ইভান কোটলিয়েভস্কি — উক্রেনিয়ান লেখক, কবি এবং নাট্যকার, নতুন উক্রেনিয়ান সাহিত্যর প্রতিষ্ঠাতা। তার সৃষ্টির উক্রেনিয়ান ভাষা এবং সাহিত্য উন্নয়নে এক উল্লেখযোগ্য প্রভাব ছিল, পাশাপাশি উক্রেনিয়ান জনগণের জাতীয় আত্মসচেতনতার গঠনেও। কোটলিয়েভস্কি প্রথম ব্যক্তি যিনি জনগণের সাহিত্য traditions তে উক্রেনিয়ান ভাষায় লেখা শুরু করেন, যা ১৮শ শতকের শেষের দিকে এবং ১৯শ শতকের শুরুতে উক্রেনিয়ান সংস্কৃতির পুনর্জাগরণে সহায়ক ছিল।
ইভান কোটলিয়েভস্কি ১৭৬৯ সালের ৯ই সেপ্টেম্বর পলতাভায় এক বন্দী কৃষকের পরিবারে জন্ম নেন। তিনি পলতাভা গিমনাজিতে শিক্ষা লাভ করেন, যেখানে তিনি সাহিত্য এবং শিল্পের প্রতি আগ্রহ প্রদর্শন করেন। যুবক অবস্থায় কোটলিয়েভস্কি প্রায়ই থিয়েটার পরিদর্শন করতেন, যা তার সৃষ্টিশীল জীবনের একটি অমোচনীয় ছাপ রেখে গেছে।
গিমনাজি শেষ করার পরে তিনি সেনাবাহিনীতে চাকরি করেন, যেখানে তিনি উক্রেনিয়ান জনগণের জীবনের বিভিন্ন দিকের সাথে পরিচিত হন। এই অভিজ্ঞতা পরবর্তীতে তার কাজগুলোতে প্রতিফলিত হয়েছে, যেখানে তিনি দৈনন্দিন জীবন, রীতিনীতি এবং উক্রেনীয় জনগণের ঐতিহ্য বর্ণনা করেছেন।
কোটলিয়েভস্কি ১৮শ শতকের শেষের দিকে তার সাহিত্যিক ক্যারিয়ার শুরু করেন, যখন তিনি উক্রেনিয়ান ভাষায় কবিতা এবং নাটক লেখা শুরু করেন। তার প্রথম রচনা, যেমন "এনেইডা", ১৭৯৮ সালে লেখা হয় এবং তা উক্রেনিয়ান সাহিত্যিক ঐতিহ্যের গঠনের জন্য মৌলিক হয়ে ওঠে। "এনেইডা" একটি কাব্যময় কবিতার রচনা, যা প্রাচীন গ্রীক মহাকাব্য ট্রয় যুদ্ধের ভিত্তিতে রচিত, তবে লেখক এটিকে উক্রেনীয় সংস্কৃতির জন্য অভিযোজিত করেছেন, জনগণের মোতিফ এবং রীতিনীতি অন্তর্ভুক্ত করে।
কোটলিয়েভস্কির একটি উল্লেখযোগ্য অর্জন হলো যে তিনি এমন একটি রচনা তৈরী করতে সক্ষম হন যা শ্রেণীবিভাগবাদ এবং রোমান্টিজমের উপাদানগুলি মিলিত করে, তাও সাধারণ দর্শকদের জন্য উপলব্ধ থাকে। "এনেইডা" কেবল কীর্তি এবং জাতীয়তাবাদের প্রশস্তি দিয়েই সন্তুষ্ট নয়, বরং রাজনৈতিক দুরবস্থাগুলি যেমন ঘুষ এবং দুর্নীতি নিয়েও বিদ্রূপ প্রকাশ করেছে।
কোটলিয়েভস্কি একটি জটিল ঐতিহাসিক সময়ে বসবাস করতেন, যখন উক্রেন রাশিয়ান সাম্রাজ্যের নিয়ন্ত্রণে ছিল এবং উক্রেনিয়ান ভাষা ও সংস্কৃতি যথেষ্ট সীমাবদ্ধতার শিকার ছিল। তবুও, কোটলিয়েভস্কি উক্রেনিয়ান সাহিত্যর জন্য একটি অনন্য স্থান তৈরি করতে সক্ষম হন, যা টারাস শেভচেঙ্কো এবং ইভান ফ্রাঙ্কোর মতো অন্যান্য লেখকদের তার কাজটি এগিয়ে নিয়ে যেতে এবং উক্রেনিয়ান সাহিত্যকে আরো বিকশিত করতে সুযোগ প্রদান করে।
কোটলিয়েভস্কির সৃষ্টির একটি গুরুত্বপূর্ণ দিক হলো জনগণের ভাষার ব্যবহার, যা সাহিত্যিক ভাষার গণতন্ত্রায়নে সাহায্য করেছে। তিনি দেখিয়েছেন যে উক্রেনিয়ান ভাষা গভীর অনুভূতি এবং চিন্তাভাবনাকে প্রকাশ করতে সক্ষম, যা উক্রেনিয়ান লেখকদের জন্য নতুন দিগন্ত খুলেছে। এই প্রভাব সমসাময়িক উক্রেনিয়ান সাহিত্য প্রক্রিয়ায়ও অনুভূত হয়।
কবিতার পাশাপাশি কোটলিয়েভস্কি নাট্যকারিতাতেও জড়িত ছিলেন। তার কমেডিগুলি, যেমন "নাটালকা পলতাভকা", উক্রেনিয়ান তাত্ত্বিক নাটকে গুরুত্বপূর্ণ মাইলফলক হয়ে উঠেছে। "নাটালকা পলতাভকা" ১৮১৯ সালে লেখা হয় এবং এটি প্রথম উক্রেনিয়ান নাটকগুলির মধ্যে একটি যা মঞ্চস্থ হয়। এটি প্রেম, বিশ্বাস এবং কৃষকদের জীবনযাত্রার অসুবিধা নিয়ে গল্প বলে, যা এটিকে দর্শকদের মধ্যে খুব জনপ্রিয় করে তোলে।
কোটলিয়েভস্কি দক্ষতার সাথে তার কাজগুলোতে উক্রেনিয়ান লোকসঙ্গীত এবং লোকোত্তমার উপাদানগুলি ব্যবহার করেছেন, যা সেগুলিকে সাধারণ জনগণের জন্য উপলব্ধ এবং আকর্ষণীয় করে তোলে। তার কমেডিগুলি উক্রেনিয়ান নাটকের বিকাশের ভিত্তি হিসেবে কাজ করেছে এবং অনেক ভবিষ্যৎ নাট্যকারকে অনুপ্রাণিত করেছে।
ইভান কোটলিয়েভস্কি উক্রেনিয়ান সাহিত্য এবং সংস্কৃতিতে একটি অমোচনীয় ছাপ রেখে গেছেন। তার সৃষ্টিটি বহু লেখক এবং কবিদের জন্য মৌলিক হয়ে উঠেছে যারা পরবর্তী প্রজন্মের জন্য উক্রেনিয়ান সাহিত্যকে নতুনভাবে বিকশিত করতে চালিয়ে গেছেন। কোটলিয়েভস্কি উক্রেনিয়ান পরিচয় এবং স্বাতন্ত্র্যগত সংগ্রামের প্রতীক হয়ে উঠেছেন, এবং তার রচনাগুলি আজও প্রাসঙ্গিক।
কোটলিয়েভস্কি নতুন উক্রেনিয়ান সাহিত্যের জন্য শুধু দরজা খুললেনই না, বরং জাতীয় আত্মসচেতনতা গঠনে সহায়তা করেছেন। তার কাজগুলি অগণিত উক্রেনিয়ানের প্রজন্মকে তাদের অধিকার, সংস্কৃতি এবং ভাষার জন্য রক্ষার অনুপ্রাণিত করেছে। ১৮৯৮ সালে পলতাভায় কোটলিয়েভস্কির একটি স্মৃতিসৌধ প্রতিষ্ঠিত হয়, যা তার উক্রেনীয় সংস্কৃতিতে অবদানের প্রতি সম্মানের প্রতীক হয়ে ওঠে।
ইভান কোটলিয়েভস্কি উক্রেনীয় সাহিত্য ইতিহাসের অন্যতম উজ্জ্বল চরিত্র। তার সৃষ্টিটি উক্রেনিয়ান ভাষা এবং সাহিত্য উন্নয়নের একটি নতুন পর্যায়ের সূচনা করেছে। কোটলিয়েভস্কি জনগণকে তাদের সংস্কৃতি এবং স্বাতন্ত্র্যে গর্বিত করার সুযোগ দিয়েছেন, এবং তার কাজগুলি আজও আমাদের অনুপ্রাণিত করে। তিনি তাদের সাহিত্যিক ঐতিহ্য এবং জাতীয় আত্মসচেতনতার প্রতিষ্ঠাতা হিসেবে উক্রেনিয়ানদের মনে চিরকাল রয়ে যাবেন।