ব্রিটিশ যুগ ইরাকে শুরু হয়েছিল 20 শতকের শুরুতে এবং 1958 সাল পর্যন্ত চলেছিল। এই সময়কালটি দেশের রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক এবং সামাজিক জীবনের জন্য গুরুত্বপূর্ণ ছিল, এবং এর ফলাফলগুলি আজও অনুভূত হয়। ব্রিটিশ শাসন, যা প্রথম বিশ্বযুদ্ধের সাথে শুরু হয়েছিল, অঞ্চলের ক্ষমতার কাঠামো, সংস্কৃতি এবং অর্থনীতিতে উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন নিয়ে আসে।
20 শতকের শুরুতে, অটোমান সাম্রাজ্য, যার মধ্যে ইরাক অন্তর্ভুক্ত ছিল, অভ্যন্তরীণ সংঘাত এবং বাইরের হুমকির কারণে দুর্বল হয়ে পড়েছিল। 1914 সালে প্রথম বিশ্বযুদ্ধ শুরু হওয়ার সাথে সাথে ব্রিটেন মধ্যপ্রাচ্যে তাদের অবস্থান শক্তিশালী করার সুযোগ দেখেছিল। 1914 সালে ব্রিটিশ বাহিনী ইরাকি অঞ্চলের দখলের জন্য অভিযান শুরু করে, যা 1918 সালে শেষ হয়েছিল।
1917 সালে ব্রিটিশ বাহিনী জেনারেল এডমন্ড অ্যালেনবির নেতৃত্বে ব্যাগদাদ দখল করে। এই ঘটনা মধ্যপ্রাচ্যে ব্রিটিশ অভিযানের একটি গুরুত্বপূর্ণ মুহূর্ত হয়ে ওঠে, এবং 1918 সালে যুদ্ধ শেষ হওয়ার পরে ইরাক ব্রিটিশ ম্যান্ডেটের অধীনে চলে যায়।
1920 সালে জাতিসংঘ ব্রিটেনকে ইরাকে ম্যান্ডেট রাষ্ট্র হিসেবে নিয়োগ দেয়। ব্রিটিশ ম্যান্ডেটের উদ্দেশ্য ছিল ইরাকের শাসন পরিচালনা করা, যাতে দেশটি স্বাধীনতার জন্য প্রস্তুত হয়। তবে প্রকৃতপক্ষে ব্রিটিশ প্রশাসন দেশের গুরুত্বপূর্ণ জীবনধারাগুলোর ওপর নিয়ন্ত্রণ বজায় রেখেছিল।
ব্রিটিশরা একটি প্রশাসনিক ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করে, যা স্থানীয় নেতাদের এবং ঐতিহ্যবাহী ক্ষমতার কাঠামোকে অন্তর্ভুক্ত করে, কিন্তু প্রকৃত ক্ষমতা ব্রিটিশ কর্মকর্তাদের হাতে ছিল। এটি স্থানীয় জনগণের মধ্যে অসন্তোষ সৃষ্টি করে এবং স্বাধীনতার জন্য একটি জাতীয় আন্দোলনের রূপ নিতে শুরু করে।
ব্রিটিশ যুগ ইরাকে উল্লেখযোগ্য সামাজিক এবং অর্থনৈতিক পরিবর্তনও এনেছিল। দেশের অর্থনীতি তেল রপ্তানির উপর ভিত্তি করে গড়ে উঠেছিল, যা ভবিষ্যৎ উন্নয়নের ভিত্তি হয়ে দাঁড়ায়।
1927 সালে ইরাকে প্রথম বাণিজ্যিক তেল ক্ষেত্র খোঁজা হয়, যা উল্লেখযোগ্য বিনিয়োগ এবং বিদেশী কোম্পানিকে আকৃষ্ট করে। তেল শিল্প দেশের জন্য প্রধান আয়ের উৎস হয়ে ওঠে এবং এর অর্থনৈতিক কাঠামোর ওপর প্রভাব ফেলে।
ব্রিটিশ প্রশাসন শিক্ষাপ্রণালী এবং স্বাস্থ্যসেবার উন্নয়নে অবদান রাখে। নতুন স্কুল এবং হাসপাতাল নির্মাণ করা হয়, যা স্থানীয় জনগণের জীবনযাত্রার মান বাড়াতে সহায়ক হয়। তবে এই পরিষেবাগুলির প্রতি প্রবেশাধিকার সীমিত ছিল, এবং অনেক গোষ্ঠী দারিদ্র্যের মধ্যে রয়ে গিয়েছিল।
1920-এর দশকের শুরু থেকে ইরাকে ব্রিটিশ ম্যান্ডেটের বিরুদ্ধে জাতীয় আন্দোলন তৈরি হতে শুরু করে। এই আন্দোলন রাজনৈতিক দমন, অর্থনৈতিক বৈষম্য এবং সামাজিক অবিচারের বিরুদ্ধে প্রতিক্রিয়া ছিল।
1920 সালে ব্রিটিশ শাসনের বিরুদ্ধে একটি বড় বিদ্রোহ ঘটে, যা ইরাকের বিদ্রোহ নামে পরিচিত। এই বিদ্রোহ স্থানীয় জনগণের অসন্তোষ এবং স্বাধীনতার দাবিকে প্রকাশ করে। ব্রিটিশ কর্তৃপক্ষ কঠোর দমন-পীড়ন দিয়ে প্রতিক্রিয়া জানাতে থাকে, যা প্রতিরোধকে আরও শক্তিশালী করে।
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পরে, ইরাকে জাতীয় আন্দোলন পুনরায় সক্রিয় হয়। 1946 সালে ব্রিটিশ প্রশাসন নির্বাচন আয়োজন করে, তবে তা প্রত্যাশিত পরিবর্তন আনে না, এবং অসন্তোষ বাড়তে থাকে।
1958 সালে ইরাকে একটি অভ্যুত্থান ঘটে, যা রাজা ফয়সাল দ্বিতীয়কে উৎখাত করে এবং ব্রিটিশ দ্বারা প্রতিষ্ঠিত রাজতন্ত্রের অবসান ঘটায়। এই ঘটনা ইরাকের জনগণের স্বাধীনতার সংগ্রামের এক স্লোক হয়ে ওঠে এবং ব্রিটিশ যুগের সমাপ্তি চিহ্নিত করে।
ইরাকে ব্রিটিশ যুগের উত্তরাধিকারের প্রভাব আজও অনুভূত হয়। ব্রিটিশ শাসন রাজনৈতিক ব্যবস্থায়, সামাজিক কাঠামো এবং দেশের অর্থনীতিতে ছাপ রেখে গেছে। তেল শিল্পের বিকাশ এবং শিক্ষাপ্রণালী ও স্বাস্থ্যসেবার ব্যবস্থা ইরাকের ভবিষ্যৎ উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে।
স্বাধীনতা অর্জনের পর ইরাক রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা, অর্থনৈতিক সমস্যা এবং সামাজিক সংঘাতের মুখোমুখি হয়। এই সমস্যাগুলি অনেকাংশে উপনিবেশিক অতীত থেকে উত্তরাধিকারসূত্রে পাওয়া যায় এবং দেশের ভবিষ্যৎ ঘটনাবলীতে প্রতিফলিত হয়।
ইরাকে ব্রিটিশ যুগ দেশটির ইতিহাসে একটি গুরুত্বপূর্ণ এবং জটিল সময়কাল ছিল। এই সময়কাল অর্জন এবং সমস্যাগুলির মাধ্যমে চিহ্নিত হয়েছে, যা ইরাকের ভবিষ্যতে প্রভাবিত করেছে। স্বাধীনতার সংগ্রাম, তেল শিল্পের বিকাশ এবং সামাজিক কাঠামোর পরিবর্তন আধুনিক ইরাক এবং বিশ্বের মধ্যে এর স্থান গঠন করেছে।