ঐতিহাসিক এনসাইক্লোপিডিয়া

প্যাট্রিয়নে আমাদের সমর্থন করুন

ইরাকের পরিচিত ঐতিহাসিক নথি

ইরাক একটি সমৃদ্ধ সাংস্কৃতিক এবং ঐতিহাসিক উত্তরাধিকার সহ একটি দেশ, যা হাজার হাজার বছরের মনোযোগ আকর্ষণ করে। বিশ্বের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সভ্যতাগুলি, যেমন শুমের, অ্যাক্কাদ, ব্যাবিলন এবং আসিরিয়া, আধুনিক ইরাকের অঞ্চলে জন্মগ্রহণ করেছিল। শতাব্দীর পর শতাব্দী ধরে এখানে অনন্য নথিগুলি তৈরি এবং সংরক্ষিত হয়েছে, যা যুগান্তকারী ঘটনাগুলির, আইনি সিস্টেম এবং প্রাচীন সমাজের সামাজিক নিয়মের সাক্ষ্য দেয়। এই নিবন্ধে আমরা ইরাকের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ঐতিহাসিক নথিগুলি অনুসন্ধান করব, যা নিকট অঞ্চলের সভ্যতা এবং সাংস্কৃতিক গঠনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে।

শুমেরের লেখনী ট্যাবলেট

বিশ্বের সবচেয়ে পুরনো নথিগুলির মধ্যে একটি হল শুমেরের প্রাচীন অঞ্চলে পাওয়া লেখনী ট্যাবলেট। লেখনী প্রায় ৩২০০ খ্রিস্টপূর্বাব্দে উর শহরে আবিষ্কৃত হয়, যা বর্তমানে দক্ষিণ ইরাকের অঞ্চলে অবস্থিত। এই ট্যাবলেটগুলি প্রশাসনিক হিসাব, আইনগত রেকর্ড এবং এমনকি সাহিত্যিক কাজগুলির জন্য ব্যবহৃত হত। একটি উজ্জ্বল উদাহরণ হল "গিলগামেশের মহাকাব্য" - একটি মহাকাব্যিক কবিতা যা কিং উরুকের জীবনের কাহিনী বর্ণনা করে।

লেখনীটি চুক্তি, আইন এবং আইনি নথি তৈরির জন্যও ব্যবহৃত হত। উদাহরণস্বরূপ, নিপ্পুর শহরের ট্যাবলেটগুলি জমির ভাড়া এবং শ্রমের বাধ্যবাধকতার সাথে সম্পর্কিত অর্থনৈতিক রেকর্ড এবং চুক্তি ধারণ করে। এই নথিগুলি শুমেরীয় সমাজের সামাজিক-অর্থনৈতিক কাঠামোর একটি ধারণা দেয়, পাশাপাশি লেখনী এবং আইনের উন্নয়ন সম্পর্কে আলোচনা করে।

হাম্মুরাপির বিধি

হাম্মুরাপির বিধি, যা প্রায় ১৭৫৪ খ্রিস্টপূর্বাব্দে তৈরি হয়েছিল, মানব ইতিহাসের সবচেয়ে পরিচিত আইনগত নথি গুলির মধ্যে একটি হিসেবে বিবেচিত। এই বিধিটি ব্যাবিলনে প্রস্তুত করা হয়, যা আধুনিক ইরাকের অঞ্চলে অবস্থান করত এবং এটা সমাজের বিভিন্ন দিককে নিয়ন্ত্রণকারী আইনগুলির একটি সমাহার ছিল। এতে ২৮০ এর বেশি ধারা অন্তর্ভুক্ত ছিল, যা নাগরিক আইন, পারিবারিক সম্পর্ক, বাণিজ্য এবং অপরাধের আইন সম্পর্কিত।

হাম্মুরাপির বিধি তার শাস্তির ব্যবস্থার জন্য পরিচিত, যা "একটি চোখের জন্য একটি চোখ, একটি দাঁতের জন্য একটি দাঁত" নীতি ভিত্তিক। নথিটি পাথরের স্তম্ভে খোদাই করা হয় এবং শৃঙ্খলা এবং ন্যায় প্রতিষ্ঠার জন্য কঠোর নিয়ম প্রয়োগ করে। উদাহরণস্বরূপ, বিধিতে ক্ষতির ক্ষতিপূরণের, বিরোধের সমাধান এবং অপরাধের জন্য দায়িত্বের বিষয়ে ধারা অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। এই নথিটি প্রাচীন বিশ্ব এবং পরবর্তী সময়ের আইনি কাঠামোর উপর প্রচুর প্রভাব ফেলেছে।

আসিরিয়ান আর্কাইভের মাটির ট্যাবলেট

আসিরিয়ান সম্রাজ্য, যা প্রথম সহস্রাব্দে অঞ্চলে প্রাধান্য বিস্তার করেছিল, তা অনেক পরিমাণে লিখিত নথি রেখে গেছে। আসিরিয়রা প্রশাসনিক নথি, কূটনৈতিক যোগাযোগ, জ্যোতির্বিদ্যা পর্যবেক্ষণ এবং ভবিষ্যদ্বাণী লিখতে লেখনীর ব্যবহার করত। নিগিনভি এবং অ্যাশুরের মতো শহরের আর্কাইভে হাজার হাজার মাটির ট্যাবলেট পাওয়া গেছে, যা সম্রাজ্যের রাজনৈতিক এবং অর্থনৈতিক জীবন সম্পর্কে তথ্য ধারণ করে।

সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ আবিষ্কারের মধ্যে ছিল রাজা অ্যাশুরবানিপালের লাইব্রেরি, যা নিগিনভিতে আবিষ্কৃত হয়েছিল। এই লাইব্রেরিতে ধর্মীয়, বৈজ্ঞানিক এবং শিল্পগত বিষয়বস্তু সহ ট্যাবলেটগুলি খুঁজে পাওয়া যায়। বিশেষ করে জ্যোতির্বিদ্যা এবং চিকিৎসার বিষয়বস্তুগুলি গুরুত্বপূর্ণ, যা আসিরিয়াদের এই ক্ষেত্রগুলিতে উচ্চ স্তরের জ্ঞানের প্রতিফলন করে।

পারস্য যুগ: বেহিস্তুনের নমুনা

কিরা দ্য গ্রেট এবং দারিয়াস I এর নেতৃত্বে পার্সিদের আগমনের সাথে ইরাক বিশাল পারসিয়ান সম্রাজ্যের অংশ হয়ে ওঠে। এই সময়ের একটি গুরুত্বপূর্ণ নথি হল বেহিস্তুনের নমুনা, যা খ্রিস্টপূর্ব ষষ্ট শতকে তৈরি হয়েছিল। নমুনাটি বেহিস্তুনের পাহাড়ে খোদাই করা হয়েছিল (বর্তমানে ইরানের অঞ্চলে), তবে এতে প্রাচীন পার্সীয়, এলামাইট এবং অ্যাক্কাডিয়ান ভাষায় লেখা অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। এই নথিটি দারিয়াস I এর কর্মকাণ্ড এবং বিদ্রোহীদের বিরুদ্ধে তার বিজয়ের কথা বলে। বেহিস্তুনের নমুনা ঊনবিংশ শতাব্দীতে লেখনীর অস্পষ্টতা দূরীকরণে একটি মূল ভূমিকা পালন করে।

খলিফাত ও ইসলামিক হস্তলিপি

সপ্তম শতকে আরব খলিফাত স্থাপনের সাথে ইরাকের অঞ্চলে একটি নতুন যুগ শুরু হয়। বাগদাদ আব্বাসিদ খলিফাতের রাজধানী এবং ইসলামী বিশ্বের বৈজ্ঞানিক এবং সাংস্কৃতিক অর্জনের কেন্দ্রে পরিণত হয়। এই সময়ের মধ্য দিয়ে নানা অঞ্চল জ্ঞান, যেমন গণিত, জ্যোতির্বিজ্ঞান, চিকিৎসা এবং দর্শন নিয়ে অসংখ্য হস্তলিপি তৈরি হয়েছে।

ইসলামী নথির উজ্জ্বল উদাহরণের মধ্যে আল-কিনদি এবং আল-ফারাবির কাজগুলো উল্লেখযোগ্য, যারা বিজ্ঞানের উন্নয়নে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রেখেছেন। গুরুত্বপূর্ণ নথিগুলির মধ্যে ইসলামিক আইন — শারিয়াত সম্পর্কিত হস্তলিপিগুলি অন্তর্ভুক্ত রয়েছে, যা মুসলিম সমাজের জীবনকে নিয়ন্ত্রণ করে এবং তাদের নীতিগুলি আজও রক্ষা করে। উদাহরণস্বরূপ, অসংখ্য ফতোয়া (আইনি সিদ্ধান্ত) এবং ইসলামী আইনশাস্ত্রের উপর রচনাবলী বাগদাদের লাইব্রেরিতে তৈরি এবং সংরক্ষিত হয়েছে।

অসমানী যুগ এবং ইরাকের আধুনিকায়ন

১৬ শতকে ইরাক অসমানী সম্রাজ্যের অধীনে আসে, এবং দেশটি ২০ শতকের শুরুর দিকে তাদের নিয়ন্ত্রণে ছিল। এই সময়ে অসমানী তুর্কি ভাষায় সক্রিয় যোগাযোগ এবং আর্কাইভ কাগজপত্র তৈরি হয়েছিল। এই সময়ের নথিগুলির মধ্যে শাসন ব্যবস্থার তথ্য সহ খসড়া রেকর্ড (অর্থাৎ জমির মালিকানা রেজিস্ট্রি), করের প্রতিবেদন এবং প্রশাসনিক আদেশ অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। এই সূত্রগুলি ইরাকের অর্থনৈতিক ও সামাজিক জীবনের নিয়মকানুন প্রকাশের জন্য রাষ্ট্রের পরিচালনার ব্যবস্থা কেমন ছিল তা বুঝতে সহায়তা করে।

একটি গুরুত্বপূর্ণ আর্কাইভ নথি হল "সানজাক নামা" - প্রশাসনিক প্রতিবেদন ও মানচিত্র, যা ইরাকের বিভিন্ন অঞ্চলে জমি এবং কর কিভাবে বিতরণ হয় তার চিত্র তুলে ধরে। এই রেকর্ডগুলি গবেষকদের অর্থনৈতিক ইতিহাস পুনর্গঠন করতে এবং শতাব্দী ধরে সামাজিক পরিবর্তন অধ্যয়ন করতে সাহায্য করে।

সমাপ্তি

ইরাকের ঐতিহাসিক নথিগুলি হাজার হাজার বছর ধরে সভ্যতা এবং সাংস্কৃতির বিকাশের অনন্য সাক্ষ্য বহন করে। শুমের এবং আসিরিয়ার লেখনী ট্যাবলেট, হাম্মুরাপির বিধি, ইসলামী হস্তলিপি এবং অসমানী আর্কাইভ - এগুলি সবই অতীতের মূল্যবান জ্ঞানের একটি সংকলন। এই নথিগুলি আমাদের গভীরতর বুঝতে সাহায্য করে کہ কিভাবে সমাজগুলি বিকশিত হয়েছিল, তাদের আইন প্রণালী এবং সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যগুলি কেমন ছিল, এবং কিভাবে ইরাক মানব ইতিহাসে একটি মূল ভূমিকায় ছিল। এই সূত্রগুলি অধ্যয়ন করা শুধুমাত্র অতীতকে ভালোভাবে বুঝতে সহায়তা করে না, বরং ভবিষ্যতের প্রজন্মের জন্য সাংস্কৃতিক উত্তরাধিকার রক্ষা করতেও সাহায্য করে।

শেয়ার করতে:

Facebook Twitter LinkedIn WhatsApp Telegram Reddit Viber email

অন্য নিবন্ধগুলি:

প্যাট্রিয়নে আমাদের সমর্থন করুন