ঐতিহাসিক এনসাইক্লোপিডিয়া

প্যাট্রিয়নে আমাদের সমর্থন করুন

জওহরলাল নেহরু: জীবন ও ঐতিহ্য

জওহরলাল নেহরু (১৮৮৯–১৯৬৪) একজন বিশিষ্ট ভারতীয় রাজনৈতিক নেতা, স্বাধীন ভারতের প্রথম প্রধানমন্ত্রী এবং ভারতীয় রাষ্ট্রের অন্যতম প্রধান স্থপতি ছিলেন। তাঁর জীবন ও কর্মকাণ্ড দেশের রাজনৈতিক ও সামাজিক কাঠামোর ওপর গভীর প্রভাব ফেলেছে।

শৈশবকাল

নেহরু ১৮৮৯ সালের ১৪ নভেম্বর আলাহাবাদের একটি ধনী আইনজীবীর পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর মাতা, কামা নেহরু, গৃহকর্মী ছিলেন, আর পিতা, মোতিলাল নেহরু, রাজনৈতিক জীবনে активно অংশগ্রহণ করতেন। ১৫ বছর বয়সে তিনি ব্রিটেনে চলে যান, যেখানে তিনি হাররো গ্লুতে শেখার পর ক্যামব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রাকৃতিক বিজ্ঞান subjects নিয়ে পড়াশোনা করেছিলেন।

রাজনৈতিক ক্যারিয়ার

নেহরু ১৯১২ সালে ভারতে ফিরে এসেই ভারতীয় জাতীয় আন্দোলনের সক্রিয় সদস্য হিসেবে উঠে আসেন। তিনি মহাত্মা গান্ধীর নিকটতম সহচর ছিলেন এবং ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেসে গুরুত্বপূর্ণ পদে আসীন ছিলেন। নেহরু সম্পূর্ণ স্বাধীন সরকার ও সামাজিক সংস্কারের পক্ষে ছিলেন।

স্বাধীনতা আন্দোলন

১৯২০-এর দশকে নেহরু ব্রিটিশ উপনিবেশিক সরকারের বিরুদ্ধে অহিংস প্রতিবাদের আন্দোলনে সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করেন। তিনি একাধিকবার গ্রেপ্তার হয়েছিলেন, কিন্তু নিজের বক্তৃতার দক্ষতার মাধ্যমে জনগণকে অনুপ্রাণিত করতে তাঁর সংগ্রাম চালিয়ে যান। “স্বাধীনতার শুরু কোথায়” এর মতো তাঁর বই ও নিবন্ধগুলি যুবক এবং বুদ্ধিজীবীদের মধ্যে জনপ্রিয় হয়ে ওঠে।

প্রথম প্রধানমন্ত্রী

১৯৪৭ সালে ভারতের স্বাধীনতার পর নেহরু দেশের প্রথম প্রধানমন্ত্রী হন। তাঁর সরকারের সামনে অসাধারণ চ্যালেঞ্জ ছিল: দেশের বিভाजन, লক্ষ লক্ষ মানুষের অভিবাসন এবং নতুন প্রতিষ্ঠান প্রতিষ্ঠার প্রয়োজন। নেহরু একটি ধর্মনিরপেক্ষ এবং গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র নির্মাণের ওপর কাজ করেন, শিল্পায়ন এবং সামাজিক ন্যায় প্রতিষ্ঠায় পদক্ষেপ নেন।

আর্থিক সংস্কার

নেহরু সমাজতন্ত্রী নীতির ভিত্তিতে “পরিকল্পিত অর্থনীতির” নীতি পরিচালনা করেন। তিনি বৃহৎ সরকারি উদ্যোগ প্রতিষ্ঠা এবং অবকাঠামো উন্নয়নের উদ্যোগ গ্রহণ করেন। তবে তাঁর পদ্ধতির সমালোচনা হত privata খাত ও কৃষি অর্থনীতির জন্য যথেষ্ট সমর্থন না দেওয়ার জন্য।

বহির্বিশ্বের নীতি

নেহরু ভারতের বহির্বিশ্বের নীতি গঠনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতেন। তিনি নন-এলায়েন্স আন্দোলনের অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা ছিলেন, যা সম্প্রতি কলোনিয়াল শাসন থেকে মুক্ত হওয়া দেশগুলোর জন্য একটি নিরপেক্ষ কোর্স তৈরি করার চেষ্টা করেছিল। নেহরু শোকতিভাবপূর্ণ সহাবস্থানের এবং জাতিগুলোর মধ্যে সহযোগিতার ধারণাগুলি সমর্থন করতেন।

চীনের সাথে সম্পর্ক

দুর্ভাগ্যক্রমে, তাঁর বিদেশী নীতি প্রয়াসগুলি সর্বদা সফল হয়নি। ১৯৬২ সালে ভারত চীনের সাথে সীমান্ত সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে, যা নেহরু এবং তাঁর সরকারের কর্তৃত্বকে ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করে। এই ঘটনাটি অনেককে তাঁর বিদেশী নীতি এবং নিরাপত্তার প্রতি দৃষ্টিভঙ্গি পুনঃমূল্যায়ন করতে বাধ্য করে।

ব্যক্তিত্ব এবং ঐতিহ্য

জওহরলাল নেহরু শুধু একজন রাজনৈতিক নেতাই নন, তিনি একটি উজ্জ্বল ব্যক্তিত্বযুক্ত ব্যক্তি ছিলেন। সাহিত্যের প্রতি তাঁর প্রেম, শিল্প এবং দর্শন তাঁকে একটি অনন্য নেতা হিসাবে উদ্ভূত করেছিল। নেহরু প্রায়শই তাঁর চিন্তা ও অনুভূতি সম্পর্কে লিখতেন, “গরিব নিবাস” এবং “কন্যার প্রতি পত্র” এর মতো বইগুলি তৈরি করেন, যা ভারতীয় সাহিত্যের ক্লাসিক হয়ে ওঠে।

তিনি বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির প্রতি সক্রিয় সমর্থন প্রদান করতেন, দেশের ভবিষ্যতের জন্য তাঁদের গুরুত্ব বুঝতে পেরে। তাঁর প্রচেষ্টা ভারতীয় প্রযুক্তি ইনস্টিটিউট এবং অন্যান্য বৈজ্ঞানিক প্রতিষ্ঠানের প্রতিষ্ঠা নিয়ে এসেছিল, যা এখনও ভারতের উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে।

সমাপ্তি

জওহরলাল নেহরু ভারতের ইতিহাসে এক অমর ছাপ রেখে গেছেন। ধর্মনিরপেক্ষতা, গণতন্ত্র এবং সমাজতন্ত্র সম্পর্কে তাঁর ধারণাগুলি নতুন প্রজন্মকে অনুপ্রাণিত করছে। কিছু ভুল ও ব্যর্থতা সত্ত্বেও, তাঁর ঐতিহ্য ভারতীয় ইতিহাসের প্রক্রিয়া এবং আধুনিক রাজনৈতিক বাস্তবতা বোঝার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ রয়ে গেছে।

নেহরু ১৯৬৪ সালের ২৭ মে বিদায় নেন, কিন্তু ভারতের রাজনীতি ও সমাজে তাঁর প্রভাব আজও অনুভূত হয়। তিনি স্বাধীনতা সংগ্রাম এবং সংস্কারগুলির প্রতীক হিসাবে রয়ে যান, যা আধুনিক ভারতীয় রাষ্ট্রের ভিত্তি গঠন করেছে।

শেয়ার করতে:

Facebook Twitter LinkedIn WhatsApp Telegram Reddit Viber email
প্যাট্রিয়নে আমাদের সমর্থন করুন