ইরাক, প্রাচীন সভ্যতার সংযোগস্থলে অবস্থিত, হাজার বছরেরও বেশি সময় ধরে একটি সমৃদ্ধ ও জটিল ইতিহাস ধারণ করে। এর ভূমিতে মানবতার প্রথম সভ্যতাগুলোর মধ্যে কয়েকটি, যেমন সুমের, আক্ক্যাড, ব্যাবিলন এবং অ্যাসিরিয়া গড়ে উঠেছিল।
সুমেররা, যারা মেসোপটেমিয়ার দক্ষিণে বসবাস করত, বিশ্বের প্রথম লিখিত ব্যবস্থা – পেরেশি তৈরি করেছিল। কৃষি, স্থাপত্য এবং গাণিতিক বিষয়ে তাদের অর্জনগুলি ভবিষ্যতের সভ্যতাগুলির উপর গভীর প্রভাব ফেলেছিল।
আক্ক্যাড, যা প্রায় 2300 খ্রিস্টপূর্বাব্দে প্রতিষ্ঠিত হয়, ইতিহাসের প্রথম সাম্রাজ্য হিসেবে আবির্ভূত হয়। সুমের এবং আক্ক্যাড সংস্কৃতির মিশ্রণ শক্তিশালী সাংস্কৃতিক এবং ভাষাগত ঐতিহ্য তৈরি করে।
ব্যাবিলন, যার বিশাল ইয়াদগারের জন্য পরিচিত, যেমন ঝুলন্ত বাগান, প্রাচীন বিশ্বের প্রতীক হয়ে ওঠে। হামুরাবির কোড, যা প্রথম আইনসমূহের একটি, ব্যাবিলনে নির্মিত হয় এবং অন্যান্য সংস্কৃতির আইনি ব্যবস্থার উপর গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব ফেলে।
অ্যাসিরিয়া, যার সামরিক বিজয়ের জন্য পরিচিত, মধ্য প্রাচ্যে আধিপত্য বিস্তার করে এবং নিনেভিতে একটি ব্যাপক গ্রন্থাগার প্রতিষ্ঠা করে, যেখানে হাজার হাজার পেরেশি টেবিল রাখা হয়।
সাতশত সালে ইসলাম উদ্ভাবনের সঙ্গে সঙ্গে ইরাক একটি গুরুত্বপূর্ণ ইসলামী সভ্যতার কেন্দ্র হয়ে ওঠে। 762 সালে প্রতিষ্ঠিত বাগদাদ আব্বাসীয় খলিফাতের রাজধানী এবং সেই সময়ের সংস্কৃতির কেন্দ্র হয়, যেখানে বিজ্ঞান, দর্শন এবং শিল্প проц্ফলিত হয়।
নবম- দশম শতাব্দীতে বাগদাদ একটি গুরুত্বপূর্ণ বাণিজ্যিক এবং বুদ্ধিবৃত্তিক কেন্দ্র হয়ে ওঠে, পৃথিবীর সকল স্থানের বিজ্ঞানী, কবি এবং দর্শনবিদদের আকর্ষণ করে। এই সময়ে আধুনিক অনেক বিজ্ঞান, যেমন জ্যোতির্বিজ্ঞান এবং মেডিসিনের ভিত্তি স্থাপন করা হয়।
সৌরময শতাব্দীতে ইরাক ওসমানীয় সাম্রাজ্যের একটি অংশ হয়ে উঠে এবং চারশো বছর ধরে এর অধীনে ছিল। এই সময়কাল আপেক্ষিক স্থিতিশীলতার জন্য পরিচিত, তবে অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্বও ছিল।
প্রথম বিশ্বযুদ্ধে পর ইরাক ব্রিটেনের নিয়ন্ত্রণে চলে আসে, যা দেশের প্রশাসন এবং অর্থনীতিতে উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন নিয়ে আসে। 1921 সালে রাজতন্ত্র ঘোষণা করা হয়, কিন্তু অভ্যন্তরীণ বিরোধ ও প্রতিবাদগুলি বিদায়ী ছিল।
1958 সালে ইরাকে একটি বিপ্লব ঘটে, যার ফলে রাজতন্ত্র উৎখাত হয় এবং প্রজাতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত হয়। নতুন সরকার বাথ পার্টির নেতৃত্বে কয়েকটি সংস্কার কার্যকর করে, তবে গুরুতর অভ্যন্তরীণ এবং বাহ্যিক চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন হয়।
1980 সালে ইরান-ইরাক যুদ্ধ শুরু হয়, যা 1988 সাল পর্যন্ত চলে এবং মিলিয়নেরও বেশি মানুষের প্রাণহানি ঘটে। এই সংঘাত দেশের অর্থনৈতিক অবনতি এবং সামাজিক বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করে।
1990 সালে সদ্দাম হোসেনের নেতৃত্বে ইরাক কুয়েতে আক্রমণ করে, যা আন্তর্জাতিক হস্তক্ষেপ এবং "মরুভূমির ঝড়" অভিযানের দিকে পরিচালিত করে। 2003 সালে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ইরাকে আক্রমণ করে, যা সদ্দামের শাসনের পতন এবং নতুন অস্থির সময়কাল শুরু করে।
হোসেনের সরকারের পতনের পর ইরাক গুরুতর চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন হয়, যার মধ্যে সন্ত্রাসী কার্যক্রম এবং অভ্যন্তরীণ সংঘাত অন্তর্ভুক্ত। ইসলামী রাষ্ট্র (আইএস) দেশের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ হুমকি হয়ে ওঠে, যা মানবিক সংকট এবং জনসংখ্যার ব্যাপক স্থানান্তরের দিকে পরিচালিত করে।
কষ্ট সত্ত্বেও, ইরাক পুনরুদ্ধারের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। আজকের দিনে দেশটি শান্তি এবং স্থিতিশীলতা প্রতিষ্ঠা করার পাশাপাশি কয়েক বছরের সংঘাতের পর অর্থনীতি পুনরুদ্ধারে প্রচেষ্টা চালাচ্ছে।
ইরাকের ইতিহাস হল একটি সমৃদ্ধ সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য, মহান সভ্যতা এবং আধুনিক চ্যালেঞ্জের ইতিহাস। এই ইতিহাসের উপলব্ধি ইরাকের জটিল রাজনৈতিক এবং সামাজিক পরিস্থিতি উপলব্ধির জন্য গুরুত্বপূর্ণ।