সুমেরীয় ধর্ম মানব ইতিহাসের অন্যতম প্রাচীন এবং জটিল বিশ্বাস ব্যবস্থা। এটি পরবর্তী মধ্যপ্রাচ্যের সংস্কৃতিগুলির ধর্মীয় প্রথায় গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব ফেলেছে, যেমন ব্যাবিলন এবং অ্যাসিরিয়া। সুমেরীয় ধর্মে বহুদেবতাবাদের একটি ব্যবস্থা ছিল, যার মধ্যে দেবতাদের একটি প্যানথিয়ন ছিল, প্রত্যেকটি নির্দিষ্ট প্রাকৃতিক শক্তি এবং মানবজীবনের দিক নিয়ে দায়ী ছিল। সুমেরীয় পৌরাণিক কাহিনীগুলির মধ্যে পৃথিবীর উৎপত্তি, দেবতাদের মানুষের এবং প্রকৃতির ভাগ্য নিয়ে ভূমিকা এবং মৃত্যুর পরবর্তী জীবন নিয়ে প্রশ্ন উঠে আসে।
সুমেরীয়রা অনেকগুলি দেবতার অস্তিত্বে বিশ্বাস করতেন, প্রত্যেকটির নিজস্ব বৈশিষ্ট্য এবং প্রভাব ছিল। সুমেরীয় ধর্মে তিনটি প্রধান দেবতার কেন্দ্রিয় স্থান ছিল: আন, এনলিল এবং এনকি। প্রতিটি নগর-রাষ্ট্রের একটি প্রধান দেবতা-পৃষ্ঠপোষক ছিল এবং নগরের ধর্মীয় জীবন এই দেবতার জন্য উৎসর্গীকৃত মন্দিরে কেন্দ্রীভূত ছিল।
সুমেরীয়দের ধর্মীয় অনুশীলনগুলি মন্দিরগুলির মধ্যে কেন্দ্রীভূত ছিল, যার মধ্যে সবচেয়ে পরিচিত ছিল জিক্কুরাত, সুমেরীয় দেবতাদের উপাসনার স্থান হিসেবে কাজ করা মহামানব সহ সুউচ্চ স্থাপত্য। প্রতিটি নগরের একটি জিক্কুরাত ছিল, যা আকাশ এবং পৃথিবীর মধ্যে পবিত্র সংযোগের প্রতীক ছিল। এই মন্দিরগুলি নগরের অর্থনৈতিক এবং প্রশাসনিক কেন্দ্র হিসেবেও কাজ করত, কারণ পুরোহিতরা ধর্মীয় এবং অসাম্প্রদায়িক জীবনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতেন।
জিক্কুরাতগুলি বহুস্তরীয় পিরামিডাল নির্মাণ ছিল, যার চূড়ায় এক্সক্লুসিভ কক্ষ ছিল যেখানে নগরের প্রধান দেবতা বা দেবীর মূর্তি ছিল। জিক্কুরাতে দেবতাদের উদ্দেশ্যে বলিদান, রীতিনীতি এবং উত্সব অনুষ্ঠিত হতো। পুরোহিতরা দেবতাদের এবং মানুষের মধ্যে প্রধান মধ্যস্থতাকারী ছিলেন, তারা রীতিনীতি পরিচালনা করতেন, ভবিষ্যদ্বাণী করতেন এবং নগরকে দুর্ভোগ থেকে রক্ষা করতেন।
সুমেরীয় পৌরাণিক কাহিনীগুলি তাদের দর্শন এবং গভীর ধর্মীয় বিশ্বাসগুলিকে প্রতিফলিত করেছিল। সুমেরীয়রা বিশ্বাস করতেন যে বিশ্বটি দেবতাদের দ্বারা সৃষ্টি হয়েছে, এবং মানুষকে তাদের সেবার জন্য তৈরি করা হয়েছে। সুমেরীয় সংস্কৃতির সবচেয়ে পরিচিত পৌরাণিক কাহিনীর মধ্যে নিম্নলিখিতগুলি অন্তর্ভুক্ত করা যেতে পারে:
সুমেরীয় পৌরাণিক কাহিনীতে বিশ্ব সৃষ্টির কয়েকটি সংস্করণ ছিল, কিন্তু মূল ধারণাটি ছিল যে বিশ্বটি প্রাথমিক মহাসাগর থেকে উদ্ভূত হয়েছে। দেবী নিনহুরসাগ (কি) এনকির সাথে মিলিত হয়ে পৃথিবী এবং মানুষ সৃষ্টি করেন। মানুষকে মাটি থেকে তৈরি করা হয় এবং তারা দেবতাদের শ্বাসের মাধ্যমে জীবন প্রাপ্ত হয়। পৌরাণিক কাহিনীর মতে, মানুষকে দেবতাদের শ্রমকে সহজতর করতে কৃষি এবং নির্মাণের কাজ করতে তৈরি করা হয়েছিল।
সুমেরীয় সাহিত্যের অন্যতম সর্বাধিক পরিচিত কাজ হল গিলগামেশের মহাকাব্য। এই মহাকাব্যে উরুকের রাজা গিলগামেশের নায়কোচিত দুঃসাহসিকতার এবং তার অমরতার অনুসন্ধানের কাহিনী বলা হয়। গিলগামেশকে শুরুতে একজন অহঙ্কারী শাসক হিসেবে চিত্রিত করা হয়, যে দেবতাদের ইচ্ছাকে উপেক্ষা করে এবং তার জনগণকে দমন করে। তবে একটি বন্য মানুষের সাথে, যার নাম এনকিডু এবং যে তার বন্ধুর স্বরূপ গ্রহণ করে, গিলগামেশ জীবনের এবং বন্ধুত্বের মূল্য বুঝতে শুরু করে।
মহাকাব্যটি জীবন, মৃত্যু এবং অমরতার মতো গুরুত্বপূর্ণ দার্শনিক থিমগুলিও গবেষণা করে। গিলগামেশের যাত্রা মানুষের মৃত্যুর প্রকৃতি বুঝতে এবং দেবতাদের সাথে সমঞ্জস খুঁজে পাওয়ার চেষ্টা প্রতিফলিত করে।
সুমেরীয়দের একটি বন্যার পৌরাণিক কাহিনীও ছিল, যা ভিত্তিতে বাইবেলের নোয়া নৌকার কাহিনীর সাথে সাদৃশ্যপূর্ণ। এই পৌরাণিক কাহিনীতে দেবতারা মানুষের সৃষ্ট বিশেষ গর্জন দ্বারা বিরক্ত হয়ে পড়ে এবং তারা একটি মহাপ্লাবনের মাধ্যমে মানবজাতিকে ধ্বংস করার সিদ্ধান্ত নেয়। তবে দেবতা এনকি ন্যায়ের একজন মানুষ জিউসুদরাকে সতর্ক করেন যাতে তিনি একটি নৌকা তৈরি করে এবং তার পরিবার এবং পশুকে রক্ষা করেন। এই পৌরাণিক কাহিনী অনেক অন্যান্য সংস্কৃতির বন্যার পৌরাণিক কাহিনীর ভিত্তি হয়েছে, যেমন ব্যাবিলনীয় এবং ইহুদি।
সুমেরীয়রা মৃত্যুর পরের জীবনের অস্তিত্বে বিশ্বাস করতেন, কিন্তু তাদের ধারণা ছিল অন্ধকার। তাদের বিশ্বাস অনুযায়ী, মৃত্যুর পরে একজন ব্যক্তির আত্মা কুর নামে পরিচিত পাতাল জগতে চলে যায়। পাতাল রাজ্যটি অন্ধকার এবং বিষণ্ণ স্থান হিসেবে বর্ণিত হয়, যেখানে আত্মারা ধূলির দ্বারা পুষ্ট হয় এবং পূর্বের জীবন ফিরে পাওয়ার সুযোগ থাকে না।
তবে সুমেরীয়রা এটাও মনে করতেন যে মৃতের আত্মার মৃত্যুর পরের জীবনের ভাগ্য উপযুক্ত রীতিনীতি এবং বলিদানের মাধ্যমে প্রশমিত করা যেতে পারে। মৃতের স্বজনদের নিয়মিত বলিদান দিতে হতো যাতে মৃতের আত্মা পাতাল জগতের মধ্যে জীবিত থাকে।
সুমেরীয় ধর্ম এবং পৌরাণিক কাহিনী তাদের সমাজ এবং বিশাল ধারণার গঠনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে। দেবতা এবং পৌরাণিক কাহিনী সুমেরীয়দের দৈনন্দিন জীবনের অপরিহার্য অংশ ছিল, প্রকৃতি, ক্ষমতা এবং মৃত্যুর পরের জীবনের প্রতি তাদের দৃষ্টিভঙ্গি নির্ধারণ করেছিল। তাদের ধর্মীয় ধারণা এবং পৌরাণিক কাহিনী পূর্ব মধ্যপ্রাচ্য এবং বিশ্বে পরবর্তী সংস্কৃতিগুলির সংস্কৃতি এবং ধর্মে বিশাল প্রভাব ফেলেছিল।