১৯৭৯ সালের ইসলামী বিপ্লব, যা ইরানি বিপ্লব হিসাবেও পরিচিত, ইরান এবং পুরো মধ্যপ্রাচ্যের ইতিহাসে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা হয়ে উঠেছিল। এটি শাহ মোহাম্মদ রেজা পেহলভির পতন এবং আয়াতুল্লাহ রুহুল্লাহ খোমেইনির নেতৃত্বে ইসলামী প্রজাতন্ত্রের প্রতিষ্ঠা ঘটে। বিপ্লব ইরান এবং সারা বিশ্বের জন্য উল্লেখযোগ্য রাজনৈতিক, সামাজিক এবং অর্থনৈতিক পরিণতি নিয়ে এসেছে।
৭০ এর দশকের কাছাকাছি, ইরান পেহলভি শাহের শাসনের অধীনে ছিল, যিনি পশ্চিমা আধুনিকীকরণের নীতি প্রণয়ন করেছিলেন, যা সমাজের বিভিন্ন স্তরের মধ্যে অসন্তোষ সৃষ্টি করেছিল। বিপ্লবের মূল কারণগুলো ছিল:
আয়াতুল্লাহ খোমেইনির নেতৃত্বে ইসলামিস্ট গোষ্ঠীগুলো শাহের শাসনের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ সংগঠিত করতে শুরু করে। তারা ধর্মীয় ধারণা এবং প্রতীক ব্যবহার করে জনসাধারণকে সংগঠিত করে, বলেছিল যে ইসলামের উপর ভিত্তি করে নতুন রাজনৈতিক ব্যবস্থার ভিত্তি স্থাপন করা উচিত।
বিপ্লব বিশাল প্রতিবাদের মাধ্যমে শুরু হয়, যা খুব দ্রুত সারা দেশে ছড়িয়ে পড়ে। কীগুলি মুহূর্তগুলো ছিল:
শাহের পতনের পর, ইরানি সমাজ একটি নতুন রাজনৈতিক ব্যবস্থার স্থাপনের চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হয়। এপ্রিল ১৯৭৯ এ ইসলামী প্রজাতন্ত্রের ঘোষণা করা হয়েছিল।
১৯৭৯ সালে গৃহীত নতুন সংবিধান ইসলামী প্রজাতন্ত্রকে এক ধর্মতান্ত্রিক রাষ্ট্র হিসাবে সংজ্ঞায়িত করেছে, যেখানে ধর্মীয় নেতাদের শক্তি খুব বেশি ছিল। আয়াতুল্লাহ খোমেইনি সর্বোচ্চ নেতা হন এবং রাজনৈতিক ক্ষেত্রে ব্যাপক ক্ষমতা লাভ করেন।
ইসলামী প্রজাতন্ত্র মৌলিক সামাজিক সংস্কারগুলো সম্পাদন করে, যার মধ্যে রয়েছে:
ইসলামী বিপ্লবের গতিবিধি ইরান এবং এর অন্যান্য দেশের সঙ্গে সম্পর্কের উপর উল্লেখযোগ্য প্রভাব ফেলেছে।
বিপ্লবের ফলে প্রাক্তন শাহের সমর্থকদের এবং অন্যান্য বিরোধী গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে উল্লেখযোগ্য দমন অভিযান চালানো হয়, যার মধ্যে বামপন্থী এবং কুর্দিসহ অন্যান্য গোষ্ঠীও রয়েছে। অনেককে গ্রেফতার, নির্যাতন করা হয় বা মৃত্যুদণ্ড দেয়া হয়।
ইসলামী বিপ্লব মধ্যপ্রাচ্যে শক্তির ভারসাম্য পরিবর্তন করেছে। ইরান শিয়া ইসলামির কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হয়েছে, অন্যান্য দেশ যেমন লেবানন এবং ইরাকে শিয়া আন্দোলনকে সমর্থন করার মাধ্যমে। এটি পার্শ্ববর্তী সুন্নি রাষ্ট্র, যেমন সৌদি আরবের মধ্যে উদ্বেগ সৃষ্টি করেছে।
১৯৮০ সালে ইরান-ইরাক যুদ্ধ শুরু হয়, যা ১৯৮৮ সাল পর্যন্ত চলে। এটি ২০ শতকের সবচেয়ে রক্তাক্ত সংঘর্ষগুলোর একটি ছিল, যার মধ্যে কোটি কোটি প্রাণহানি এবং ধ্বংস হয়।
যুদ্ধের প্রধান কারণগুলো ছিল ভূখণ্ডের বিরোধ এবং রাজনৈতিক ব্যবস্থার পার্থক্য, পাশাপাশি সাদ্দাম হুসেনের নেতৃত্বে ইরাকের আঞ্চলিক প্রভাব পুনরুদ্ধারের চাহিদা।
যুদ্ধের ফলে বিশাল মানবিক ক্ষতি এবং অর্থনৈতিক ধ্বংস ঘটে, তবে এটি ইসলামী প্রজাতন্ত্রের চারপাশে জাতীয় ঐক্য এবং সংহতি বৃদ্ধিতে সহায়তা করে।
১৯৭৯ সালের ইসলামী বিপ্লব ইরান এবং পুরো বিশ্বে গভীর প্রভাব ফেলে। এটি মধ্যপ্রাচ্যের রাজনৈতিক মানচিত্রকে পরিবর্তন করেছে এবং ইসলামের উপর ভিত্তি করে একটি নতুন ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করেছে। বিপ্লব আজও একটি গুরুত্বপূর্ণ অধ্যয়নের বিষয়, কারণ এর পরিণতি এখনও অনুভূত হয়।