ওসমানী এবং ব্রিটিশ যুগগুলি ইরাকের ইতিহাস, সংস্কৃতি এবং সামাজিক কাঠামোর উপর গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব ফেলেছে। এই দুটি কাল, চার শতাব্দীরও বেশি সময়কাল জুড়ে, অর্জন এবং চ্যালেঞ্জ উভয়ই নিয়ে এসেছে, যা দেশের আধুনিক রূপকে গড়ে তুলেছে। এই যুগগুলি নিয়ে গবেষণা আধুনিক ইরাকের সমাজ এবং তার পরিচয়ের মূলগুলি বোঝার জন্য সহায়ক।
১৪ শতকে প্রতিষ্ঠিত ওসমানী সাম্রাজ্য পূর্ব এবং দক্ষিণে বিস্তার লাভ করেছিল, এবং ১৬ শতকের শুরুতে ইরাক এই সাম্রাজ্যের অংশ হয়ে ওঠে। ওসমানী শাসন ২০ শতকের শুরু পর্যন্ত স্থায়ী ছিল এবং এই অঞ্চলের জীবনযাত্রার উপর গভীর প্রভাব ফেলেছিল।
ইরাক একাধিক প্রদেশে ভাগ করা হয়েছিল, যা সুলতানের দ্বারা নিযুক্ত গভর্নরদের দ্বারা পরিচালিত হত। প্রধান শহর বাগদাদ সাম্রাজ্যের একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশাসনিক এবং সাংস্কৃতিক কেন্দ্র হয়ে উঠেছিল। ওসমানী কর্তৃত্ব সাপেক্ষে একটি আপেক্ষিক স্থিতিশীলতা এবং নিরাপত্তা নিশ্চিত করেছিল, যা বাণিজ্য এবং কৃষির উন্নয়নে সহায়ক ছিল।
ওসমানী শাসনের সময় ইরাকে স্থাপত্য, শিল্প এবং সাহিত্য বিকাশ লাভ করেছিল। বাগদাদ একটি গুরুত্বপূর্ণ সাংস্কৃতিক কেন্দ্র হয়ে উঠেছিল, যেখানে বৈজ্ঞানিক এবং সাংস্কৃতিক অর্জনগুলি কেন্দ্রীভূত হয়েছিল। মসজিদ, প্রাসাদ এবং শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান নির্মাণ করা হয়েছিল, যা ইসলামী স্থাপত্যের সমৃদ্ধ উৎস heritage প্রতিফলিত করেছিল।
এই সময়ে উল্লেখযোগ্য জাতিগত এবং ধর্মীয় মিশ্রণ ঘটেছিল। ওসমানীরা একটি বহুজাতিক সাম্রাজ্য পরিচালনা করছিল, এবং ইরাক আরব, কুর্দি, তুর্কমেন এবং অন্যান্য জাতিগত গোষ্ঠীর জন্য একটি আবাসস্থল হয়ে ওঠে। এই বৈচিত্র্য দেশের সংস্কৃতিকে সমৃদ্ধ করেছে, কিন্তু এটি বিভিন্ন গোষ্ঠীর মধ্যে সংঘাত এবং টানাপোড়েনও সৃষ্টি করেছে।
প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পর এবং ওসমানী সাম্রাজ্যের পতনের পর ইরাক ব্রিটিশ ব্যবস্থাপনায় চলে আসে। প্রথমে এটি একটি ম্যান্ডেট অঞ্চল ছিল, এবং এরপর ১৯৩২ সালে ইরাক স্বাধীনতা লাভ করে। তবে, ব্রিটেনের প্রভাব উল্লেখযোগ্যভাবে অব্যাহত থাকে।
যুদ্ধের পরে ইরাক জাতিসংঘের ম্যান্ডেট সিস্টেমের অংশ হয়ে ওঠে, যা ব্রিটেনকে দেশের রাজনৈতিক এবং অর্থনৈতিক বিষয়গুলি নিয়ন্ত্রণ করতে দেয়। এর ফলে স্থানীয় জনসংখ্যার মধ্যে অসন্তোষ সৃষ্টি হয়, যা ব্রিটিশ শাসনের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ এবং প্রতিবাদের রূপ নেয়।
ব্রিটিশরা ইরাকের অবকাঠামো উন্নয়নে বিনিয়োগ করেছিল, যার মধ্যে রাস্তা, রেলপথ এবং স্কুল নির্মাণ অন্তর্ভুক্ত ছিল। এটি সাক্ষরতার বৃদ্ধি এবং জীবনযাত্রার মান উন্নয়নে সহায়ক হয়, তবে এটি ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক কর্তৃপক্ষের স্বার্থের জন্যও কাজ করেছিল।
ইরাকে পরিস্থিতি উত্তেজনাপূর্ণ ছিল। ১৯৪১ সালে একটি অভ্যুত্থান ঘটে, যার ফলে জাতীয়তাবাদী শক্তিগুলি ক্ষমতায় আসতে থাকে। এটির ফলে ব্রিটিশ বাহিনীর হস্তক্ষেপ ঘটে এবং দেশের উপর নিয়ন্ত্রণ পুনঃস্থাপন হয়।
যুদ্ধপরবর্তী সময় শুরু হওয়ার সাথে সাথে ইরাকে একটি জাতীয়তাবাদী আন্দোলন গড়ে উঠতে শুরু করে, যা ব্রিটিশ নিয়ন্ত্রণ থেকে পূর্ণ স্বাধীনতার প্রতি আকাঙ্ক্ষা করছিল। নতুন রাজনৈতিক দল এবং সংগঠনগুলির উত্থান দেশের ইতিহাসে একটি গুরুত্বপূর্ণ পর্যায়।
১৯৫৮ সালে একটি বিপ্লবী ঘটনা ঘটে, যা রাজতন্ত্রের পতন এবং প্রজাতন্ত্র ঘোষণার দিকে নিয়ে যায়। এটি স্বাধীনতার জন্য দীর্ঘ সংগ্রামের এবং ইরাকের মানুষের আত্মনির্ধারণের আকাঙ্ক্ষার ফলস্বরূপ।
উভয় যুগ - ওসমানী এবং ব্রিটিশ - ইরাকের সাংস্কৃতিক এবং সামাজিক জীবনে গভীর ছাপ ফেলেছে। স্থাপত্যে যেমন ওসমানী এবং ব্রিটিশ শৈলীর উপাদানগুলি দেখা যায়। ভাষা, সাহিত্য এবং শিল্পও এই দুটি সংস্কৃতির প্রভাব দ্বারা সমৃদ্ধ হয়েছে।
এই সময়ে নতুন সাহিত্যিক শৈলী এবং ধারা বিকাশ লাভ করে। কবিরা, লেখক এবং শিল্পীরা পরিচয়, স্বাধীনতা এবং সামাজিক কাঠামোর বিষয়ে থিমগুলি অন্বেষণ করেছেন, যা ঐতিহাসিক জটিলতা এবং মানুষের স্বায়ত্তশাসনের আকাঙ্ক্ষাকে প্রতিফলিত করে।
ইরাকে ওসমানী এবং ব্রিটিশ যুগগুলি ছিল উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন, সংঘাত এবং অর্জনের সময়কাল। এই দুটি যুগ আধুনিক ইরাকের সমাজ, সংস্কৃতি এবং পরিচয় গঠনে প্রভাবিত হয়েছে। ইরাকের ইতিহাস নিয়ে গবেষণা কেবল এর অতীতকে বোঝায় না, বরং দেশের বর্তমান সমস্যাগুলি বোঝার ক্ষেত্রেও সহায়ক, যা স্থিতিশীলতা এবং সমৃদ্ধির দিকে এগিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করছে।