রতিষ্ঠিত রাষ্ট্রকে সমর্থন করতে চায়নি।
১৮৬৪ সালের মধ্যে যুদ্ধ একটি সংকটময় পর্যায়ে পৌঁছেছিল। লিঙ্কন উলিসেস গ্রান্টকে ইউনিয়নের বাহিনীর প্রধান হিসেবে নিযুক্ত করেন, এবং তিনি কনফেডারেশনের অবস্থানের উপর আক্রমণ শুরু করেন। জেনারেল উইলিয়াম শার্মানের "জ্বালিয়ে দেওয়া জমি" কৌশল দক্ষিণের অর্থনৈতিক ভিত্তিকে ধ্বংস করে এবং জনসংখ্যাকে মনোবলহীন করে তোলে। ১৮৬৫ সালের এপ্রিল মাসে জেনারেল লির বাহিনী গ্রান্টের কাছে অ্যাপোম্যাটটক্সে আত্মসমর্পণ করে, যা কার্যত যুদ্ধের অবসান ঘটায়।
যুদ্ধের সমাপ্তির কয়েক দিন পর, ১৪ এপ্রিল ১৮৬৫ সালে, প্রেসিডেন্ট লিঙ্কন ওয়াশিংটনের একটি থিয়েটারে যেতে গিয়ে গুলিবিদ্ধ হন। তাঁর হত্যা জাতির জন্য একটি শোকের ঘটনা হয়ে দাঁড়ায় এবং আমেরিকান ইতিহাসে একটি অমস্মরণীয় ছাপ ফেলে। যদিও যুদ্ধ শেষ হয়েছে, দক্ষিণের পুনঃস্থাপন এবং মুক্ত দাসদের সমাজে অন্তর্ভুক্ত করার immense কাজগুলি সামনে দাঁড়িয়ে ছিল।
পুনর্গঠনের সময়কাল যুদ্ধের সমাপ্তির সঙ্গে সঙ্গে শুরু হয় এবং ১৮৭৭ সাল পর্যন্ত স্থায়ী হয়। এই সময়কালটি ধ্বংসপ্রাপ্ত দক্ষিণের পুনর্গঠন, মুক্ত দাসদের অন্তর্ভুক্তি এবং নতুন সামাজিক এবং অর্থনৈতিক ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠার দিকে নিবদ্ধ ছিল। ত্রয়োদশ, চৌদ্দতম এবং পঞ্চদশ সংশোধনী গৃহীত হয়, যা দাসত্বের বিলোপ, নাগরিক অধিকার এবং আফ্রো-আমেরিকানদের নির্বাচনী অধিকার নিশ্চিত করে।
পরিবর্তনের চেষ্টালব্ধ হওয়া সত্ত্বেও, পুনর্গঠনের প্রক্রিয়া দক্ষিণের রাজ্যগুলোতে তীব্র প্রতিরোধের মুখোমুখি হয়েছিল। অনেক সংস্কার সম্পূর্ণরূপে বাস্তবায়িত হতে পারেনি জাতিগত পূর্বপদ এবং বিচ্ছিন্নতার আইন তৈরির কারণে। দক্ষিণে কুক্লুক্স ক্ল্যানের মতো জাতিবাদী গোষ্ঠী জন্ম নিয়েছিল, যারা আফ্রো-আমেরিকানদের ভীতিজনক করার এবং তাদের রাজনৈতিক জীবনে অংশগ্রহণ প্রতিরোধ করার লক্ষ্য ছিল।
গৃহযুদ্ধ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকে পরিবর্তন করে, একক এবং অবিভাজ্য রাষ্ট্রের ধারণাকে প্রতিষ্ঠিত করে। দাসত্বের বিলোপ এবং আফ্রো-আমেরিকানদের অধিকারকে নিশ্চিত করা একটি ন্যায্য সমাজ গঠনের দিকে উল্লেখযোগ্য পদক্ষেপ ছিল। তবে, পূর্ণ সমতা অর্জনের পথ দীর্ঘ এবং কঠিন ছিল, এবং অধিকারের জন্য সংগ্রাম পরবর্তী দশকেও চলেছিল।
গৃহযুদ্ধ উত্তর আমেরিকার অর্থনৈতিক উন্নয়নকে দ্রুততর করেছে, দেশের শিল্পায়ন এবং অর্থনৈতিক সমৃদ্ধির ভিত্তি স্থাপন করেছে। যুদ্ধটি দেখিয়েছে যে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র তাদের স্বাধীনতা এবং সমতার আদর্শের জন্য লড়াই করতে প্রস্তত ছিল, যা ভবিষ্যত প্রজন্মের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ পাঠ তৈরি করেছে।