সাতের শতকে আরবের ইরাক জয় অঞ্চলটির ইতিহাসে একটি গুরুত্বপূর্ণ পর্যায় ছিল, যা এর সংস্কৃতি, ধর্ম এবং রাজনৈতিক কাঠামোর উপর উল্লেখযোগ্য প্রভাব ফেলেছিল। এই জয় আরবিকরণ এবং ইসলামের সূচনা করেছিল ইরাকে, দেশের চেহারা বহু শতক ধরে পরিবর্তন করে দিয়েছিল।
সাতের শতকের শুরুতে আরব উপদ্বীপ ভাঙা অবস্থায় ছিল, অনেক উপজাতি এবং শহর-রাজ্যের সাথে। তবে 610 সালে ইসলামের উদ্ভবের সাথে, যার ভিত্তি প্রফেট মুহাম্মদ দ্বারা স্থাপিত হয়েছিল, আরবরা একক ধর্মের তলে একত্রিত হতে শুরু করে। এই ঐক্য ভবিষ্যতের জয়ের জন্য একটি শক্তিশালী উপাদান হয়ে ওঠে।
মুহাম্মদের মৃত্যুর পর 632 সালে তার অনুসারীরা, যাদের খলিফা বলা হয়, ইসলামের বিস্তারের জন্য সক্রিয় সামরিক অভিযান শুরু করেন। প্রথম খলিফাগণের মধ্যে, বিশেষ করে আবুবকর এবং উমর ইব্ন আল-খাত্তাব, এই জয়ের সূচনা করেছিলেন, যা সংলগ্ন অঞ্চলে বিস্তৃত হয়েছিল, যার মধ্যে ইরাকও অন্তর্ভুক্ত ছিল।
ইরাকের জয় 634 সালে দ্বিতীয় খলিফা উমরের শাসনামলে শুরু হয়। আরব সামরিক বাহিনী, যা প্রধানত বেদুইনদের নিয়ে গঠিত ছিল, দ্রুত অঞ্চলের দিকে অগ্রসর হতে থাকে, যা তখনও বাইজান্টাইন এবং সাসানিয়ান সাম্রাজ্যের অংশ ছিল।
যুদ্ধ দুটি ছিল, যা ইরাক জয়ে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রেখেছিল, কাদিসিয়ার যুদ্ধ এবং নাহাভন্দ যুদ্ধ। 636 সালে কাদিসিয়ার যুদ্ধ একটি মোড় হিসেবে পরিণত হয়, যেখানে আরব বাহিনী সাসানিয়ান সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে নির্ধারক বিজয় অর্জন করে। এই যুদ্ধ রাজধানী শহর কৃত্যাসিফন দখলের পথ খুলে দেয়, যা আরব শাসনের অধীনে পড়া প্রথম বড় শহরগুলির মধ্যে একটি হয়।
642 সালে, নাহাভন্দ যুদ্ধের পর, সাসানিয়ান সাম্রাজ্য চূড়ান্তভাবে বিধ্বস্ত হয় এবং আরবরা ইরাকে তাদের ক্ষমতা প্রতিষ্ঠা করে। এই বিজয়গুলি শুধু আরবদের জন্য অঞ্চলগুলোর ওপর নিয়ন্ত্রণ নিশ্চিত করে নাই, বরং ইসলামের বিস্তারকেও উৎসাহিত করে।
জয়ের পর আরব খলিফাগণ নতুন প্রশাসনিক কাঠামো প্রতিষ্ঠা করেন। ইরাককে প্রদেশে বিভক্ত করা হয়, যার প্রতিটি স্থানীয় গভর্নর দ্বারা পরিচালিত হত। তারা কর সংগ্রহ এবং শৃঙ্খলা রক্ষা করার জন্য দায়ী ছিল, এবং ইসলামী নিয়মাবলী এবং সংস্কৃতির বিস্তারে সহায়তা করত।
জয়ের একটি উল্লেখযোগ্য পরিণাম ছিল স্থানীয় জনসংখ্যার ইসলাম গ্রহণ। আরব বিজেতারা শুধু নতুন ধর্ম নিয়ে আসেননি, বরং স্থানীয় জনগণের ইসলামিকরণ প্রক্রিয়া শুরু করেন। এই প্রক্রিয়াটি কয়েক শতাব্দী ধরে চলছিল, এবং 10 শতকের মধ্যে ইরাকের অধিকাংশ জনসংখ্যা ইতিমধ্যেই ইসলাম গ্রহণ করেছিল।
আরবের জয় ইরাকে উল্লেখযোগ্য সামাজিক পরিবর্তনও নিয়ে আসে। অঞ্চলটির সংস্কৃতি ইসলামের এবং আরব ঐতিহ্যের প্রভাবে রূপান্তরিত হতে শুরু করে। নতুন ব্যবস্থা বিজ্ঞান, শিল্প এবং সাহিত্যের বিকাশে সাহায্য করে, যা ইরাককে খলিফাতের একটি সংস্কৃতিক কেন্দ্র করে তোলে।
আরবদের শাসনের অধীনে ইরাক ইসলাম এবং আরব সংস্কৃতির একটি গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্র হয়ে ওঠে। 762 সালে প্রতিষ্ঠিত বাগদাদ আব্বাসীয় খলিফাতের রাজধানী হয়ে ওঠে এবং দ্রুত সময়ের অন্যতম বৃহত্তম শহরে পরিণত হয়, সমগ্র বিশ্ব থেকে পণ্ডিত, দার্শনিক এবং স্থপতিদের আকর্ষণ করে।
বাগদাদে বাইত আল-হিকমা (জ্ঞানঘর) প্রতিষ্ঠিত হয়, যেখানে পণ্ডিতরা জ্ঞান বিনিময়ের জন্য সমাবেশ হতেন। এটি ইসলামী জগতের মধ্যে বিজ্ঞান এবং সংস্কৃতির বিকাশে একটি গুরুত্বপূর্ণ পর্যায় হয়ে ওঠে। ইরাকের গণিতে, জ্যোতির্বিজ্ঞানে, চিকিৎসা এবং দার্শনিকতায় উল্লেখযোগ্য সাফল্য অর্জিত হয়।
আরবের জয় অর্থনীতির কাঠামোতেও পরিবর্তন নিয়ে আসে। নতুন ব্যবস্থা ব্যবসা ও কৃষির বিকাশে সহায়তা করে, এবং আরবদের দ্বারা প্রতিষ্ঠিত কর ব্যবস্থা খলিফাতে স্থিতিশীল অর্থনৈতিক প্রবাহ নিশ্চিত করে।
ইরাক পূর্ব এবং পশ্চিমের মধ্যে একটি গুরুত্বপূর্ণ বাণিজ্য কেন্দ্র হয়ে ওঠে। অঞ্চলটির মধ্য দিয়ে আসা বাণিজ্যিক পথগুলি পণ্য, ধারণা এবং সংস্কৃতির বিনিময়ে সহায়তা করে, যা ইরাকের এবং আরবের সমাজকে সমৃদ্ধ করে।
আরবের ইরাক জয় একটি মূল ঘটনা হয়ে ওঠে, যা অঞ্চলের ইতিহাসে দীর্ঘমেয়াদী প্রভাব ফেলেছে। এটি ইসলামের বিস্তার, জনসংখ্যার আরবিকরণ এবং সামাজিক, সাংস্কৃতিক ও অর্থনৈতিক পরিবেশে উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন এনেছে। এই পরিবর্তনগুলি ইরাকের ইতিহাসে একটি নতুন যুগের সূচনা করেছিল, যার মাধ্যমে এর আধুনিক মুখমণ্ডল গঠিত হয়েছে।