তারা গ্রিেগোরিভিচ শেভচেঙ্কো (১৮১৪-১৮৬১) — বিশিষ্ট ইউক্রেনীয় কবি, শিল্পী, নাট্যকার এবং সমাজকর্মী, ইউক্রেনের জাতীয় নায়ক। তাঁর সৃষ্টি ইউক্রেনীয় সাহিত্য এবং ভাষার গঠনে একটি উদ্বেগপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে, এবং ইউক্রেনীয় জনগণের জাতীয় আত্মসচেতনতার জাগরণে। শেভচেঙ্কো ইউক্রেনীয় সংস্কৃতি এবং সাহিত্যের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিত্বগুলির মধ্যে এক হিসাবে বিবেচিত হয়, তাঁর রচনা বহু ভাষায় অনূদিত হয়েছে এবং ইউক্রেনে এবং এর সীমানার বাইরে বিশাল জনপ্রিয়তা অর্জন করেছে।
তারা শেভচেঙ্কো ১৮১৪ সালের ৯ মার্চ মরিনসি গ্রামে, এক দাস কৃষকের পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। শৈশব থেকেই তিনি চিত্রাঙ্কন এবং কবিতায় প্রতিভা প্রদর্শন করেন, তবে তাঁর শৈশব অসাধারণ কষ্টের মধ্যে ছিল। তার বাবা খুব তাড়াতাড়ি মারা যান, এবং তিনি তার মায়ের সঙ্গে রয়ে যান, যিনি তাঁর শিক্ষা নিশ্চিত করতে চেষ্টা করেন। কৈশোরে শেভচেঙ্কো স্কুলে পড়াশোনা করেছিলেন এবং বাড়ির মালী হিসাবেও কাজ করেছেন, যা তাকে তার শিল্পী দক্ষতা উন্নত করতে সহায়তা করেছে।
১৮৩১ সালে তারা সেন্ট-পিটার্সবার্গের জমিদার অ্যাঙেলগার্ড্টের হাতে পড়েন, যিনি তার প্রতিভা চিনতে পারলেন এবং তাকে বাড়ির গৃহকর্মীরূপে গ্রহণ করলেন। এই সময় শেভচেঙ্কো চিত্রাঙ্কন এবং আঁকনে সক্রিয়ভাবে জড়িত ছিলেন, এবং তাঁর কাজ স্থানীয় শিল্পীদের এবং শিল্পের প্রশংসকদের মনোযোগ আকর্ষণ করতে সক্ষম হয়।
শেভচেঙ্কোর সৃজনশীল ক্যারিয়ার ১৮৩৬ সালে শুরু হয়, যখন তিনি তার প্রথম কবিতার বই "কবজার" প্রকাশ করেন। এই রচনা ইউক্রেনীয় সাহিত্যে একটি প্রাথমিক কাজ হয়ে দাঁড়িয়ে, জাতীয় আত্মসচেতনতা গঠনে উল্লেখযোগ্য অবদান রেখেছে। "কবজার"-এ শেভচেঙ্কো সাধারণ মানুষের জীবন, তাদের কষ্ট এবং আশা প্রতিফলিত করেন, পাশাপাশি গুরুত্বপূর্ণ সামাজিক এবং রাজনৈতিক প্রশ্ন উত্থাপন করেন। তাঁর কবিতা স্বাধীনতা এবং স্বাধীনতার সংগ্রামের আত্মাকে ধারণ করে।
কবিতার পাশাপাশি, শেভচেঙ্কো চিত্রাঙ্কনেও সক্রিয় ছিলেন। তিনি সেই সময়ের বিখ্যাত শিল্পীদের কাছে শেখেন এবং এমন সমস্ত ছবি তৈরি করেন যা তার দক্ষতা এবং ব্যক্তিত্ব প্রদর্শন করে। শেভচেঙ্কোর চিত্রকলাও তার সামাজিক দৃষ্টিভঙ্গি এবং অনুভূতিগুলোকে প্রতিফলিত করে, শিল্প এবং জীবনযাত্রার মধ্যে একটি গভীর সংযোগ তৈরি করে।
শেভচেঙ্কোর কাজগুলোর মধ্যে বিস্তৃত বিষয়বস্তু রয়েছে: প্রেম এবং প্রকৃতি থেকে শুরু করে সামাজিক সংঘাত এবং রাজনৈতিক সংগ্রাম পর্যন্ত। তিনি কবিতা এবং পদ্য উভয়ই লিখেছেন, এবং তাঁর ভাষা এবং শৈলী সমৃদ্ধ এবং প্রকাশক্ষম। শেভচেঙ্কো লোকগাথা এবং চিত্রাবলী ব্যবহৃত করেছেন, যা তার কবিতাকে মানুষের জন্য সহজবোধ্য এবং কাছের করে তোলে।
শেভচেঙ্কোর সবচেয়ে বিখ্যাত রচনা之一 হল "গাইদামাকি", যেখানে তিনি ইউক্রেনীয় জনগণের আঠারো শতকের পোলিশ জমিদারদের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ বর্ণনা করেন। এই কাজটি স্বাধীনতা এবং ন্যায়ের সংগ্রামের একটি প্রতীক হয়ে দাঁড়িয়েছে, এবং এটি ইউক্রেনীয় সাহিত্যের ইতিহাসে একটি গুরুত্বপূর্ণ মাইলফলক। শেভচেঙ্কো দেশের প্রতি ভালোবাসা এবং জনগণের প্রতি সম্মান নিবেদিত অনেক কবিতা লিখেছেন, যেমন "জাপোভিট", যেখানে তিনি ইউক্রেনের ভবিষ্যতের জন্য তার আশা প্রকাশ করেন।
তাঁর সাফল্য সত্ত্বেও, শেভচেঙ্কো গুরুতর কষ্ট এবং নিপীড়নের মুখোমুখি হয়েছিলেন। ১৮৪৭ সালে তাঁকে রাজনৈতিক দৃষ্টিভঙ্গির জন্য গ্রেফতার করা হয় এবং সাইবেরিয়ায় নির্বাসিত করা হয়। শেভচেঙ্কোর এই সময় তার জীবনের একটি কঠিন পরীক্ষা হয়ে দাঁড়িয়েছিল। তিনি নির্বাসনে কয়েক বছর কাটিয়ে দেন, যেখানে তিনি লেখালেখি এবং চিত্রাঙ্কনের কাজ চালিয়ে যান, কঠিন পরিস্থিতিতেও।
নির্বাসনে শেভচেঙ্কো প্রচুর রচনা সৃষ্টি করেন, যা স্বাধীনতা এবং ন্যায়ের সংগ্রামের প্রতীক হয়ে ওঠে। তিনি কবিতা লেখার কাজ চালিয়ে যান, যা তার কষ্ট এবং ভবিষ্যতের জন্য আশা প্রতিফলিত করে। ১৮৫৭ সালে নির্বাসন থেকে ফেরার পর তিনি তার সাহিত্য কার্যক্রম চালিয়ে যান, কিন্তু তাঁর স্বাস্থ্য ততদিনে সম্পূর্ণরূপে কাজ করার জন্য সক্ষম ছিল না।
তারা শেভচেঙ্কো ইউক্রেনীয় সংস্কৃতি এবং সাহিত্যের উন্নয়নে বিশাল প্রভাব ফেলেছিলেন। তাঁর সৃষ্টি পরবর্তী অনেক লেখক, কবি এবং শিল্পীদের অনুপ্রাণিত করেছে, পাশাপাশি ইউক্রেনীয় জাতীয় আত্মসচেতনতার গঠনের ভিত্তি হিসেবে কাজ করেছে। শেভচেঙ্কো কেবলমাত্র একজন কবি নয়, बल्कि ইউক্রেনীয় জনগণের স্বাধীনতার এবং মুক্তির সংগ্রামের একজন প্রতীক।
তাঁর সম্মানে ইউক্রেন এবং এর সীমানার বাইরে অনেক শহরের রাস্তাঘাট, চৌকাট এবং স্মৃতিসৌধ নামকরণ করা হয়েছে। শেভচেঙ্কো জাতীয় নায়ক হয়ে উঠেছেন, এবং তাঁর রচনাগুলি এখনও বিদ্যালয় এবং বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়ন করা হয়, পাশাপাশি সমাজে ব্যাপকভাবে উদ্ধৃত করা হয়। তাঁর জীবন এবং কর্ম ইউক্রেনীয় জনগণের স্বাধীনতা এবং ন্যায়ের প্রতিশ্রুতি বোঝায়।
তারা শেভচেঙ্কো কেবল একটি কবি এবং শিল্পী নয়, তিনি ইউক্রেনীয় জাতীয় আত্মসচেতনতার এবং স্বাধীনতার সংগ্রামের প্রতীক। তাঁর সৃষ্টি নতুন ইউক্রেনীয় সাহিত্য এবং সংস্কৃতির গঠন উপলক্ষে একটি ভিত্তি হয়ে দাঁড়িয়েছে। শেভচেঙ্কো একটি উত্তরাধিকার রেখে গেছেন যা আজও অনুপ্রেরণা যোগাচ্ছে, এবং তাঁর নাম চিরকাল ইউক্রেনীয়দের হৃদয়ে একটি মহান পুত্র হিসেবে থাকবে, যিনি তার জীবনকে ইউক্রেনের সার্ভিসে উৎসর্গ করেছেন।